পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

क्ञर्गबद्दछङा হৃদয় দ্রবীভূত করিতে লাগিলেন, আবার কেহ দুঃখের কথা বলিয়া সভাসদগণের চক্ষ জলে প্লাবিত করিতে লাগিলেন। কবিতার মোহিনী শক্তিতে যোদ্ধার হৃদয়ও গলিতে লাগিল, যোদ্ধার নয়নেও জল আসিল । _ পরে রাজা আদেশ দিলেন,-আর আমোদপ্রমোদে আবশ্যক নাই, এখনও আমাদিগের কাষ্য বাকী আছে, বন্দীকে লইয়া আইস। ... চারিজন সৈনিক পর্য শকুনিকে লইয়া আসিল। তখন সুরেন্দ্রনাথ সম্মুখীন হইয়া বজ্রনাদে নিবেদন করিলেন,—মহারাজ ! আমি মহাত্মা সমরসিংহের নিরাশ্রয়া বিধবা ও অনাথা কন্যার পক্ষ হইতে অভিযোগ করিতেছি, এই নরাধম রাজা সমরসিংহের নামে মিথ্যা অভিযোগ করিয়া তাঁহার প্রাণদন্ড করাইয়াছিল। আমি দেওয়ান সতীশচন্দ্রের অনাথা কন্যার পক্ষ হইতে অভিযোগ করিতেছি, এই নরাধম সতীশচন্দ্রকে হত্যা করাইয়াছে। শকুনির দোষের প্রমাণের অভাব ছিল না। শকুনি যে কাগজ জাল করিয়াছিলেন, তাহা রাজার হস্তেই ছিল। তাহা বার বার পাঠ করিয়া দেখিলেন; সেই পত্র সকল সমরসিংহের দ্বারা পাঠান সেনাপতিদিগকে লিখিত হইয়াছিল, এইরুপ অভিযোগে সমরসিংহের প্রাণদণ্ড হয়। কিন্তু সে সকল পত্রে শকুনির হস্তাক্ষর, আর সমরসিংহের মোহর; সেই মোহরের প্রতিকৃতি একটী শকুনির নিজ কক্ষে পাওয়া গিয়াছে। তাহার পর ছয় বৎসর কাল মহাশ্বেতা ষেরাপে ছিলেন, শকুনির শত শত চর যেরপে মহাশ্বেতাকে গ্রাম হইতে গ্রামান্তরে তাড়না করিয়াছিল, যেরপে মহাশ্বেতা কন্যার সহিত পরিশেষে চতুবেষ্টিত দাগের অভ্যস্তরে রুদ্ধ হয়েন, কোন বিষয়েই প্রমাণের অভাব ছিল না। আর সূতীশচন্দুের হত্যার কথা রাজা আপনিই জানিতেন। তখন রাজা টোডরমল্ল সিংহের মত গজন করিয়া বলিলেন,—পামর! তোর জীবন পাপরাশিতে পরিপণ হইয়াছে। এখনও জগদীশ্বরের নিকট প্রার্থনা করত, পরকালে ভাল হইতে পারে, ইহকালে তোর পাপের ক্ষমা নাই। শকুনি ধীরে ধীরে বলিল,—মহারাজ ! আপনি আমার শত্রদিগের কথা শুনিয়াছেন, আমার একটী নিবেদন আছে। রাজা বলিলেন,—শীঘ্র নিবেদন করা, তোর আর অধিক পরমায় নাই। শকুনি গম্ভীরস্বরে বলিতে লাগিল,-আমার দোষ যদি প্রমাণ হুইয়া থাকে, তথাপি আমি ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণ অবধ্য! আপনি হিন্দুধর্মের পরম ভক্ত, হিন্দুশাস্ত্রে বিশারদ, হিন্দুশাস্ত্রানুসারে ব্রাহ্মণ অবধ্য। শত সহস্ৰ দোষ করিলেও ব্রাহ্মণ অবধ্য! আমি নিরাশ্রয় বন্দী, যে দিকে নিরীক্ষণ করি সেই দিকেই আমার শত্র। সুতরাং আপনার আজ্ঞা বাধা দিবার কেহ নাই, আমাকে সহায়তা করিবার কেহ নাই। এক্ষণে আপনি আমাকে বধ করিতে ইচ্ছা করিলে বধ করিতে পারেন, কিন্তু তাহা হইলে শাস্ত্রের বিরদ্ধে কাৰ্য্য করিবেন! প্রায় চারিশত বৎসর হইতে মুসলমান বঙ্গদেশ শাসন করিতেছে, তাহারা অপকৃস্ট ধম্মাবলম্বী ও স্লেচ্ছ, তথাপি তাহাদের মধ্যেও, বোধ হয়, কেহ ব্রাহ্মণকে বধ করে নাই। আজি ঈশ্বরেচ্ছায় একজন হিন্দধম্মাবলম্বী পরম ধামিক রাজা বঙ্গদেশের শাসনকৰ্ত্ত হইয়াছেন, শাস্ত্রবিরদ্ধে কাৰ্য্য করা, ব্রাহ্মণ বধ করা কি তাঁহার শাসনের প্রথম কাৰ্য্য হইবে ? মহারাজ ! আজি আপনি যে পণ্যেকম করবেন, চিরকাল তাহার যশ থাকিবে, আজি আপনি ষে পাপকম করবেন, চিরকাল তাহার অপযশ থাকিবে। আমি নিরাশ্রয় বন্দী, আমাকে বধ করা মহেনত্তের কাষ", কিন্তু রাজা টোডরমল্লের শত্র নিকলঙ্ক যশোরাশির মধ্যে সে কম কলঙ্কের বরপ হইবে, রাজা টোডরমল্লের জীবনচরিত হইতে সে পরপনেয় কলঙ্ক শত শতাব্দীতেও বিলীন হইবে না। সমস্ত ভারতক্ষেত্রে সে কলঙ্ক রটিবে: আমাদের নিকট হইতে আমাদিগের পত্রেরা, তাহাদিগের পর আমাদিগের পৌত্রেরা, একথা স্মরণ করিয়া রাখিবে। সহস্ৰ বৎসর পরেও বালকগণ পরাবত্তে পাঠ করিবে যে, রাজা টোডরমল্ল বঙ্গদেশে আগমনের পর প্রথমেই এক ব্রাহ্মণকে হত্যা করিয়াছিলেন; সহস্ৰ বৎসর পরেও বন্ধেরা গল্প করিবে যে, মসলমানদিগের সময়েও যাহা হয় নাই, রাজা টোডরমল্লের শাসন-কালে ব্ৰহ্মহত্যা হইয়াছিল। মহারাজ ! আমাকে দণ্ড দিতে পারেন, কিন্তু দেশদেশাস্তরে, যুগযুগান্তরে আপনার এ কলঙ্ক আপনীত হইবে না, ব্ৰহ্মহত্যারাপ মহাপাপে আপনার বিস্তীর্ণ যশোরাশি মলিন হইয়া যাইবে। Գ Տ