পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাধবীকঙ্কণ করিতে বসিলেন। শৈবলিনী মাসে কি দুইমাসে একবার বীরনগরে আসিতেন। শৈবলিনী বড় গুলপ করিতে পারিতেন। শৈবলিনীর সন্তানাদি নাই, সকল শিশকেই আপনার বলিয়া মনে করিতেন। এই সমস্ত কারণে শৈবলিনী বালকবালিকাদিগের বড় প্রিয়পাত্র। শৈব আসিয়াছেন, গল্প করিতে বসিয়াছেন, শুনিয়া এই প্রকাণ্ড অট্টালিকার সমস্ত বালকবালিকা একত্র হইল, কেহই শৈবলিনীর অনাদরের পাত্র ছিল না। কাহাকেও ক্রোড়ে, কাহাকেও পাশ্বে", কাহাকেও সম্মুখে বসাইয়া শৈবলিনী মহাভারতের অমতমাখা গল্প করিতে লাগিলেন। আমরা এই অবসরে শৈবলিনীর বিষয় দুই একটী কথা বলিব। শৈবলিনীর পিতা সামান্য সঙ্গতিপন্ন ও অতিশয় ভদ্রলোক ছিলেন। শ্রীশচন্দ্র ও শৈবলিনী পিতার গণগ্রাম ও মাতার ধীরস্বভাব ও নম্রতা পাইয়াছিলেন, অতি অলপ বয়সে শৈবলিনী বিধবা হইয়াছিলেন, স্বামীর কথা মনে ছিল না, সংসারের সুখ দুঃখ প্রায় জানিতেন না। এ জন্মে চিরকুমারী বা চিরবিধবা হইয়া কেবল মাতার সেবা ও ছোট ভাইটীর যত্ন ভিন্ন আর কোন ধৰ্ম্ম জানিতেন না। ’ শৈবলিনীর পিতার মৃত্যুর পর তাহাদের অবস্থা ক্রমশঃ মন্দ হইতে লাগিল, এমন কি, অন্নের কট কাহাকে বলে অভাগিনী শৈবলিনী ও তাহার মাতা জানিতে পারিলেন। কিন্তু সেই শাস্ত নম্ন বিধবা একবারও ধৈৰ্য্যহীন হন নাই, অতি প্রত্যুষে উঠিয়া স্নান ও পজেদি সমাপন করিয়া কায়িক পরিশ্রমের দ্বারা বদ্ধমাতা ও শিশুর জন্য রন্ধনাদি করিতেন। প্রত্যুষে প্রফুল্ল পচেপর ন্যায় শৈবলিনী নিজ কায্য আরম্ভ করিতেন, শান্ত নিস্তন্ধ সন্ধ্যাকালে শাস্তচিত্তা বিধবা কাৰ্য্য সমাপন করিয়া মাতার সেবায় ও শিশু ভ্রাতার লালনপালনে রত হইতেন। সেই কৃষ্ণকেশমণ্ডিত, শ্যামবণ", বাক্যশন্য মুখখানি ও আয়ত শাস্তরশিম নয়ন দুইটী দেখিলে যথার্থ হৃদয় স্নেহে আপ্লতে হয়। যথার্থই বোধ হয় যেন সায়ংকালের শান্তি ও নিস্তব্ধতায় শৈবলে আবত মনুদিত প্রায় শৈবলিনী মুখখানি নত করিয়া রহিয়াছে। এ জগতে শৈবলিনী কিছরই আকাঙিক্ষণী নহে। বিধবা শৈবলিনী সহচর চাহে না, যে আমব্যক্ষ ও বংশবৃক্ষ শৈবলিনীর নম্ন কুটীর চারিদিকে সস্নেহে মণ্ডিত করিয়া মধ্যাহ্নে ছায়া বর্ষণ ও সায়ংকালে মদস্বেরে গান করিত, তাহারাই শৈবলিনীর সহচর। তাহারাও যেমন প্রকৃতির সন্তান, শৈবলিনীও সেইরপে প্রকৃতির সস্তান, জগদীশ্বর তাহাদেরও ভরণপোষণ করিতেন, অনাথিনী শৈবলিনীকেও ভরণপোষণ করিতেন। শৈবলিনী, শৈশবে বিধবা, কিন্তু প্রেমের আকাঙিক্ষণী নহে, কেননা সমগ্র জগৎ শৈবের প্রেমের জিনিষ । বক্ষে বসিয়া যে কপোতকপোতী গান করিত, তাহারাও শৈবের প্রেমের পাত্র, তাহাদের সঙ্গে শৈব একত্রে গান গাইত, তাহাদের প্রত্যহ তন্ডুল দিয়া পালন করিত। শৈব যখন বদ্ধ মাতাকে সেবা দ্বারা সস্তুস্ট করিতে পারিত, তখনই শৈবলিনীর হৃদয় প্রেমরসে আপ্লুত হইত, মাতাকে সখী দেখিলে শৈবের নয়ন আনন্দাশ্রতে পরিপণ হইত। যখন শিশু শ্রীশচন্দ্রকে ক্রোড়ে লইয়া চুম্ববন করিত, যখন শিশু আহমাদিত হইয়া “দিদি" বলিয়া শৈবকে চুম্বন করিত, তখন যথাথ’ই শৈবের হৃদয় নাচিয়া উঠিত, আশ্রতে বসন ভিজিয়া যাইত। আর যখন সায়ংকালে শাস্ত নিস্তব্ধ নদীর প্রশস্ত বক্ষে সবগের প্রতিবিম্ব দেখিয়া ভগবানের কথা মনে পড়িত, যিনি চন্দ্র, তারা ও নদী সন্টি , যিনি পক্ষীকে শাবক দিয়াছেন ও শৈবকে শ্রীশ দিয়াছেন, সেই ভগবানের কথা মনে পড়িত, তখনই শৈবলিনীর হৃদয় অনন্ত প্রেমে সিক্ত হইত। শৈবলিনীর স্বামী বা পত্র নাই, শৈবলিনীর প্রেমের একমাত্র ভাগী কেহ ছিল না, সতরাং বর্ষাকালের নদীস্রোতের ন্যায় শৈবের স্নেহবারি চারিদিকে বহিয়া যাইত। গ্রামের সমস্ত বালকবালিকাকে শৈব বড় ভালবাসিত, শৈব অনাথা দরিদ্রদিগের সমদঃেখিনী। পশুপক্ষীও শৈবের প্রেমের ভাগী, জগতে শৈবলিনীর ন্যায় প্রেমিক আর কে আছে ? জগৎ যেরপে ಥ್ರ' ಇಕ್, ತಾ * ಹಳ, ಜಗೌಗೆ ಆ ಕಿ ಇಸ್ಕಾ; . অনন্ত । এইরুপ কিছুকাল অতীত হইলে শৈবলিনীর মাতার কাল হইল। ধীরস্বভাব, রংপবান, ভদ্রবংশজাত শ্রীশচন্দ্রকেও নবকুমার আপন কন্যার সহিত বিবাহ দিবার ইচ্ছায় বীরনগরে লইয়া গেলেন। যাহাদের জন্য শৈবলিনী শ্বশরগাহ ত্যাগ করিয়াছিলেন, তাহারা না থাকায় শৈবলিনী পুনরায় শ্বশরোলয়ে গেলেন ও তথায় বাস করিতে লাগিলেন। ba