পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাধবীকঙ্কণ মনস্থির করিতে পারিত না, নরেন্দ্র পড়া লইতে আসিলে বালিকা ভাল করিয়া বসিতে পারিত ন, সমস্ত ভুলিয়া যাইত। সংসার-কায্যের তাবৎ ঘটনাই হেম শ্ৰীশচন্দ্রের নিকট বলিত, শ্ৰীশের উপদেশ ভিন্ন কোন কাৰ্য্য করিত না। নরেন্দ্র উপদেশদাতা নহেন, নরেন্দ্র আসিলে অন্য কথা হইত, অথবা অনেক সময়ে কথা হইত না । সুতরাং শ্রীশ মনে করিত যে বালিকার হৃদয়ে যেটুকু প্রণয় বা স্নেহ আছে তাহা শ্ৰীশকেই অবলম্ববন করিয়াছে। পঞ্চম পরিচ্ছেদ ঃ বিদায় DEATH, only Death can break the lasting chain. —Рope. এইরুপে কিছুকাল অতিবাহিত হইল। একদিন সায়ংকালে শ্রীশ ও নরেন্দ্র একখানি নৌকায় আরোহণ করিয়া গঙ্গায় বিচরণ করিতেছিল। নরেন্দ্র আপন বলপ্রকাশ অভিলাষে দাঁড়ীকে উঠাইয়া দিয়া দই হস্তে দুইটী দাঁড় ধারণ করিয়া নৌকা চালাইতেছে, শ্ৰীশ স্থিরভাবে বসিয়া প্রকৃতির সায়ংকালীন শোভা দশন করিতেছিল। শ্রীশ ও নরেন্দ্রের মধ্যে কখনই যথার্থ প্রণয় ছিল না, অদ্য অলপ কথা লইয়া তক হইতে লাগিল। নরেন্দ্রের হস্ত হইতে সহসা একটী দড়ি সখলিত হওয়াতে নরেন্দ্র পড়িয়া গেল, শ্রীশ উচ্চ হাস্য হাসিয়া বলিল,—যাহার কাজ তাহাকে দাও, বীরত্বে আবশ্যক নাই। সেই সময় তীরবত্তী অট্টালিকা হইতে হেমলতা দেখিতেছিল। হেমলতার সম্মুখে অপদস্থ হইয়া নরেন্দ্র মন্মান্তিক কস্ট পাইয়াছিল, তাহার উপর শ্রীশের রহস্য কথা সহ্য হইল না, অতিশয় কঠোর উক্তিতে প্রত্যুত্তর করিল। ক্রমে বিবাদ বাড়িতে লাগিল, নরেন্দ্র অতি শীঘ্র ক্রোধে প্রজবলিত হইয়া উঠিল এবং অতিশয় অন্যায় কটভাষায় শ্ৰীশকে তিরস্কার করিল। শ্রীশ এবার ক্ৰোধ সম্ববরণ করিতে পারিল না ; বলিল, তোমার মত অভদ্র লোকের সহিত কলহ করিলেও অপমান আছে ! এই অপমানসচেক কথায় নরেন্দ্রের ললাটের শিরা সফীত হইল, নয়ন প্রজবলিত হইল, সে শ্ৰীশকে প্রহার করিতে উঠিল। শ্রীশও উঠিয়া দাঁড়াইল, কুদ্ধ, জ্ঞানশন্য নরেন্দ্র সহসা শ্ৰীশকে উঠিল, একজন ঝাঁপ দিয়া জলে পড়িল, এবং শ্রীশকে প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় নৌকায় উঠাইল । সন্ধ্যার সময় নবকুমার নরেন্দ্রকে ডাকাইয়া যথেস্ট ভৎসনা করিয়া বলিলেন,—তুমি নাকি শ্ৰীশকে আজ গঙ্গার জলে ফেলিয়া দিয়াছিলে ? মাল্লারা না থাকিলে সে আজ ডুবিয়া মরিত ? নিবোধ জ্ঞানশন্যে নরেন্দ্র উত্তর করিল, সে আমার সহিত কলহ করিতে আসে কেন ? র। শ্রীশের সহিত কলহ করিতে তোমার লজা হয় না ? জান না তুমি কে আর শ্ৰীশ কে ? তুমি কি শ্ৰীশের সমান ? নরেন্দ্র ক্ৰোধকম্পিত্যবরে বলিল,—আমি স্ত্রীশের সমান নহি। আমি জমীদার বীরেন্দ্রসিংহের পত্র, শ্ৰীশ পথের কাঙ্গালী, পরের অন্নে পালিত, তাহার সমান আমি কিরাপে ? নবকুমার এরপে উত্তর কখন শানেন নাই, বিসিমত ও ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন,—কাহার সহিত কথা কহিতেছ, জান ? নরেন্দ্র। জানি, যে দরিদ্র সন্তান আমার পিতাকত্ত্বক পালিত হইয়া কালসপের ন্যায় তাঁহাকে দংশন করিয়াছে, এক্ষণে তাঁহার বিষয়টী লইয়াছে, সেই নবকুমার বাবরে সহিত কথা কহিতেছি । নবকুমার এক মহত্তের জন্য নিরত্তের হইলেন। কি বিষয় তাঁহার স্মরণ হইতেছিল, বলিতে পারি না। পরক্ষণই বলিলেন,—কৃতঘা বালক ! তোর পিতা নিজ দোষে জমণীদারী হারাইয়াছে, অনাথকে এতদিন পালন করিলাম তাহার এই ফল ! আজ শ্ৰীশকে ডুবাইয়াছিলি, কাল আমার গলায় ছুরি দিবি ! তুই অদ্যই আমার বাড়ী হইতে দর হ! নরেন্দ্র। চলিলাম! কিন্তু যদি ইহজন্মে কি পরজন্মে বিচার থাকে; নবকুমার! তুমি সায়ংকালে গঙ্গাতীরে হেমলতা একাকী বিচরণ করিতেছিল । যে যে ঘটনা হইয়াছিল, bfసి