পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী হেমলতা সমস্ত শুনিয়াছিল। হেমলতাকে দেখিয়া নরেন্দ্র একবার দাঁড়াইল। দেখিল, হেম চক্ষতে বস্ত্ৰ দিয়া ঝর ঝর করিয়া কাঁদিতেছে। 鹹 নরেন্দ্রের ক্রোধ গেল, সে হেমের নিকট আসিয়া তাহার হাত ধরিয়া বলিল,—হেম তুমি কাঁদিতেছ কেন ? কাতর সবরে হেম উত্তর করিল,—নরেন্দু ! নরেন্দ্ৰ ! আমার হাত ছাড়িয়া দাও। শ্রীশকে আমি দাদার ন্যায় মান্য করি, তাহাকে তুমি জলে ফেলিয়া দিয়াছিলে ? আমার পিতাকে তুমি কালসপ বলিয়া গালি দিলে ? আমাদের তুমি ঘৃণা কর ঐ নরেন্দ্র! আমার হাত ছাড়িয়া দাও । শ্ৰীশকে জলে ফেলিয়া দিয়াও ক্রুদ্ধ নরেন্দ্রের সংজ্ঞা হয় নাই, নবকুমারের তিরস্কারেও তাহার সংজ্ঞা হয় নাই। কিন্তু এখন হেমের চক্ষতে জল দেখিয়া ও বালিকার কয়েকটী কাতর কথা শুনিয়া নিবোধ যুবকের সংজ্ঞা হইল। ধীরে ধীরে হেমের চক্ষর জল মছাইয়া দিয়া, ধীরে ধীরে তাহার হাত ধরিয়া নরেন কাতর স্বরে বলিল,—হেম, ক্ষমা কর, আমি অপরাধ করিয়াছি। শ্রীশ শান্ত, ধীর ও নিন্দোষ, তাহাকে জলে ফেলিয়া দিয়া আমি নিবোধের ন্যায় কায্য করিয়াছি। তোমার পিতাকে গালি দিয়া আমি চণ্ডালের ন্যায় কায্য করিয়াছি। কিন্তু হেম, তুমি আমাকে ক্ষমা কর, তুমি ভিন্ন স্নেহপবেক কথা কহিবার জগতে আমার আর কেহ নাই। আজ আমি দেশত্যাগী হইতেছি, যাইবার প্বে তোমার দুইটী স্নেহের কথা শুনিতে ইচ্ছা । করি। হেম, আমাকে ক্ষমা কর । হেম ক্ষমা করিল, নরেন্দ্রকে গঙ্গাতীরে বসাইল, আপনি নিকটে বসিল, অশ্রজেল মলছিয়া কথাবাত্তা আরম্ভ করিল। নরেন কেন দেশত্যাগী হইতেছে ? পিতা রাগ করিয়া একটী কথা বলিয়াছেন বলিয়া নরেন কেন বীরনগর ত্যাগ করবে ? হেম নিজে পিতার নিকট অনুরোধ করিয়া পিতার ক্রোধ অপনোদন করিবে, নরেন তুমি বীরনগর ছাড়িয়া যাইও না। কিন্তু হেমলতার এ অননেয় ব্যথা হইল। উদ্ধত নরেন্দ্র হেমলতার আশ্রজেল দেখিয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিয়াছে, কিন্তু তাহার হৃদয়ে আজ ব্যথা লাগিয়াছে, তাহার শান্তি নাই। নরেন্দ্র বলিল,— হেমলতা, তোমার অনুরোধ ব্যথা, বস্তুতঃ বীরনগরে আমার স্থান নাই। কয়েক মাস অবধি, কয়েক বৎসর অবধি, আমি এই পৈতৃক ভবনে যে যাতনা ভোগ করিতেছি, তাহা তুমি বুঝিতে পারবে না, সে যাতনা তোমার স্নেহ, তোমার ভালবাসার জন্য সহ্য করিয়াছি। যে দেশে আমার প্রাতঃস্মরণীয় পিতা রাজা ছিলেন, সে দেশে পরপালিত, ঘণিত পদদলিত হইয়া বাস করিয়াছি, সে কেবল তোমারই স্নেহের জন্য ! হেম, তোমারই স্নেহের জন্য, তোমারই ভালবাসার জন্য, তোমারই আশায় এতদিন ছিলাম,-—সে আশাও সাঙ্গ হইয়াছে! আশা ছিল, তোমার পিতা আমার সহিত তোমার বিবাহ দিবেন। আমার কথায় রাগ করিও না, লজা করিও না, লজা বা রাগ করিবার এখন সময় নাই। তোমার পিতার মন বুঝিয়াছি, . বিনীত শ্রীশচন্দ্রকে তিনি স্নেহ করেন, আমি তাঁহার চক্ষের শলে। শ্রীশচন্দ্রকে তিনি কন্যাদান করিবেন, তাহা কি আমি চক্ষে দেখিব ? তাহা দেখিয়া এই গহে বাস করিব ? হেমলতা, হেমলতা, মনুষ্য সে আঘাত সহ্য করিতে পারে না। অথবা মনি-ঋষির সেরাপ সহিষ্ণতা আছে, হেমলতা, আমি ঋষি নহি । হেম, আমাকে বিদায় দাও, বীরনগরে আমার স্থান নাই। ক্ষণেক পরে নরেন্দ্র পুনরায় ধীরস্বরে কহিতে লাগিল,--হেমলতা কাঁদিও না, সমস্ত জীবন কাঁদিবার সময় আছে, একবার আমার কথা শন, আমি আজি জন্মের মত চলিলাম। কোথায় যাইতেছি, কি করিব, তাহা আমি জানি না। কিন্তু সে চিন্তা করি না, জগতে লক্ষ লক্ষ প্রাণী রহিয়াছে, আমারও থাকিবার স্থান হইবে। কিন্তু এই জনাকীর্ণ জগতে আমি আজ হইতে একাকী। নানা দেশে নানা স্থানে অনেক লোক দেখিব, তাহাদের মধ্যে আমি বন্ধশেন্যে, গহশন, একাকী। জীবনে নরেন্দ্রকে আপনার ভাবিবে এরপে লোক নাই, নরেন্দ্রের মৃত্যুকালে শোক করিবে এরপে লোক নাই। হেমলতার চক্ষজলে বস্ত্র ও শরীর সিক্ত হইতেছিল, এক্ষণে আর থাকিতে না পারিয়া উচ্চৈঃস্বরে ক্ৰন্দন করিয়া উঠিল। নরেন্দ্রের চক্ষ উক্তজবল কিন্তু জলশন্য, নরেন্দ্র আবার ধীরে ধীরে বলিতে লাগিল—হেম ক্ষণেক স্থির হও, কাঁদিও না, আমি এক্ষণে কাঁদিতে পারি না। - আমার মনে যে ভাব হইতেছে তাহা ক্ৰন্দনে ব্যক্ত হয় না। হেম, “তুমি আমাকে ভালবাস, জগতের মধ্যে কেবল তুমি এক একবার নরেন্দ্রের প্রতি সস্নেহ দটিতে দেখ, নরেন্দ্রের বিষয় సిO