পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o प्राथबौकस्कल সস্নেহচিত্তে ভাব। কিন্তু নরেন্দ্র তোমাকে কিরুপ গাঢ় প্রণয়ের সহিত ভালবাসে, অন্ধকার, সপ্লশন, জীবনাকাশের মধ্যে একটী প্রণয়-তারার প্রতি কিরপে সতৃষ্ণ নয়নে চাহিয়া থাকে, তাহা হেমলতা জানু না, বালিকার হৃদয় সে ভাব ধারণ করিতে পারে না। কিন্তু এ স্বপ্ন অদ্য সাঙ্গ হইল, জীবনের একমাত্র আলোক অদ্য নিৰ্বাণ হইল, আদ্য হইতে অন্ধকারে দেশে দেশে অরণ্যে অরণ্যে যাবজীবন পরিভ্রমণ কব্লিব। নরেন্দ্র ক্ষণেক নিস্তব্ধ হইয়া রহিল; পরে ধীরে ধীরে বলিল,—হেমলতা, আমার আর একটী কথা আছে। বাল্যকালে আমরা দুইজনে এই মাধবীলতাটী পতিয়াছিলাম, আমাদের ভালবাসার ন্যায় লতাটী বাড়িয়াছে, আজ আর ইহার থাকিবার আবশ্যক কি ? নরেন্দ্র সেই লতাটী উৎপাটন করিল ও তন্দ্বারা একটী কঙ্কণ প্রস্তুত করিল। ধীরে ধীরে হেমলতাকে তাহা পরাইয়া দিয়া বলিল,--হেম, ফলে যত শীঘ্ৰ শুকায়, লতা তত শীঘ্ৰ শলকায় না, বোধ হয় তুমিও আমাকে কিছুদিন স্মরণ রাখিবে। যদি রাখ, যতদিন নরেন্দ্রের জন্য তোমার স্নেহ থাকিবে, ততদিন এই মাধবী-কঙ্কণটী রাখিও, যখন অভাগাকে ভুলিয়া যাইবে, নদীজলে শনকলতা ফেলিয়া দিও! শোকবিহবলা দগ্ধহৃদয়া হেমলতা বিস্মিত হইয়া নরেন্দুের দিকে চাহিয়া দেখিল, নরেন্দ্র স্থির! নরেন্দ্রের সবর গম্ভীর ও অকশিপত, নরেন্দ্রের চক্ষতে জল নাই, কিন্তু অগ্নি জনলিতেছে! ধীরে ধীরে হেমের হাত ছাড়িয়া নরেন্দ্র চলিয়া গেল, সে অন্ধকার রজনীতে আর নরেন্দ্রকে দেখা গেল না । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ঃ সংসারে একাকিনী I HEAR thee, view thee, gaze o'er all thy charm, And round thy phantom glue my clasping arms. —Рope. সায়ংকালীন অন্ধকারাচ্ছন্ন গঙ্গাতীরে বসিয়া ত্রয়োদশবষীয়া বালিকা অসংখ্য উলিম রাশির দিকে কি জন্য চাহিয়া রহিয়াছে ? যতদর অন্ধকারে দেখা যায়, বীচিমালা উঠিতেছে, পড়িতেছে, তাহার পর একটী ঈষৎ ধসের রেখা, তাহার পর আর অন্ধকারে দেখা যায় না। দেখিতে দেখিতে হেমের চক্ষ জলে পরিপন্ণ হইল, তথাপি হেম কিছু দেখিতে পাইল না। রজনী গাঢ় হইয়া আসিল, ক্রমে আকাশে তারা ফুটিতে লাগিল, তথাপি হেমের দেখা শেষ হইল না। রজনীতে জমীদারের বাড়ীর সকলে নিদ্রিত হইল। হেমলতার পক্ষে সে রজনী কি ভীষণ । বালিকা ধীরে ধীরে শয্যা হইতে উঠিয়া গবাক্ষের নিকট আসিল, ধীরে ধীরে গবাক্ষ উদঘাটন করিয়া বাহিরে দেখিল। দেখিল, তারা-পরিপণ অন্ধকার আকাশের নীচে বিশাল গঙ্গা অনন্তস্রোতে ভাসিয়া যাইতেছে। সেই নৈশগঙ্গার দিকে দেখিতে দেখিতে কি হৃদয়বিদারক ভাব হেমলতার হৃদয়ে জাগরিত হইতে লাগিল ! বাল্যকালের ক্রীড়া, কিশোর বয়সের প্রথম ভালবাসা, কত কথা, কত কৌতুক, একে একে জাগরিত হইয়া বালিকাহাদয় দলিত করিতে লাগিল! এক একটী কথা মনে হয়, আর হৃদয়ে দুঃখ উথলিয়া উঠে, অবিরল আশ্রধোরায় চক্ষ ও বক্ষঃস্থল ভাসিয়া যায়! আবার বালিকা শান্ত হইয়া গঙ্গার দিকে দেখে, আবার একটী কথা সমরণ হয়, সে ক্রদনের শেষ নাই, সে ক্ৰন্দন অবারিত, অশান্তিপ্রদ। রজনী এক প্রহর, দ্বিপ্রহর হইল, তথাপি বালিকা গবাক্ষের নিকট দণ্ডায়মানা, অথবা ভূমিতে লাণ্ঠিত হইয়া নীরবে রোদন করিতেছে। শোকের প্রথম বেগের উপশম হইল, কিন্তু শোকচিন্তাপরম্পরা নিবারণ হইবার নহে। গণ্ডস্থলে হাত দিয়া একাকিনী গবাক্ষপাশ্বে বসিয়া হেমলতা ভাবিতে লাগিল। এক একবার হেমলতার নয়নে এক বিন্দ জল আসিতে লাগিল, ধীরে ধীরে সেটী গড়াইয়া পড়িল, আবার এক বিন্দ জল হইতে লাগিল। সে বিন্দ্যপরম্পরা শেষ হয় না। রজনী শেষ হইল, পৰবৰ্ণকাশে রক্তিমাচ্ছটা দেখা যাইতে লাগিল, মলিনা বালিকা তখনও গণ্ডে হস্ত দিয়া গবাক্ষপাশ্বে বসিয়া আছে। তখনও চিন্তা-সত্ৰ শেষ হয় নাই, জীবনে কি শেষ ఫిపి