পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাধবীকঙ্কণ নরেন্দুের দিকে অনেকক্ষণ চাহিতে চাহিতে রাজ্ঞী নরেন্দ্রের অঙ্গলীতে একটী অঙ্গরীয় দেখিতে পাইলেন। হতভাগিনী জেলেখা নরেন্দ্রের পীড়ার সময় একদিন লীলাক্রমে সে অঙ্গরীয়ট পরাইয়া দিয়াছিল, সেই অবধি তাহা নরেন্দুের হাতে ছিল । অঙ্গরীয় রাজ্ঞীর পরিচারিকাগণ চিনিল, রাজ্ঞী স্বয়ং চিনিলেন। তখন ক্রোধে রাজ্ঞীর সন্দের ললাট রক্তবর্ণ হইল, নয়ন হইতে অগ্নি বাঁহগত হইল! বিচার শেষ হইল। নিন্দয়হৃদয়া রাজ্ঞী আদেশ দিলেন-জেলেখা অপরাধিনী, পাপীয়সীকে শলে দাও ! কাফেরকে লইয়া যাও, হস্তিপদে দলিত করিয়া কাফেরকে হনন কর! একেবারে দীপাবলী নিৰ্বাণ হইল। নিঃশব্দে অন্ধকারে খোজাগণ রজে দ্বারা নরেন্দ্রকে বন্ধন করিতে লাগিল । অন্ধকারে কে নরেন্দ্রের মুখের নিকট একটী পাত্র ধারণ করিল। নরেন্দ্র বিস্ময় ও উদ্বেগে তৃষ্ণাত্ত হইয়াছিলেন, সেই পাত্র হইতে পানীয় পান করিলেন, অচিরাং অচেতন হইয়া পড়িলেন। তাহার পর কি হইল তিনি জানিলেন না, কেবল বোধ হইল যেন সেই অন্ধকারে কে আসিয়া তাঁহার হস্ত হইতে সেই অঙ্গরীয় উন্মোচন করিল, আর কে যেন অন্ধকারে করণস্বরে রোদন করিতেছিল। তিনি স্বপ্নে দেখিলেন যে, অভাগিনী জেলেখা ! নরেন্দ্রনাথ যখন জাগ্রত হইলেন তখন দেখিলেন সয্যে উদয় হইয়াছে, সয্যের রশিমতে তিনি একটী প্রশস্ত বাজারের মধ্যে একটী পর্ণকুটীরের ধারে শইয়া রহিয়াছেন। সয্যের নবজাত রশিম তাঁহার মাখে পতিত হইয়াছে, ও পথ, ঘাট, অট্টালিকা, দোকান, বাজার, বস্তী, আলোকময় করিয়াছে। এ কোন সহর ? এ কি বঙ্গদেশের রাজধানী রাজমহল ? সুলতান সজা কি অনুগ্রহ করিয়া তাঁহাকে বারাণসী হইতে এই স্থানে আনিয়াছেন ? গত নিশায় কি তিনি এই ভূমিশয্যায় শ্যইয়া প্রাসাদ ও পরীর স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন ? রয়োদশ পরিচ্ছেদ ঃ গজপতিসিংহ HAIL Majesty most excellent 2 While nobles strive to please ye, Will ye accept a compliment A simple poet gies ye 2 —Burns. নরেন্দ্রের বিসময়ের পরিসীমা রহিল না। সে স্থানটী তিনি পবে কখনও দেখেন নাই। সেই স্থান একটী প্রকান্ড সরাইয়ের মত বোধ হইল। মধ্যস্থানে একটী প্রশস্ত প্রাঙ্গণ, তাহার চারিপাশ্বে দ্বিতল হমম্যশ্রেণী, প্রত্যেক প্রকোঠে দুই একটী করিয়া লোক আছে। সে সমস্ত লোক অধিকাংশই সম্প্রান্ত পারস্য, উসবেক, পাঠান বা হিন্দ বাণিজ্য-ব্যবসায়ী লোক, প্রথম নগরে আসিয়া এই সরাইয়ে বাসা করিয়া আছে। সকল লোক সরাইয়ে আসিলে নিশায় দ্বার রুদ্ধ হইয়াছিল, এক্ষণে প্রাতঃকালে পুনরায় সরাইয়ের বহিস্কার উদঘাটিত হইল, লোকে গমনাগমন করিতে লাগিল । এক বদ্ধ পারস্যদেশীয় সেখ একটী প্রকোঠে বসিয়া তামাক খাইতেছিল। নরেন্দ্র যাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন,—সেখজী এটী কোন স্থান ? আমি এখানে নতন আসিয়াছি, কিছুই বঝিতে পারিতেছি না। সেখজী বলিলেন,—বৎস, আমিও বাণিজ্যকর্মে এই সহরে কল্য আসিয়াছি, সহরের বিশেষ কিছ জানি না। নরেন্দ্র। আপনি আমার অপেক্ষা অধিক জানেন। এই স্থানের কথা কিঞ্চিৎ আমাকে বলনে। সেখজী। আমি যথার্থই বলিতেছি এ সহরের কিছুই জানি না। তবে শুনিলাম এই স্থানটী বেগম সাহেবের সরাই, সম্রাটের জ্যেষ্ঠা কন্যা পাদশা বেগম সহরের নতন আগন্তুকের থাকিবার সুবিধার জন্য এই উৎকৃষ্ট সরাই নিম্মাণ করিয়া দিয়াছেন। আমি সমরকন্দ ও বোখারা দেখিয়াছি, সিরাজ ও ইসপাহান দেখিয়াছি, কিন্তু এমন.সন্দর সহর দেখি নাই । নরেন্দ্র। এ সহরের নাম কি ? পাদশা বেগমই বা কে ? >0 ○