পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भाशबौक७क५ রত্নরাজি-বিভূষিত কেশপাশে উজ্জল বদনমণ্ডল, কিঞ্চিৎ আবত রহিয়াছে; ঐ যে তাহার প্রজবলিত হইতে দই এক বিন্দ জল পড়িতেছে। স্বপ্ন পরিবত্তিত হইল। এ জেলেখা নহে, এ সেই তাতার বালক গীত গাইতেছে। যে ব্যথা প্রেম করিয়া প্রেমের প্রতিদান পায় নাই, দেওয়ানা হইয়া দেশে দেশে বেড়াইতেছে, তাহারই গান। গান শুনিতে শুনিতে নরেন্দ্রের নিদ্রা ভঙ্গ হইল, তিনি শিবির হইতে বাহিরে আসিলেন। জগৎ নিস্তব্ধ, দ্বিপ্রহর নিশার বায় রহিয়া রহিয়া বহিয়া যাইতেছে, চন্দ্রকিরণে নদী, পৰবত, শিবির ও মাঠ দাম্পট হইতেছে, আর সেই অভাগা দেওয়ানা তাতার বালক শিবিরদ্ধারে বসিয়া উচ্চৈঃস্বরে গান করিতেছে! সপ্তস্বরমিলিত সে গান বায়তে বাহিত হইয়া নৈশ গগনে উত্থিত হইতেছে ও চারিদিকে আকাশে বিস্তৃত হইতেছে ! নরেন্দ্র সাশ্রনয়নে বালকের হস্তধারণ করিয়া তাহার অশ্রািজল মছাইয়া দিয়া জিজ্ঞাস করিলেন,—তুমি কি যথার্থই প্রেমের জন্য দেওয়ানা হইয়াছ ? তোমার হৃদয়ে কি কোন গভীর দুঃখ আছে ? তাহা যদি হয় আমাকে বল, আমি তোমার দুঃখের সমদঃেখী হইব। মন খালিয়া আমার নিকট সমস্ত কথা বল। বালক এক দটিতে নরেন্দ্রের দিকে চাহিতে লাগিল, শরীর কাঁপিতে লাগিল। ক্ষণেক পর হৃদয়ের বেগ সবরণ করিয়া ধীরে ধীরে করণস্বরে বলিল,—মাজ’না করন, আমি দেওয়ানা, "যখন যাহা মনে আইসে তাহাই গান করি। নরেন্দ্র অনেক প্রবোধবাক্য প্রয়োগ করিয়া বার বার তাহার দঃখের কারণ ও এই অলপ বয়সে ফকিরী গ্রহণের কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। বালক তাহার উত্তর দিল না, কেবল বলিল,—আমি দেওয়ানা । নিশা অবসানে নরেন্দ্র রণসজা করিয়া আপন বন্ধ গজপতি সিংহের শিবিরে গেলেন। দেখিলেন তিনিও যোদ্ধার কায্য করিতেছেন, আপন তরবারি, চম’, বশ প্রভৃতি স্বয়ং শানাইতেছেন, অস্ত্রগুলি রৌপ্যের মত উক্তজবল হইয়াছে, তথাপি আরও উত্তজবল করিতেছেন। দেখিয়া নরেন্দ্র কিছু বিসিমত হইলেন ; পরে শয্যার দিকে চাহিয়া দেখিলেন গজপতি সমস্ত রাত্ৰি শয়ন করেন নাই, সমস্ত রাত্রিই এই কাযর্ণ করিয়াছেন। তাঁহার বদনমণ্ডল অতিশয় পাডুবণ, চক্ষদ্বয় ঈষৎ কালিমাবেটিত। কেন ? নরেন্দ্র গত কয়েক দিন অবধি গজপতির যে ভাবগতিক দেখিয়াছিলেন, তাহাতে কারণ কিছু কিছু বুঝিতে পারিলেন ! দেওয়ানা বালক হাত দেখা অবধি গজপতি স্থির নিশ্চয় করিয়াছিলেন উজয়িনীর যুদ্ধে তাঁহার নিধন হইবে। বোধ হয় গত নিশায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হইয়াছেন, শয়নের অবসর পান নাই। পাঠক, গজপতিকে ভীর মনে করিতেছ? রাজপতে সকলেই সাহসী, তথাপি তাহাদের মধ্যেও তেজসিংহের পত্র গজপতি অপেক্ষা সাহসী কেহ ছিল না। তথাপি কল্য নিশ্চয় মৃত্যু জানিলে সাহসীর ললাটও চিন্তারেখায় অঙিকত হয়। যোদ্ধা যৌবনমদে মত্ত থাকিয়া, জীবনের সুখে মগ্ন থাকিয়া, যুদ্ধের উৎসাহে প্রফুল্ল থাকিয়া, জয়ের আশায় আশ্বস্ত হইয়া, মৃত্যুর চিন্তা দর করে ; যুদ্ধ তাহাদের পক্ষে আমোদমাত্র, অনেক লোক মরিতেছে, তাহারাও একদিন মরিবে, তাহাতে ক্ষতি কি ? কিন্তু “কল্য মরিবে”, বজ্রধর্মনিতে যদি এই শব্দ সহসা হৃদয়ে আহত হয়, তাহা হইলে সে উৎসাহ ও সে প্রফুল্লতা হ্রাস পায়। গজপতি সে সময়ের সকল লোকের ন্যায় গণনবিদ্যায় দৃঢ় বিশ্বাস করিতেন, আদ্য যুদ্ধে তিনি মরিবেন তাহা তাঁহার স্থির বিশ্বাস ছিল, গত রজনীতে অনিদ্র হইয়া মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হইয়াছিলেন। অস্ত্র পরিকার করা কেবল কাল কাটাইবার একটী উপায়মাত্র । নরেন্দু আসিবামাত্র গজপতি উঠিয়া তাঁহার হস্তধারণ করিয়া ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন,—দেখ দেখি অস্ত্রগুলি পরিকার হইয়াছে কিনা। নরেন্দ্র। যথার্থই কি আপনি অদ্য যন্ধে লিপ্ত হইবেন ? দেওয়ানা ফকীরের কথা স্মরণ করন। গজপতি। সম্মখে রণ করিয়া রাজপতে কখনও পশ্চাতে চাহে না, পিতা তেজসিংহ আমাকে এই শিক্ষা দিয়াছেন। গজপতি আরও বলিলেন,—নরেন্দ্র, এক যুদ্ধে আমি মহারাজা যশোবন্তসিংহের উপকার করিয়াছিলাম, রাজা সভূট হইয়া আমাকে এই মক্তাহার প্রদান করেন। সেই অবধি সকল যুদ্ধেই আমি এই হার ললাটে পরিধান করিয়াছি। অদ্যকার যুদ্ধে তুমি নিস্তার পাইবে, এই SO సి