পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী .مئی জীবন দান করিয়াছেন তাহা দেখিলেন, যে চিতায় রাজপত রমণীগণ চিতারোহণ করিয়া কুলমান রক্ষা করিয়াছেন সে গহবর দেখিলেন । 疊 সহসা তাঁহাদের সম্মুখে একজন বদ্ধ মনুষ্য আসিয়া উপস্থিত হইলেন। রাজপতদিগের মধ্যে কেহ কেহ তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন, তিনি চিতোরের পুরাতন “চারণ"। চারণগণ পবেকালে রাজপুতানার রাজাদিগের গৌরবগীত গাইয়া রাজপুরুষ ও নগরবাসীদিগের মনোরঞ্জন করিতেন : রাজপুতানায় এখন পয্যন্ত সন্ধ্যার সময়ে লোকে সমবেত হইয়া চারণের গীত শুনিতে ভালবাসে, ও পবেগৌরবগান শুনিতে শুনিতে তাহাদিগের নয়ন বীরাশ্রতে আপ্লুত হয়। নরেন্দ্র ও তাঁহার সঙ্গী রাজপতগণ চারণকে একটী শিলার উপর বসাইলেন ও আপনারা চারিদিকে বসিয়া প্রতাপসিংহের গান শনিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। চারণ সেই গান আরম্ভ করিলেন। গীত “রাজপতগণ ! এটা আমার গীত নহে, অম্বর-গজন-প্রতিঘাতী পর্বতশৃঙ্গের গীত, বজ্রনাদী জলপ্রপাতের গীত, তোমরা শ্রবণ কর। যে পৰবতকন্দরে একজন রাজপতেসেনার অস্থি পড়িয়া রহিয়াছে, সেই গহবর হইতে এই গীত বহিগত হইতেছে । যে পৰ্বত-তরঙ্গবাহিনীর জল এক বিন্দ রাজপতের শোণিতেও আরক্ত হইয়াছে, সেই তটিনীর কলে এই গীত ধৰনিত হইতেছে। প্রতাপসিংহ ! এটী তোমার গীত । “ঐ দেখ আকবরের ভীষণপ্রতাপে সমগ্র ভারতবর্ষ কম্পিত হইতেছে, কিন্তু প্রতাপের হৃদয় কম্পিত হইল না। চিতোর নগর আর তাঁহার নাই, তাঁহার পিতার রাজত্বকালে নিষ্ঠর আকবর চিতোর কাড়িয়া লইয়াছে। দগেরক্ষার্থ জয়মল্ল জীবন দিয়াছিল, পত্তের মাতা ও বনিতা স্বহস্তে যুদ্ধ করিয়া জীবনদান করিয়াছিল, তথাপি রাজপতেব বক্ষঃস্থল বিদীণ করিয়া আকবর চিতোর কাড়িয়া লইলেন। প্রতাপ যখন রাজা হইলেন তখন চিতোর নাই, সৈন্য নাই, অর্থ নাই, কিন্তু তাঁহার বীরান্তঃকরণ ছিল, বীরের দুঃসাধ্য কি আছে ? প্রবলপ্রতাপান্বিত রাজপতরাজগণ দিল্লীর দাসত্ব স্বীকার করিলেন, প্রতাপ করিলেন না। অম্ববরের ভগবানদাস ও আড়ওয়ারের মল্লদেব নিজ নিজ দুহিতাকে দিল্লীর সম্রাটহস্তে অপণ করিলেন, মহানুভব প্রতাপ ম্মেলচ্ছের কুটশৈব হইতে অস্বীকার করিলেন। কেন স্বীকার করিবেন : মেওয়ারাধিপতিরা সৰ্য্যেবংশাবতংস, সে উন্নত বংশ কেন কলুষিত করিবেন ? “সাগরতরঙ্গের ন্যায় দিল্লীর সেনা মেওয়ার প্লাবিত করিল, তাহার সঙ্গে—হা জগদীশ ! এ লতজার অঙক কেন রাজস্থানের ললাটে অঙ্কিত করিল ?—তাহার সঙ্গে রাজপুতরাজগণ যোগ দিলেন। মাড়ওয়ার, অম্বর, বিকানীর, বন্দী প্রভৃতি নানাদেশের রাজারা আপনাদিগের দাসত্বের কলঙক অপনীত করিবার জন্য, প্রতাপকেও দিল্লীর দাস করিবার জন্য, আকবরের সহিত যোগ দিলেন। অম্বরের মানসিংহ প্রতাপের সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিলেন, মহানুভব প্রতাপ মেলচ্ছের কুটুম্বের সহিত ভোজন করিতে অস্বীকার করিলেন। সরোষে মানসিংহ দিল্লী যাইয়া অসংখ্য সেনাতরঙ্গে মেওয়ার দেশ প্লাবিত করিলেন। মানসিংহ ! তুমি কাবুল হইতে বঙ্গদেশ পৰ্য্যন্ত সমস্ত ভারতবর্ষে বিজয়পতাকা উড্ডীন করিয়া শত্রুদমন করিয়াছিলে,---কাহার জন্য । হায়! মেলচ্ছের অধীন হইয়া রাজপত নাম ডুবাইলে ? মেলচ্ছের পদরজঃ রাজপতের ললাটে কি সন্দের শোভা পাইতেছে! “অন্ধকারে ঐ জলপ্রপাতের ভীষণ তেজ দেখিতে পাইতেছ? না, তোমরা পাইবে না, কিন্তু আমি অন্ধকারে থাকি, আমি দেখিতেছি। উহার মধ্যস্থলে উন্নত শিলাখণ্ড সগবে দন্ডায়মান রহিয়াছে, জলপ্রপাতেও কম্পিত হইতেছে না। জলপ্রপাত অপেক্ষা অধিক তেজে সাগরগন্জনে মোগলসৈন্য আসিয়া মেওয়ার দেশ প্লাবিত করিল, শিলাখন্ডের ন্যায় সগবে প্রতাপ দপডায়মান রহিলেন। হলদীঘাটে মহাযুদ্ধ হইল, সেনাদিগের রব পৰবতকন্দর হইতে প্রতিধৰনিত হইতে লাগিল, আকাশে উত্থিত হইয়া মেঘ হইতে প্রতিধৰনিত হইতে লাগিল। কিন্ত সাহসে কি হইবে ? মোগলের অসংখ্য সেনা! দ্বাবিংশসহস্র রাজপতের মধ্যে কেবল অট সহস্ৰ লইয়া প্রতাপ পলায়ন করিলেন, অবশিস্ট হল দীঘাটের ভীষণ উপত্যকায় চিরনিদ্রায় নিদ্রিত রহিলেন। ১১৪