পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भाथबौकष्कण হইতেছে, আবার কোথাও বা চারিদিকে পব্বত থাকায় সন্দর স্বচ্ছ হ্রদের ন্যায় দন্ট হইতেছে। তাহার জল পরিস্কার ও নিম্পকম্প, তাহার উপর চারিদিকে পৰ্বতশেখরের ছায়া যেন নিদ্রিত রহিয়াছে। কখন বা সেনাগণ নিশাকালে পর্বতপথ উল্লঙ্ঘন করিয়া যাইতে লাগিল। সে নৈশ পব্বতের শোভা কাহার সাধ্য বর্ণনা করে। দুইদিকে পর্বতচড়া চন্দ্ৰকরে সমতজবল, কিন্তু দ্বিপ্রহর রজনীতে নিস্তব্ধ ও শাস্ত, যেন যোগিপর্ষ পাথিবি সকল প্রবত্তি দমন করিয়া পরিকার আকাশে ললাট উন্নত করিয়া ধ্যানে বসিয়াছেন। সেই শান্ত রজনীতে উভয় দিকের পর্বতের সেইরাপ শোভা দেখিতে দেখিতে মধ্যস্থ পথ দিয়া সৈন্যগণ যাইতে লাগিল। s পব্বতের সহস্র উপত্যকা ও কন্দরে অসভ্য আদিবাসী ভীলগণ বাস করিতেছে। ভারতবষের অন্যান্য স্থানেও যেরপে, রাজপুতানায়ও সেইরাপ, আৰ্য্যবংশীয়েরা অসিহস্তে আসিয়া কৃষিকাষোপযোগী সমস্ত দেশ কাড়িয়া লইয়াছে, আদিমবাসীরা পর্বতগহায় বাস করিতেছে। তাহারা রাজপুতানার রাজাদিগের অধীনতা স্বীকার করে না, তথাপি মোগলদিগের সহিত যন্ধের সময় অনেকে ধনবোণহস্তে পর্বতে আরোহণ করিয়া রাজপতদিগের অনেক সহায়তা করিয়াছে। পব্বত অতিক্রম করিয়া যশোবন্ত অচিরাৎ আপন মাড়ওয়ার দেশে আসিয়া পড়িলেন। মেওয়ার ও মাড়ওয়ার দুই দেশ দেখিলেই বোধ হয় যেন প্রকৃতি লীলাক্রমে দুই দেশের বিভিন্নতা সাধন করিয়াছেন। মেওয়ারে যেরপে পাবতিরাশি ও বিশাল বাক্ষাদি ও লতাপত্রের গৌরব, মাড়ওয়ারে তাহার বিপরীত। পব্বত নাই, অশ্বথ, বট প্রভৃতি বহৎ বহৎ ব্যক্ষ নাই, উদ্বারা ক্ষেত্র নাই, বেগবতী তরঙ্গিণী নাই, পৰ্বতবেটিত হ্রদ নাই, কেবল মরুভূমিতে বালকোরাশি ধন ধন করিতেছে, ও স্থানে স্থানে অতি ক্ষুদ্রকায় কণ্টকময় বাবল ও অন্যান্য ব্যক্ষ দেখা যাইতেছে। এই মরভূমির উপর দিয়া সেনাগণ যাইবার সময় মেওয়ারদেশীয় সেনাগণ মাড়ওয়ারী সেনাদিগকে বিদ্রপ করিয়া বলিল,— আক রা ঝোপ, ফোক রা বার, বাজরা রা রোটী, মোঠ রা দার, দেখো হো রাজা তোঁর মাড়ওয়ার। মাড়ওয়ারীগণ সগবে উত্তর করিল,—আমাদের জন্মভূমি উর্বরা নহে, কিন্তু বীর-প্রসবিনী বটে! প্রকৃত মাওড়য়ারের রাজপতেরা কঠোর জাতি, রাজপতোনায় তাহাদের অপেক্ষা সাহসী জাতি আর ছিল না। সৈন্যগণ এইরপে কয়েকদিন ভ্রমণ করিতে করিতে রাজধানী যোধপুরের সম্মুখে পেশছিল ও শিবির সন্নিবেশিত করিল। তখন নরেন্দ্র স্বীয় বন্ধ গজপতির কথা স্মরণ করিয়া একবার রাজার সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইলেন। রাজা যশোবন্তসিংহ শিবিরে একাকী বিষন্নবদনে বসিয়া আছেন, নরেন্দ্র তাঁহার নিকট যাইয়া পৌছিলেন । রাজার আদেশ পাইয়া নরেন্দ্র কহিলেন,—মহারাজ ! সিপ্রাতীরে আপনার একজন অনচের হত হইয়াছেন। পর্বে একবার মহারাজ তাঁহার প্রতি প্রসন্ন হইয়া এই মুক্তামালা তাঁহাকে প্রদান করিয়াছিলেন, তিনিও আপনার দানের অপমান করেন নাই, সম্মুখযুদ্ধে হত হইয়াছেন। মৃত্যুর পাবে গজপতিসিংহ এ মুক্তামালা আপনার হস্তে প্রত্যাপণ করিতে আমাকে আদেশ দিয়া গিয়াছেন। রাজা সেই মক্তামালা ক্ষণেক নিরীক্ষণ করিয়া দীঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া বলিলেনহা ! গজপতি, মাড়ওয়ারে তোমা অপেক্ষা সাহসী যোদ্ধা কেহ ছিল না। তোমার পিতা তেজসিংহকে আমি জানিতাম, সযর্গমহল দাগে তাঁহার আতিথ্য গ্রহণ করিয়াছিলাম। গজপতি ! তুমি আমারই অনুরোধে মাড়ওয়ারে আসিয়াছিলে, বার বার যুদ্ধে পৈতৃক বিক্রম দেখাইয়াছ। একবার যুদ্ধে আমার জীবন রক্ষা করিয়াছিলে, সেই জন্য তোমাকে মুক্তামালা দিয়াছিলাম, এবার আপনার জীবন আমার জন্য বিসর্জন দিয়া সেই মালা ফিরাইয়া দিলে! বৎস, নদীর জল একবার যাইলে আর ফিরিয়া আইসে না, রাজা একবার দান করিলে আর ফিরাইয়া লন না। তোলার বন্ধর মুক্তামালা তুমি ললাটে ধারণ করিও, এবং যন্ধের সময়ে তাহার বীরত্ব যেন তোমার সমরণ থাকে। ՏՏ Գ