পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী নরেন্দ্র রাজাকে শত ধন্যবাদ দিয়া সেই মালা শিরে ধারণ করিয়া কহিলেন,—মহারাজ, আমার একটী আবেদন আছে। গজপতির দুইটী শিশু সস্তান আছে, তাহাদের মাতা নাই। গজপতি মহারাজকে বলিয়াছেন, যেন অনুগ্রহ করিয়া তাহাদের প্রতি কৃপাদটি করেন, যেন কালে শিশ রঘুনাথও রাজাজ্ঞায় পিতার ন্যায় সংগ্রামে জীবন দিতে সক্ষম হয়। ইহা অপেক্ষা অধিক মঙ্গলকামনা তাহার পিতাও জানে না। এই কর্ণবাক্য শুনিয়া রাজার নয়নে জল আসিল। তিনি বলিলেন,—বৎস, ক্ষাস্ত হও, আমি সে শিশুদের পিতাস্বরপে হইব, যোধপুরের রাজ্ঞী স্বয়ং তাহাদের মাতা হইবেন। এখনও রাজ্ঞীকে আমাদের আগমন-সংবাদ দেওয়া হয় নাই, আমাদের দতে যাইতেছে। যাও তুমি স্বয়ং দীতের সঙ্গে যাইয়া রাজ্ঞীর নিকট গজপতির আবেদন জানাও, এবং তাহার শিশুদের জন্য দটী কথা বলিও । রাজার আজ্ঞানসারে নরেন্দ্র কয়েকজন রাজপত দতের সহিত যোধপুরের দাগে গমন করিলেন। যোধপর দগে যাহারা একবার দেখিয়াছেন তাঁহারা কখনও বিস্মরণ হইতে পারিবেন না। চতুন্দিকে কেবল বালকোরাশি ও মরুভূমি, তাহার মধ্যে একটী উন্নত পৰ্বত, সেই পব্বতের শেখরের উপর যোধপরে দগে যেন যোদ্ধার কিরীটের ন্যায় শোভা পাইতেছে! পব্বততলে নগর বিস্তত রহিয়াছে, এবং নগরের ভিতর দুইটী সন্দর হ্রদ, পাব দিকে রাণীতলাও, দক্ষিণ দিকে গোলাপ সাগর। নগরবাসিনী শত শত কামিনী হ্রদ হইতে জল লইতে আসিতেছে, হ্রদের পাশ্বাস্থ সন্দের উদ্যানে শত শত দাড়িম্বব্যক্ষ ফল ধারণ করিয়াছে, ও নাগরিকগণ স্বচ্ছন্দচিত্তে সেই উদ্যানে বিচরণ করিতেছে । নগর নীচে রাখিয়া একদন্ড ধরিয়া পব্বত আরোহণ করিয়া নরেন্দ্র প্রাসাদে প‘হছিলেন । রাজ্ঞীর আদেশে দতগণ ও নরেন্দ্র প্রাসাদে প্রবেশ করিলেন । শ্বেত প্রস্তরনিমিত রাজসিংহাসনে মহারাজ্ঞী বসিয়া আছেন, চারিদিকে সহচরী বেস্টন করিয়া রহিয়াছে ও চামর ঢলাইতেছে। রাজ্ঞীর বদনমন্ডল অবগঠেনে কিঞ্চিৎ আবত হইয়াছে, তথাপি সে নয়নের অগ্নিবৎ উক্তজবলতা সম্যক লক্কোয়িত হয় নাই। গরীয়সী বামা যথার্থই রাজমহিষীর ন্যায় সিংহাসনে বসিয়া আছেন, নিবিড় কৃষ্ণকেশে উত্তজবল রত্নরাজি ধকধক করিতেছে। দত প্রণত হইয়া ধীরে ধীরে সভয়ে সকল সংবাদ জানাইলেন। মহারাজ্ঞী ক্ষণেক নিস্তন্ধ ও নিপন্দ হইয়া রহিলেন, বজ্রপাত ও ঝটিকার পাবে আকাশমণ্ডল যেরপে নিম্পন্দ থাকে, সেইরাপ নিসপন্দ হইয়া রহিলেন। সহসা অবগন্ঠেন ত্যাগ করিয়া আরক্ত নয়নে দতের দিকে দটিপাত করিয়া বলিলেন,—কাপুরুষ ! সেই সিপ্রানদীতে আপনার অকিঞ্চিৎকর শোণিত বিসঙ্গজনি করিতে পার নাই ? আমার সম্মুখ হইতে দরি হও, আর তোমার প্রভু সেই কাপর্ষকে বলিও তিনি যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পলায়ন করিয়া কলঞ্চকরাশিতে কলঙ্কিত হইয়াছেন, তিনি আমার এ পবিত্র দগে প্রবেশ করিতে পাইবেন না। এই কথা বলিতে বলিতে রাজ্ঞী মচ্ছিতা হইয়া পড়িলেন। রাজ্ঞীর সহচরীগণ অনেক যত্নে রাজ্ঞীর চৈতন্য সাধন করিল। তখন রাজ্ঞী ক্রোধে প্রায় জ্ঞানশন্যা হইয়া কহিতে লাগিলেন,—কি বলিলি ? তিনি যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পলায়ন করিয়াছেন ? যিনি পলায়ন করিয়াছেন, তিনি ক্ষত্রিয় নহেন, আমার স্বামী নহেন, এ নয়ন যশোবন্তসিংহকে আর দেখিবে না! আমি মেওয়ারের রাণার দহিতা, প্রতাপসিংহের কুলে যিনি বিবাহ করেন তিনি ভীর কাপুরুষ কেন হইবেন ? যুদ্ধে জয় করিতে পারিলেন না, কেন সম্মখেরণে হত হইলেন না ? দতগণ ! এক্ষণও দণ্ডায়মান আছ ? আমার যোদ্ধাগণ কোথায়? দতগণকে পব্বতের উপর হইতে নীচে নিক্ষেপ কর, দাগের দ্বার রন্ধ কর! রাজ্ঞীর সমস্ত শরীর কম্পিত হইতেছিল, ক্রোধে কণ্ঠ রন্ধ হইল, মখমণ্ডল রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল । তখন নরেন্দ্র অগ্রসর হইয়া ধীরে ধীরে অতিশয় গম্ভীরস্বরে উত্তর করিলেন,— মহারাজ্ঞি ! আমাদের মৃত্যুর আদেশ দিয়াছেন, আমরা মৃত্যু ভয় করি না, কিন্তু মহারাজা যশোবন্তসিংহকে কাপরেষে বলিবেন না। এই নয়নে তাঁহাকে যুদ্ধ করিতে দেখিয়াছি, যতদিন থাকিব সেরাপ ভয়ঙ্কর যুদ্ধ কখনও দেখিব না, সেরুপ অদ্বিতীয় বীর কখনও খব না। >> bf