পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাধবীকঙ্কণ রাজ্ঞী ক্ষণেক স্থিরনয়নে নরেন্দ্রের দিকে চাহিয়া রহিলেন, পরে ধীরে ধীরে বলিলেন,— যথুথিাই কি যশোবস্তসিংহ সম্মুখযুদ্ধ করিয়াছিলেন ? তুমি বিদেশীয়, তোমার জীবনের কোন ভয় নাই, যথাথ" কথা বিস্তার করিয়া বল। নরেন্দ্র যুদ্ধের বিষয় সবিশেষ বর্ণনা করিলেন। রাজপত-সৈন্যের যেরপে সাহস দেখিয়াছিলেন, মহারাজের যেরপে সাহস দেখিয়াছিলেন, তাহা বলিলেন। শেষে বলিলেন,—যখন মেঘরাশির ন্যায় চারিদিকে মোগলসেনা আসিয়া বেটন করিল, যখন ধম ও ধলায় ক্ষেত্র অন্ধকার হইয়া যাইল, যখন ভীর কাসেমখাঁ পলায়ন করিল, তখনও মহারাজ রাজপতের উচিত সাহস অবলম্বনু করিয়া যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। চারিদিকে রাজপত শোণিতে পর্বত, উপত্যক ও সিপ্রানদী আরক্ত হইয়াছে, রাজার চতুদিকে অল্পসংখ্যকমাত্র রাজপত আছে, আরংজীব ও মোরাদ সহস্ৰ মোগল-সৈন্য সহিত রাজার উপর আক্রমণ করিতেছেন, তখনও মহারাজা যশোবন্ত সাহস অবলম্ববন করিয়া যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। রাজার পদতলে শত শত রাজপত হত হইতে লাগিল, রাজপতে-সংখ্যা ক্ষীণ হইতে লাগিল, মোগলের জয় জয়নাদে মেদিনী ও আকাশ কম্পিত হইতে লাগিল, কিন্তু মহারাজের হৃদয় কম্পিত হইল না। অস্ট সহস্র রাজপতের মধ্যে অস্ট শতও জীবিত ছিল না, তথাপি মহারাজ ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিলেন না। ঘোর কল্লোলিনী সিপ্রানদী ও ভীষণ বিন্ধ্যপব্বত রাজা যশোবস্তের বীরত্বের সাক্ষী আছে ! শনিতে শুনিতে রাজ্ঞীর নয়নদ্বয় জলে ছলছল করিতে লাগিল। বলিলেন,—ভগবন ! তোমাকে নমস্কার করি, আমার যশোবন্ত রাজপতের নাম রাখিয়াছেন : বিদেশীয় দত, এ কথায় আমার হৃদয় শীতল হইল। বল তাহার পর কি হইল ? নরেন্দ্র । মনতুষ্যের যাহা সাধ্য, রাজপতের যাহা সাধা, যশোবন্ত তাহা করিয়াছেন। যখন কেবলমাত্র পঞ্চশত সৈন্য জীবিত অাছে দেখিলেন, তখন রাজা যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করিলেন। রাজ্ঞী। পলায়ন করিলেন ! হা বিধাতঃ ! রাণার জামাতা পলায়ন করিলেন –বক্ষস্থলে তৎক্ষণাৎ দাসীগণ রাজ্ঞীর মুখে জলসিঞ্চন করিতে লাগিল। রাজ্ঞীও অপেক্ষণ মধ্যেই চেতনাপ্রাপ্ত হইয়া এবার করণস্বরে বলিলেন,—সহচরি! চিতা প্রস্তুত কর, আমার স্বামী যুদ্ধক্ষেত্রে হত হইয়াছেন, তিনি সবগ ধামে আমার জন্য অপেক্ষা করিতেছেন, আমি তথায় যাই। যশোবস্তের নামে যে আসিয়াছে সে প্রবঞ্চক। আর তুই দতে, তোর সঙ্গিগণের সহিত এইক্ষণেই মাড়ওয়ার দেশ হইতে নিম্প্রক্ষান্ত হ, নচেৎ প্রাণদন্ড হইবে । নরেন্দ্র ও দতগণ দাগ হইতে নিৰ্ম্মান্ত হইলেন, রাজ্ঞীর আজ্ঞায় দগের দ্বার রুদ্ধ হইল। বাহিরে যাইবার সময় যোধপুরের রাজমন্ত্রী দতের হস্তে একখানি পত্ৰ দিয়া বলিলেন,—মহারাজের সহিত তোমাদের দেখা করিবার আবশ্যকতা নাই, এই পত্র লইয়া শীঘ্ৰ মেওয়ার দেশের রাজধানী উদয়পরে যাও। তথায় রাণা রাজসিংহকে এই পত্র দিও, তিনি তোমাদিগকে আশ্রয় দিবেন, আমাদের মহারাজ্ঞীর আজ্ঞা অলঙ্ঘনীয়, মাড়ওয়ারে আর থাকিতে পাইবে না। মহারাজ্ঞীর মাতা তথায় আছেন, এই পত্র প্রাপ্তিমাত্র তিনি যোধপুরে আসিবেন, তিনি ভিন্ন তাঁহার কন্যাকে আর কেহ সাস্তুনা করিতে পরিবেন না। ইতিহাসে লিখিত আছে যে যোধপুরের রাজ্ঞী আট নয় দিবস অবধি উন্মত্তপ্রায় হইয়া বহিলেন। পরে উদয়পরে হইতে তাঁহার মাতা আসিয়া তাঁহাকে সান্থনা করিলেন, তখন তিনি যশোবস্তের সহিত সাক্ষাৎ করিতে সম্মত হইলেন। পুনরায় সৈন্য সংগ্ৰহ করিয়া যশোবন্তসিংহ আরংজীবের সহিত অচিরাং যুদ্ধ করিতে যাইবেন, স্থির হইল। ఏ సిసి