পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

श्राथबौकथ्कन থাকে ইহা ভিন্ন অন্য ভিক্ষা নাই, আয়ন শেষ হইলে পতির চরণ ধরিয়া পতির মাখের দিকে মুহিয়া প্রাণত্যাগ করবে, ইহা ভিন্ন সতীর আর কি ভিক্ষা আছে ? গান সমাপ্ত হইল। নয়নজলে সে পান্ডুবদনখানি ও উরঃস্থল ধৌত হইয়া গেল। ধীরে ধীরে মেঘচ্ছায়ায় যেন সয্যেকান্তি আচ্ছন্ন হইল, আলোকদ্বার ক্রমে রুদ্ধ হইল। সে সবগীয় মত্তি ঢাকিয়া গেল, গভীর অন্ধকারে বীণাধৰনি থামিয়া গেল, পাবশত দীরস্থ জলশব্দ ভিন্ন নরেন্দ্র আর কিছল শনিতে পাইলেন না। নরেন্দ্র গাঢ় নিদ্রায় অভিভূত হইলেন, আর কি স্বপ্ন দেখিলেন প্রাতে তাহা মনে রহিল না। নিদ্রান্তে নরেন্দ্র গাত্রোথান করিলেন। তাঁহার মত্ততা আর নাই, গহবর হইতে খড়া লইয়া বাহিরে আসিলেন। দেখিলেন নবজাত সয্যেরশিমতে বাক্ষলতা ও দম্বোদল ঝিকমিক করিতেছে, ডালে ডালে পক্ষিগণ গান করিতেছে, দুরে একলিঙ্গের প্রকাণ্ড শ্বেত-প্রস্তরনিমিত মন্দির সয্যেকিরণে বড় শোভা পাইতেছে। মন্দির লোকসমাকীর্ণ আর চতুদিকে পব্বতের উপর পাবত সয্যেরশিমতে সন্দের দেখা যাইতেছে। পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ ঃ খড়্গহন্তে A NAKED dirk gleamed in her hand. —Scott. সেই তিন দিন নরেন্দ্রনাথ কি চিন্তাজালে বেটিত ও ব্যথিত হইয়াছিলেন তাহা বর্ণনা করা যায় না। শত চিন্তা নরেন্দ্রনাথকে শত বশিচক দংশনাপেক্ষা অধিক ক্লেশ দিতে লাগিল। সেই পাবত-গহবরে শৈলেশ্বর যে আদেশ করিয়াছিলেন, তাহা নরেন্দ্রের হৃদয় হইতে তিরোহিত হইল না। শ্রীশচন্দ্রের সহিত হেমলতার বিবাহ হইয়াছে তাহা নরেন্দ্র অনেকদিন হইল শুনিয়াছেন। হেমলতা পরের গহিণী, তাহার চিস্তা, তাহার প্রতি ভালবাসা কি উচিত কায্য ? নরেন্দ্রনাথ, এই কি বীরের উপযুক্ত কায্য ? শৈবের উন্নত আদেশ গ্রহণ কর, প্রেমচিন্তা উৎপাটন কর, যশের পথ পরিস্কার কর, দেশের গৌরব সাধন কর, ইহা অপেক্ষা বীরের উপযুক্ত কায আর কি আছে ? নরেন্দ্র স্থির করিলেন শৈবের আদেশ শিরোধাৰ্য্য। আবার সেই গঙ্গাতীরে বিদায়ের কালে নক্ষত্রের আলোকে যে পাডুবৰ্ণ শতেক মুখখানি দেখিয়াছিলেন, ধীরে ধীরে সেই দুঃখিনী হেমলতার কথা মনে পড়িল। নরেন্দ্রের সমস্ত শরীর কণ্টকিত হইয়া উঠিল। সেই হেম বাল্যকালে নরেন্দ্রের সহিত খেলা করিয়াছে, যে দিন নরেন্দ্র গহত্যাগী হয় সে দিন হেম যেন আপন জীবনকে বিদায় দিতেছিল, তাহা নরেন্দ্রের মনে পড়িল । বাল্যকালে হেম নরেন্দ্র ভিন্ন আর কাহাকেও জানিত না, যৌবনের প্রারম্ভে প্রাতঃসন্ধ্যায় নরেন্দ্রের মুখ দেখিলে যেন হেম উদ্বেগশন্যে ও শাস্ত হইত। বাল্যকালের সহস্ৰ কথা অজস্র বারিতরঙ্গের ন্যায় নরেন্দ্রের হৃদয় ব্যথিত ও আলোড়িত করিতে লাগিল, নরেন্দ্র আর সহ্য করিতে পারিলেন না, একাকী মন্দিরপাশ্বে উপবেশন করিয়া নিঃশব্দে রোদন করিতে লাগিলেন। আবার চিন্তা আসিতে লাগিল। নরেন্দ্রের দেশ নাই, গহ নাই, বন্ধ নাই, পরিজন নাই, নরেন্দ্র একাকী দেশে দেশে পরিভ্রমণ করিতেছেন, কেবল হেমের চিন্তাস্বরাপ নক্ষত্রের উপর দটি রাখিয়া সংসারসমুদ্রে বিচরণ করিতেছেন। নিদারণে শৈব ! অভাগার একমাত্র সখচিন্তা, একমাত্র সংখস্বপ্ন দরে করিও না, এ নিদারণে আদেশ করিও না। নরেন্দ্র অনেক ক্লেশ সহ্য করিয়াছে; আরও যে ক্লেশ আদেশ কর সহ্য করিতে প্রস্তুত আছে। নরেন্দ্র যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করিবে, বীরমষ্যাদা ত্যাগ করিবে, অন্নকট ভোগ করিতে সম্মত আছে, জগতের নিন্দাভার বহন করিতে সক্ষমত আছে, অথবা সংসার পরিত্যাগ করিয়া সিংহ ব্যাঘ্ৰাদি জন্তুর সহিত ঘোর অরণ্যে জীবন অতিবাহিত করিতে সক্ষমত আছে। শৈলেশ্বর ! আদেশ কর, ইহাতে যদি পাপের প্রায়শিচত্ত হয়, নরেন্দ্র আজ্ঞা শিরোধায্য করিবে; ইহাতে যদি নরেন্দ্র মহত্তের জন্য সঙ্কোচ করে, করালবদনার সম্মখে তাহার মস্তকচ্ছেদন করিও। কিন্তু বাল্যকাল অবধি যে চিন্তা অবলম্বন করিয়া নরেন্দ্র জীবনধারণ করিতেছে, যে আলোকস্তম্ভস্বরুপ চিন্তার জ্যোতিঃতে নরেন্দ্র দেশে দেশে পরিভ্রমণ করিতেচ্ছ, নিদারণে শৈব ! সে চিন্তা দরে করিতে বলিও না। এখন হেম পরের গহিণী, তথাপি নরেন্দ্রের ভালবাসা বিস্মত হয় নাই, নরেন্দ্র তাহার চিন্তা ত্যাগ করবে ? ১২৯