পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী নরেন্দ্র মুসলমান হইয়া যবনীকে বিবাহ করিবে ? হেম তাহা শুনিবে ? সে ভাবনা অসহ্য। প্রবঞ্চক শৈব ! হিন্দ পারোহিত হইয়া তুমি যবনীর পাণিগ্রহণ করিতে উপদেশ দাও। বিধমণী । কপটাচারি! দরে হও । আবার শৈলেশ্বরের গম্ভীর আদেশ মনে পড়িল। “হা নরেন্দ্রনাথ ! আপনাকে ভুলাইও না, আমাকে ভুলাইবার চেষ্টা করিও না, যে ঘোর পাপে লিপ্ত হইয়াছ তাহা বিশেষ করিয়া আলোচনা কর।” শৈব কি মিথ্যাবাদী ? পরনারী-চিন্তা কি পাপ নহে? নরেন্দ্রনাথ, সাবধান ! আপনি পাপে লিপ্ত হইতেছ, শৈব তোমার দোষ দেখাইয়া দিতেছেন, তাঁহার নিন্দা করিও না। নরেন্দ্রনাথ ভাবিয়া ভাবিয়া সে দিন কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না। ī তিন দিন অতিবাহিত হইল, তৃতীয় দিবস রজনীতে নিদিষ্ট সময়ের দুই দণ্ড পবে নরেন্দ্রনাথ গহবরমুখে একাকী দন্ডায়মান রহিয়াছেন, এক একবার এদিক ওদিক নিঃশব্দে পদসঞ্চারণ করিতেছেন, এক একবার অন্ধকার আকাশের দিকে স্থির দটি করিতেছেন, আবার গহরমুখে আসিয়া দন্ডায়মান হইতেছেন। হস্তে নিকোষিত অসি, আকৃতি স্থির ও গম্ভীর। ক্ষণেক পর শৈলেশ্বর আসিয়া উপস্থিত হইলেন ও নরেন্দ্রনাথকে আশীব্বাদ করিলেন। নরেন্দ্রনাথ গোস্বামীকে প্রণাম করিতে বিস্মত হইলেন। শৈলেশ্বর জিজ্ঞাসা করিলেন,—স্থিরপ্রতিজ্ঞ হইয়াছ ? গম্ভীর ও ঈষৎ ককাশস্বরে নরেন্দ্রনাথ বলিলেন,—হইয়াছি। উভয়ে গহবরে প্রবেশ করিলেন । শৈলেশ্বর যাহা দেখিলেন তাহাতে চমকিত হইলেন । নরেন্দ্রনাথের ললাট, গন্ডস্থল, স্কন্ধ, বাহন ও বক্ষঃস্থল রক্তচন্দনে একেবারে প্লাবিত রহিয়াছে ! শৈলেশ্বর। পাপিষ্ঠ ! পরস্ত্রী-আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করিতে পারিলে না ? নরেন্দ্র। পরস্ত্রী-আকাঙক্ষা রাখি না। শৈলেশ্বর। হেমলতাকে এ জীবনে আর দেখিতে চাহ না ? নরেন্দ্র। তাহা স্বীকার করিতে প্রস্তুত আছি। শৈলেশ্বর। তবে যবনীকে বিবাহ করিতে স্বীকৃত আছ ? নরেন্দ্র। এ জীবনে নহে । শৈলেশ্বর ক্ষণকাল নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন। আবার বলিলেন,—তবে প্রতিজ্ঞাপালনে প্রস্তুত হও । খড়া ত্যাগ কর, কালীর সম্মুখে জীবনদানে প্রস্তুত হও । নরেন্দ্র। আমি যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছি তাহা পালন করিয়াছি। আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিব বলিয়াছিলাম । শৈলেশ্বর। মঢ়ে ! সিংহের গহবরে আসিয়াও জীবনের প্রত্যাশা আছে ? এস্থলে কে তোমার সহায় হইবে ? নরেন্দ্র । এই অসি আমার সহায় । শৈলেশ্বর নিঃশব্দে গহবরের এক স্থান হইতে আপন অসি বাহির করিলেন। উদয়পরে একবার যেরপে যুদ্ধ হইয়াছিল অদ্য আবার দুইজনে সেইরুপ অসি ও ঢাল লইয়া যুদ্ধ হইল। নরেন্দ্র সে দিন অপেক্ষা অধিক সাবধানে অধিক যত্নে যুদ্ধ করিতে লাগিলেন ; কিন্তু সে যত্ন ব্যথা ! সিংহবীযর্ঘ্য শৈব অপেক্ষণ মধ্যেই নরেন্দ্রকে পরাস্ত করিয়া তাঁহার অসি কাড়িয়া লইলেন। শৈলেশ্বর। কেবল পজা-ব্যবসায়ে এই কেশ শুরু হয় নাই। রাজস্থান-ভূমি বীরপ্রসবিনী, যুদ্ধকালে শৈব গোস্বামিগণও বীৰ্য্য প্রকাশে রাজস্থানে অগ্রগণ্য। বালক ! তোমার সহিত যুদ্ধ করিলাম এই আমার কলঙ্ক রহিল ! নরেন্দ্র । আমি ইহার জন্যও প্রস্তুত আছি; তোমার যাহা ইচ্ছা, যাহা সাধ্য কর। শৈলেশ্বর-একগাছি রজ বাহির করিলেন, নরেন্দ্রের দই হস্ত সেই রাজ দ্বারা সজোরে বন্ধন করিলেন। এরপে জোরে বাঁধিলেন যে হস্তের শিরা সফীত হইয়া উঠিল, নরেন্দ্র শব্দমাত্র উচ্চারণ করিলেন না। পরে পাবের ন্যায় কলস লইয়া নরেন্দ্রের মুখের নিকট ধরিয়া মদ্যপান করিতে বলিলেন, নরেন্দ্র তাহাই করিলেন। গোস্বামী গহনর হইতে নিৰ্ম্মকান্ত হইলেন। মত্ততাহেতু নরেন্দ্র অচিরাং ভূমিতে নিপতিত হইলেন, চক্ষতে অঞ্চকার দেখিতে লাগিলেন, গহবর-পাশ্বে দুইজন যেন ধীরে ধীরে কথা কহিতেছে এইরুপ তাঁহার বোধ হইতে লাগিল । ১30