পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী যে দিকে যাইলেন, সে দিক হইতে লোকের কলরব শুনিতে পাইলেন। প্রাসাদের মধ্যে এই কলরব শুনিয়া নরেন্দ্র কিছু বিস্মিত হইলেন, এবং ঔৎসকের সহিত সেই দিকে গমন করিতে লাগিলেন। যত নিকটে আসিলেন, তত নারীকণ্ঠ-নিঃসন্ত সমধর কথা ও হাস্যধৰনি তাঁহার কণে প্রবেশ করিল; তিনি আরও বিস্মিত হইয়া সেই দিকে যাইয়া অবশেষে একটী জনাকীর্ণ স্থানে উপস্থিত হইলেন। দেখিলেন সম্মখে একটী অতি বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ; প্রাঙ্গণে কত সন্দের পড়পচারা ও পাপলতিকা তাহা বৰ্ণনা করা যায় না। চতুঃপাশ্বাস্থ হম"শ্রেণী হইতে পাপমালা দলিতেছে, বাক্ষলতায় পাপ ফটিয়া রহিয়াছে, স্থানে স্থানে স্তপোকার পম্পে রহিয়াছে, চারিদিকে স্যগন্ধ পাপ বিকীর্ণ রহিয়াছে। সদশন ফোয়ারা যেন দ্রব রৌপ্য-স্তম্ভ নৈশ আকাশে উত্তোলন করিয়া আবার মক্তোরাপে চারিদিকে বিকীর্ণ করিতেছে। ঝোপে বক্ষের অন্তরালে, সম্মুখে, পাশ্বে", উচ্চে, নীচে, নানাবণের সুগন্ধদীপাবলী জনলিতেছে, যেন আজ ইন্দ্রের অমরাপরী লজিত করিয়া এই বেগমমহল অপব্বরপে ধারণ করিয়াছে। সেই প্রাঙ্গণে একটী বাজার বসিয়াছে, ক্রেতা বিক্রেতা দলে দলে বিচরণ করিতেছে। অন্যান্য বাজার হইতে এই ভেদ যে সকলেই রমণী। বিক্রেতা ভারতবষের প্রধান প্রধান রাজা মহারাজা ও ওমরাহের মহিলাগণ,—ক্রেতা সমাটের বেগমগণ! যে সমস্ত অসয"ম্পশ্যা কোমলাঙ্গী লাবণ্যময়ী যাবতীগণ ক্রয় বিক্রয় করিতেছেন, তাঁহাদিগের সৌন্দৰ্য্য, রসিকতা ও বাকপ্ৰগলভতায় নরেন্দ্র চকিত হইলেন! পাঠকগণ অবগত আছেন যে বৎসর বৎসর নওরোজার দিন দিল্লীর সম্রাটগণ বেগমমহলে এইরুপ একটী করিয়া বাজার বসাইতেন, ভারতবর্ষের প্রধান প্রধান মহিলাগণ এই বাজারে দ্রব্য বিক্রয় করিতে আসিতেন। ওমরাহ ও রাজগণ পরিবারস্থ রমণীদিগকে বেগমদিগের সহিত পরিচিতা করিবার জন্য এই বাজারে পাঠাইতেন । পুরুষের মধ্যে কেবল স্বয়ং সম্রাট আসিতেন। পবে প্রথামতে এই আনন্দের দিনে আরংজীব সেইরুপ বাজার বসাইয়াছেন, ও স্বয়ং দুই একজন বেগমের সহিত এক দোকান হইতে অন্য দোকানে পরিভ্রমণ করিতেছিলেন। ভ্রাতৃযুদ্ধে আরংজীবের ভগিনী রৌশনআরা আরংজীবের অনেক সহায়তা করিয়াছিলেন, সে বাজারের মধ্যে রেীশনআরার ন্যায় কাহার গৌরব, কাহার প্রভুত্ব ? অন্য ভগিনী জেহানআরা দারার পক্ষাবলম্বন করিয়াছিলেন, আদ্য এই মহোৎসবের মধ্যে জেহানআরা নাই । বিসময়োৎফুল্ললোচনে নরেন্দ্রনাথ এই মহোৎসব দেখিতে লাগিলেন। দেখিলেন সম্রাট একজন রুপবতী মোগলকন্যার নিকটে কতকগুলি অলঙ্কার ও সাটিন ও সবণ খচিত বস্ত্রের দর করিতে আরম্ভ করিতেছেন। দর করিতে উভয়পক্ষই সমান পট, কখন কখন এক পয়সার বিভিন্নতার জন্য মহাগণ্ডগোল উপস্থিত হইতেছে। আরংজীব বলিলেন,—তোমার জিনিস মেকি, তুমি এখানে ঠকাইতে আসিয়াছ ? চতুরা মোগলকন্যা বলিলেন,—তুমি কিরুপ খরিদদার ? এরপ জিনিস কখনও দেখ নাই, ইহার দর তুমি কি জানিবে ? তুমি ইহার উপযুক্ত নও, অন্য স্থানে যাও, তোমার যোগ্য দ্রব্য পাইবে। এইরুপ বহল বাগবিতণ্ডার পর মল্য অবধারিত হইল। ক্রেতা তখন যেন ভ্রমক্রমে দুই চারিটী রৌপ্যমুদ্রার স্থানে বিক্রেতাকে সবেণীমদ্রো দিয়া চলিয়া গেলেন ! অনেকক্ষণ এইরুপ বাজার দেখিয়া নরেন্দ্র জেলেখার আদেশানুসারে "শিশমহলে" প্রবেশ করিলেন, তথায় আবার অন্যরপে অপরুপ দশ্য দেখিলেন। সম্রাট ও বেগমদিগের স্নানাথ এই মহল নিশ্চিমীত হইয়াছে। শ্বেতপ্রস্তর-বিনিমিত সানের উপর দিয়া নিৰ্ম্মল জল প্রবাহিত হইতেছে, এই সানে অঙ্কিত প্রতিকৃতি দেখিয়া বোধ হয় যেন জলের নীচে অসংখ্য মৎস্য ক্রীড়া করিতেছে। চতুদ্দিক হইতে ফোয়ারার নিম্মল জল বেগে উঠিতেছে, আবার মত্তোরাশির ন্যার প্রাস্তরের উপর পতিত হইতেছে। ছাদ হইতে অসংখ্য দীপাবলি লম্বিত রহিয়াছে ও সেই সমস্ত দীপের বিবিধবর্ণের আলোক ফোয়ারার জলের উপর বড় সন্দেরভাবে প্রতিহত হইতেছে। চতুদিক হইতে অসংখ্য দপণ রত্নরাজিখচিত হইয়া দেয়ালে সন্নিবেশিত হইয়াছে, কেন না স্নানকারিণী আপনার সন্দের অনাবত অবয়ব দেখিতে পাইবেন! বিলাসপট সম্রাটগণ বেগমদিগকে লইয়া এই গহে স্নান ও জলকেলি করিতে পারবেন, এই জন্য কত দেশ হইতে অথ আনীত হইয়া এই অপব্ব বিলাসগৃহ বিনিৰ্ম্মিত ও সপোভিত হইয়াছে। নানাদেশ হইতে অনেক মসলমান ও হিন্দু রমণী আদ্য প্রাসাদে সমবেত হইয়াছেন। >○○。