পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रट्ञथ ब्रळनाबल" আরতি শেষ হইল, যাত্রিগণ নিজ নিজ গ্যহে চলিয়া গেল, কেবল দুইজন সন্ত্রীলোক সেই মন্দির পাশ্বে একটী বক্ষেতলে দণ্ডায়মান হইয়া কথোপকথন করিতেছিল। - হেমতলা ঈষৎ হাসিয়া বলিল,—দিদি, মুসলমানী বলিয়াছিল, আজ এই মন্দিরে একপ্রহর রাত্রির সময় নরেনের সঙ্গে দেখা হইবে, কৈ তাহা হইল না ? শৈবালনী,অতিশয় বৃদ্ধিমতী, হেমের কথা শনিয়া ব্যঝিতে পারিল যে, যদিও হেম হাসিতে হাসিতে ঐ কথা জিজ্ঞাসা করিল, তথাপি হেমের হৃদয় অদ্য যথার্থই উদ্বেগে পরিপণ । সেই আশায় হেমের হৃদয় আজি সজোরে আঘাত করিতেছে, হেমের শরীর এক একবার অলপ অলপ কম্পিত হইতেছে। শৈবলিনী মনে মনে ভাবিল,—আজি না জানি কি কপালে আছে; হেম বালিকামাত্র, নরেন্দ্রকে দেখিলে আবার পবে কথা মনে পড়িবে, সে অসহ্য যাতনা বালিকা কি সহ্য করিতে পারবে। প্রকাশ্যে বলিল—সে পাগলিনীর কথায় কি বিশ্বাস করে ? নরেন্দ্র কোথায়, কোন দেশে আছে, তাহার সহিত মথুরায় দেখা হইবার আশা করিতেছ ? হেমলতা। কিন্তু দিদি, জেলেখার অন্য কথাগুলি ত ঠিক হইয়াছিল। শৈবলিনী। ঐ প্রকারে উহারা মিথ্যা আশা জন্মায়, দুটা সত্য কথা বলে একটা মিথ্যা কথা বলে। কৈ আমাদের দাসী আসিল না ? আমি যে পথ ঠিক চিনি না, না হইলে আমরা দুই জনেই বাড়ী যাইতাম । হেম। দেখ দিদি, আমার বোধ হইতেছে যেন এই আমাদের বীরনগর, যেন এই গঙ্গা। আর বাল্যকালে চন্দ্রালোকে গঙ্গাতীরে খেলা করিতাম, তোমার সহিত খেলা করিতাম আর— আর,—আর, সকলের সহিত খেলা করিতাম, সেই কথা মনে পড়িতেছে। শৈবলিনীর মুখ আরও গম্ভীর হইল, দাসীর আসিতে বিলম্বব হইতেছে বলিয়া শৈবলিনী যৎপরোনাস্তি উৎসকে হইল। হেম তাহা লক্ষ্য না করিয়া আবার বলিতে লাগিল,--দেখ দিদি, ঐ নৌকাখানি কেমন তীরের মত আসিতেছে, উঃ ! মাঝিরা কি জোরে দড়ি বাহিতেছে, উঃ ! যেন উড়িয়া আসিতেছে। শৈবলিনী সেই দিকে দেখিল ; তাহার ভয় দ্বিগণ হইল। শৈবলিনী যাহা ভয় করিতেছিল তাহাই হইল—নৌকা ঘাট হইতে চারি হস্ত দরে থাকিতে থাকিতে একজন সৈনিক লম্ফ দিয়া ঘাটে পড়িল,--সৈনিক নরেন্দ্রনাথ ! হেম বক্ষের ছায়ায় ছিল, নরেন্দ্র তাহাকে না দেখিতে পাইয়া মন্দিরের ভিতর যাইলেন। কিন্তু হেম নরেন্দ্রকে দেখিয়াছিল, সেই মহেনত্তে যেন শরীরের সমস্ত রক্ত হেমের মুখমণ্ডলে দষ্ট হইল, চক্ষয়, কণী, ললাট, স্কন্ধ একেবারে রক্তবর্ণ হইয়া গেল ! পরমহত্তে সমস্ত মুখমণ্ডল পান্ডুবণ হইল, শরীর কপিতে লাগিল, ললাট হইতে বেদবিন্দর বহিগত হইতে লাগিল! শৈবলিনী সভয়ে হেমকে ধরিল । হেম কিঞ্চিৎ আরোগ্য লাভ করিলে শৈবলিনী গম্ভীরস্বরে বলিল,—হেম, আমি তোমাকে ভগিনী অপেক্ষা ভালবাসি, আমি বলিতেছি, আজ নরেনের সহিত দেখা করিও না, বাড়ী চল । তুমি আমাকে ভগিনী অপেক্ষা ভালবাস, আমার এই কথাটী শন, বাড়ী চল । তুমি বালিকা, আপনার মন জান না, নরেনের সহিত অদ্য তোমার কথোপকথন হইলে কি বিপদ ঘটিবে ভগবান জানেন। হেমলতা মুখ নত করিয়া এই কথা শুনিল, অনেকক্ষণ ভূমির দিকে দটি করিতে লাগিল নয়ন হইতে দুই এক বিন্দর সবচ্ছ অশ্র সবচ্ছ বালকোয় পড়িয়া অদশ্য হইল। আবার ধীরে ধীরে মুখখানি তুলিল, তখন উদ্বেগের লেশমাত্র চিহ্ন নাই। হেমের মুখখানি শাস্ত, নিম্মল, স্থির; নয়নে কেবল একবিন্দ আশ্রজেল । হেম শৈবলিনীর দিকে চাহিয়া বলিল-দিদি, তুমি আমার প্রাণের অপেক্ষা প্রিয়, তুমি আমাকে অবিশ্বাস করিও না। দিনে দিনে, মাসে মাসে, তুমি আমাকে কত ধৰ্ম্মম উপদেশ দিয়াছ, আমি তাহা ভুলি নাই। দিদি, আমি অবিশ্বাসিনী নহি। আজি এইমাত্র দেবপজা সাঙ্গ করিলাম, এই পণ্যভূমিতে দাঁড়াইয়া এই পণ্য দেবমন্দিরে আমি অবিশ্বাসিনী হইব না। যিনি আমার প্রধান দেবতা, যে দেবতুল্য স্বামী আমাকে ভালবাসেন, আমার জীবনের যিনি সব্বাস্তব ধন, জীবন থাকিতে এ দাসী তাঁহার অবিশ্বাসিনী হইবে না। দিদি, আমাকে সন্দেহ করিও না, আমাকে মন্দ ভাবিও না, তুমি আমাকে মন্দ ভাবিলে এ সংসারে অভাগিনীকে কে ভালবাসিবে ? S89