পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিবজী মুসলমানদিগকে সাপ্ত পাইব বিবেচনা করিয়াছিলাম। দেখিলাম, সকলে জাগ্রত ও সসন্জ । পর্বে কখনও দগে জয় করিতে আমার এত সৈন্য হত হয় নাই। s জয়সিংহ। বোধ করি এক্ষণ যন্দ্ধের সময় বলিয়া রজনীতে সব্বদাই শত্ররা সসজ থাকে। শিবজী। সত্য, কিন্তু এত দগে জয় করিয়াছি, কোথাও সৈন্যগণকে এরপে প্রস্তুত দেখি নাই। জয়সিংহ। শিক্ষা পাইয়া ক্রমেই সতক হইতেছে। কিন্তু সতকাই থাকুক আর নাই থাকুক, রাজা শিবজীর গতিরোধ করা অসাধ্য, শিবজীর জয় অনিবাৰ্য্য! o শিবজী। মহারাজের প্রসাদে দগ"জয় হইয়াছে বটে, কিন্তু কল্য রজনীর ক্ষতি জীবনে পরেণ হইবে না। সহস্ৰ আক্রমণকারীর মধ্যে দুই-তিন শত জনকে আমি আর এ জীবনে দেখিব না, সেরাপ দঢ়প্রতিজ্ঞ বিশ্বস্ত সেনা বোধ হয় আর পাইব না। শিবজী ক্ষণেক শোকাকুল হইয়া রহিলেন। পরে বন্দিগণকে আনয়নের আদেশ করিলেন। রহমতখাঁর অধীনে সহস্র সেনা সেই দগম দাগ রক্ষা করিত, কল্যকার যুদ্ধের পর কেবল দুই-এক শত বন্দিরাপে আছে, অন্য সমস্ত হত বা পলায়ন করিয়াছে। বন্দীদিগের হস্তদ্বয় পশ্চাদিকে বদ্ধ, তাহারা সভাসম্মুখে উপস্থিত হইল। শিবজী আদেশ করিলেন,—সকলের হস্ত খুলিয়া দাও । আফগান সেনাগণ! তোমরা বীরের নাম রাখিয়াছ, তোমাদের আচরণে আমি পরিতুষ্ট হইয়াছি। তোমরা স্বাধীন। ইচ্ছা হয় দিল্লীশ্বরের কায্যে নিষক্তে হও, নচেৎ আপন প্রভু বিজয়পুরের সলেতানের নিকট চলিয়া যাও, আমার আদেশে কেহ তোমাদের কেশাগ্র পশ* করিবে না। শিবজীর এই সদাচরণ দেখিয়া কেহই বিস্মিত হইল না। সকল যুদ্ধে সকল দাগ-বিজয়ের পর, তিনি বিজিতদিগের প্রতি যথেস্ট দয়া প্রকাশ ও সদাচরণ করিতেন, তাঁহার বন্ধগণ কখন কখন তাঁহাকে এজন্য দোষ দিতেন, কিন্তু তিনি গ্রাহ্য করিতেন না। শিবজীর সদাচরণে বিস্মিত হইয়া আফগানগণ অনেকেই দিল্লীশ্বরের বেতনভোগী হইতে স্বীকার করিল। পরে শিবজী কিল্লাদার রহমৎখাঁকে আনিবার আদেশ দিলেন। তাহারও হস্তদ্বয় পশ্চাদিকে বদ্ধ, তাহার ললাটে খঙ্গের আঘাত, বাহতে তাঁর বিদ্ধ হইয়া ক্ষত হইয়াছে ! বীর সদপো সভাসম্মুখে দণ্ডায়মান হইলেন, সদপে শিবজীর দিকে চাহিলেন। শিবজী সেই বীরশ্রেষ্ঠকে দেখিয়া স্বয়ং আসন ত্যাগ করিয়া খঙ্গের দ্বারা হস্তের রাজ কাটিয়া ফেলিলেন, পরে ধীরে ধীরে বলিলেন,—বীরবর! যুদ্ধের নিয়মানুসারে আপনার হস্ত বদ্ধ হইয়াছিল, আপনি এক রজনী বন্দিরাপে ছিলেন। আমার দোষ মাতজনা করন। আপনি এক্ষণে স্বাধীন। জয়পরাজয় ভাগ্যক্রমে ঘটে, কিন্তু আপনার ন্যায় যোদ্ধার সহিত যুদ্ধ করিয়া আমিই সম্পমানিত হইয়াছি। রহমৎখাঁ প্রাণদন্ডের আদেশ প্রত্যাশা করিতেছিলেন ; তাহাতেও তাঁহার স্থির গন্বিত নয়নের একটু পরও কপিত হয় নাই, কিন্তু শিবজীর এই অসাধারণ ভদ্রতা, দেখিয়া তাঁহার হদয়, বিচলিত হইল। যুদ্ধসময়ে শত্রমধ্যে কেহ কখনও রহমৎখাঁর কাতরতা-চিহ্ন দেখেন নাই, আদা বদ্ধের দুই উত্তজবল চক্ষ হইতে দই বিন্দ আশ্রম পতিত হইল। রহমৎখাঁ মুখ ফিরাইয়া তাহা মোচন করিলেন। ধীরে ধীরে বলিলেন,—ক্ষত্রিয়রাজ ! কল্য নিশীথে আপনার বাহুবলে পরাস্ত হইয়াছিলাম, অদ্য আপনার ভদ্রাচরণে তদধিক পরাস্ত হইলাম। যিনি হিন্দু ও মুসলমানদিগের অধীশ্বর, যিনি বাদশাহের উপর বাদশাহ, জমীন ও আশমানের সুলতান, তিনি এই জন্য আপনাকে নতন রাজ্যবিস্তারের ক্ষমতা দিয়াছেন। জয়সিংহ। পাঠান-সেনাপতি, আপনারও উচ্চপদের যোগ্যতা আপনি প্রমাণ করিয়াছেন। দিল্লীশ্বর আপনার ন্যায় সেনা পাইলে আরও পদবদ্ধি করিবেন সন্দেহ নাই। দিল্লীশ্বরকে কি লিখিতে পারি যে, আপনার ন্যায় বীরশ্রেষ্ঠ তাঁহার সৈন্যের একজন প্রধান কমমচারী হইতে সম্মত হইয়াছেন ? রহমৎখাঁ। মহারাজ ! আপনার প্রস্তাবে আমি যথেষ্ট সম্মানিত হইলাম, কিন্তু আজীবন যাঁহার কায্য করিয়াছি, তাঁহাকে পরিত্যাগ করিব না। যতদিন এ হস্ত খড়া ধরিতে পারবে, বিজয়পুরের জন্য ধরিবে। 鴨 শিবজী। তাহাই হউক। আপনি অদ্য রাত্রি বিশ্রাম করন কল্য প্রাতে আমার একদল সেনা আপনাকে বিজয়পর পয্যন্ত নিরাপদে পৌছাইয়া দিবে। పిసి 8