পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথা রহিয়া রহিয়া হৃদয়ে জাগরিত হইতে লাগিল, সখের লহরীর সহিত শোকের লহরী মিশ্রিত হইয়া হৃদয়ে উথলিতে লাগিল, থাকিয়া থাকিয়া দরবিগলিত ধারায় উভয়ের হৃদয় ভাঙ্গিয়া যাইতে লাগিল। ভগিনীর ন্যায় এজগতে আর স্নেহময়ী কে আছে, ভ্রাতৃস্নেহের ন্যায় আর পবিত্র স্নেহ কি আছে ? আমরা সে ভালবাসা বর্ণন করিতে অশক্ত, পাঠক, ক্ষমা কর। o অনেকক্ষণ পরে দলই জনের হৃদয় শীতল হইল। তখন লক্ষয়ী আপন অঞ্চল দিয়া ভ্রাতার নয়নের জল মোচন করিয়া বললেন-ঈশনীর ইচ্ছায় কত অনুসন্ধানের পর আজ তোমাকে দেখিতে পাইলাম, আহা! আজ আমার কি পরম সুখ, দুঃখিনীর কপালে কি এত সুখ ছিল ? ভাই, এ শীতল বাতাসে আর থাকিলে তোমার অসুখ হইবে, চল মন্দিরের ভিতর যাই, আমি আর অধিকক্ষণ থাকিতে পারিব না। ভ্রাতা ভগিনী মন্দির-অভ্যস্তরে আসিলেন, লক্ষয়ী একটী স্তম্ভের পাশ্বে উপবেশন করিলেন, শ্ৰান্ত রঘুনাথ পাববৎ লক্ষীর অকে মস্তক স্থাপন করিয়া শয়ন করিলেন, মদম্বরে উভয়ে গভীর অন্ধকার রজনীতে পািব্বকথা কহিতে লাগিলেন। ধীরে ধীরে ভ্রাতার ললাটে ও দেহে হস্ত বলাইয়া লক্ষয়ী কত কথা জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, রঘুনাথ তাহার উত্তর করিতে লাগিলেন। দস্যহস্ত হইতে পলায়ন করিয়া অনাথ বালক কোন কোন দেশে বিচরণ করিয়াছিলেন, কোথায় কি অবস্থায় ছিলেন, তাহাই বলিতে লাগিলেন। কখন মহারাষ্ট্ৰীয় কৃষকদিগের সহিত চাষ করিতেন, কখন গো-বৎস বা মেষপাল রক্ষা করিতেন, মেষের সঙ্গে সঙ্গে পৰ্বতে, উপত্যকায়, বিস্তীণ প্রান্তরে ভ্রমণ করিতেন, বা নিজনে বসিয়া চারণদিগের গীত গাইতেন। কখন সায়ংকালে নদীকলে একাকী বসিয়া উচ্চৈঃস্বরে সেই গীত গাইয়া হৃদয়কে শাস্ত করিয়াছেন, কখন প্রতাষে অরণ্যমধ্যে প্রবেশ করিয়া পাব কথা স্মরণ করিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিয়াছেন। পৰ্বতসঙ্কুল কঙ্কণ প্রদেশে কয়েক বৎসর অবস্থিতি করিয়াছেন, অবশেষে একজন মহারাষ্ট্ৰীয় সেনানীর অধীনে কাৰ্য্য করিয়াছেন, তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে কখন কখন যুদ্ধক্ষেত্রে যাইতেন । বয়োবদ্ধির সহিত রঘুনাথের যুদ্ধব্যবসায়ে উৎসাহ বদ্ধি পাইয়াছিল, অবশেষে মহানুভব শিবজীর নিকট উপস্থিত হইয়া তিনি সৈনিকের পদ গ্রহণ করেন। আজি তিন বৎসর হইল সেই কার্য করিয়াছেন জগদীশ্বর জানেন তিনি কায্যে ক্রটি করেন নাই, কিন্তু প্ৰভু শিবজীর অযথা সন্দেহে অপমানিত হইয়া দেশে দেশে নিরাশ্রয়রপে ভ্রমণ করিতেছেন। এক্ষণে জীবনে তাঁহার উদ্দেশ্য নাই, পিতার ন্যায় যুদ্ধে প্রাণত্যাগ করিয়া আসার জগৎ পরিত্যাগ করবেন। ভ্রাতার দুঃখকাহিনী শুনিতে শুনিতে স্নেহময়ী ভগিনী নিঃশব্দে অবারিত অশ্রদ্বষণ করিতেছিলেন। তিনি নিজের শোক সহ্য করিতে পারেন, ভ্রাতার দঃখে একেবারে ব্যাকুল হইলেন । যখন সেকথা শেষ হইল, কথঞ্চিৎ শোক সংবরণ করিয়া আপনার কি পরিচয় দিবেন তাহা চিন্তা করিতে লাগিলেন। চন্দ্ররাওয়ের নাম করিলেন না; ধীরে ধীরে আশ্রজেল মোচন । করিয়া বলিলেন,—মহারাষ্ট্রদেশে আসিবার অনতিকাল পরেই একজন সম্প্রাস্ত মহারাষ্ট্র য়গীরদার তাঁহাকে করেন। নারী স্বামীর নাম করে না,—গগনের শশধরের নামই তাঁহার স্বামীর নাম, গগনের শশধরের ন্যায় তাঁহার ক্ষমতা ও গৌরবজ্যোতিঃ চারিদিকে বিকীর্ণ হইতেছে। তাঁহার বিপলে সংসারে লক্ষী সুখে আছেন, প্রভুও দাসীর উপর অনুগ্রহ করেন, সে অনগ্রহে দাসী সুখে আছেন। এ জীবনে তাঁহার আর কোন বাসনা নাই, কেবল প্রাণের ভাইকে সনখে থাকিতে দেখিলেই তাঁহার জীবন সাথক হয়। রঘুনাথের সংবাদ তিনি মধ্যে মধ্যে পাইতেন, তাঁহাকে একবার দেখিবার জন্য কতদিন চেস্টা করিতেছেন। অদ্য সেই পুনরায় পাইলেন। এইরুপে আত্মপরিচয় দিয়া লক্ষয়ী ভ্রাতার হৃদয়ের শেলসম দুঃখ উৎপাটন করিতে যত্ন করিতে লাগিলেন। লক্ষী দুঃখিনী, দুঃখের কথা জানিতেন। লক্ষী নারী, দুঃখ সাত্ত্বনা করিতে জানিতেন। সহিষ্ণ হইয়া নিজ দুঃখ সহ্য করা, সাত্ত্বনা দিয়া পরের দঃখ দরে করা এই নারীর ধামর্শ। Qo অনেক প্রকার প্রবোধবাক্য দিয়া লক্ষয়ী ভ্রাতার মন শান্ত করিতে লাগিলেন। বলিলেন,— আমাদিগের জীবনই এইরুপ, সকল দিন সমান থাকে না ! ভগবান যে সুখ দেন তাহা আমরা ミOS