পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশচন্দ্র দত্ত : সাহিত্য-সাধন রমেশচন্দ্রের আয় কাল উনষাট বৎসর। এই সময়ের মধ্যে ভারতবষের দিকে দিকে উন্নতির সচনা দেখা দিয়াছিল। বাঙ্গালাদেশ এই উন্নতিকে অব্যাহত শ্ধ নয়, ইহাকে ত্বরান্বিত করিতেও তৎপর হয়। বঙ্গসাহিত্যের দ্রুত উন্নতি এই তৎপরতারই একটি প্রকৃষ্ট পরিচয়। সে যাগে বাঙ্গালা সাহিত্যের সেবায় যাহারা তৎপর হইয়াছিলেন তাঁহাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন ইংরেজী সাহিত্যে সুপণ্ডিত। বস্তুতঃ ইংরেজী সাহিত্যের আদশে অনুপ্রাণিত হইয়া বিশিষ্ট মনীষীদের রচনায় বাঙ্গালার গদ্য সাহিত্য অত দ্রত একটি সঠিরুপ লইতে পারিয়াছিল। রমেশচন্দ্ৰ আকৈশোর ইংরেজী সাহিত্যই বিশেষ করিয়া অধ্যয়ন ও অনুশীলন করিয়াছিলেন। এই অধ্যয়ন ও অনুশীলনের ফলস্বরপ প্রথমে তিনি ইংরেজী কবিতা ও প্রবন্ধাদি রচনা করিতে প্রবত্ত হন। ক্রমে তিনি বাঙ্গালা সাহিত্যের এবং সংস্কৃত সাহিত্যের অনুশীলনেও অবহিত হইলেন। ইহার ফলে বাঙ্গালা সাহিত্য যে কত সমদ্ধ হইয়াছে এক কথায় বলিয়া শেষ করা যায় না। সাহিত্য সাধনার ক্রমিক ধারার বিষয় রমেশচন্দ্র নিজেই "Wednesday Review" (আগস্ট ২৩, ১৯o৫) পত্রিকায় একটি প্রবন্ধে বিশদভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি কৈশোরে ও যৌবনে ইংরেজী সাহিত্যের যে বিশেষ চচ্চা করিয়াছিলেন এই রচনাটি হইতে তাহা আমাদের বেশ হৃদয়ঙ্গম হয়। ইংরেজী সাহিত্য তথা কাব্য, উপন্যাস, ইতিহাস, অর্থনীতি এবং কিয়দংশে দশন তিনি বিশেষ মনোযোগের সহিত অধ্যয়ন করেন। উপন্যাস, বিশেষতঃ স্যার ওয়ালটার সকটের ওয়েভারলি নভেলস তাঁহার খবই প্রিয় ছিল। অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি সকটের আন্তরিক প্রীতি রমেশচন্দ্রের মধ্যেও অনুক্রামিত হইতে থাকে। রমেশচন্দ্র একস্থলে বলিয়াছেন, ইতিহাস-প্রীতি তাঁহাকে সকটের উপন্যাস পড়িতে উদ্ধৃদ্ধ করিয়াছে কি সকটের উপন্যাসই তাঁহার হৃদয়ে ইতিহাস-প্রীতির উদ্রেক করিয়াছে তিনি বলিতে অক্ষম, অর্থাৎ উভয়ই যে উভয়ের পরিপ্রক হইয়াছিল, তাঁহার উক্তির ব্যঞ্জনা এইরুপ বুঝা যাইতেছে! রমেশচন্দ্র ফরাসী ভাষাও ভাল জানিতেন, জামান ভাষায় লিখিত পস্তেকাদি পড়িয়াও রস গ্রহণ করিতে পারিতেন। তাঁহার সাহিত্য সাধনায় এই সকল ভাষাও বিশেষ রসদ জোগাইয়াছিল। রমেশচন্দ্র এই নিবন্ধেই একস্থলে বলিয়াছেন : “Our Education is incomplete unless we learn the great modern languages— English, French and German.” অর্থাৎ ইংরেজী, ফরাসী এবং জামান ভাষা না শিখিলে আমাদের শিক্ষা নিতান্তই অসম্পণে থাকিয়া যায়। অদ্ধশতাব্দী পরেও তাঁহার এই উক্তির যাথাথ আমরা মৰ্ম্মে মৰ্ম্মে অনুভব করিতেছি। রমেশচন্দ্র কৈশোরেই সংস্কৃত অধ্যয়নে রত হইয়াছিলেন। সংস্কৃতের প্রতি তাঁহার স্বাভাবিক অনরোগ ক্রমে বন্ধিত হয়। সিবিল সাবিস পরীক্ষার কালে তিনি বিলাতে বিখ্যাত অধ্যাপক ডক্টর গোল্ডস্টকোরের নিকটে সংস্কৃত সাহিত্য ভাবে অধ্যয়ন করেন। উক্ত পরীক্ষায় তাঁহার যথাক্রমে তৃতীয় ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারের মলে ছিল তাঁহার সংস্কৃত সাহিত্যে অত্যধিক ব্যুৎপত্তি। রমেশচন্দ্র সনিপুণভাবে সংস্কৃত সাহিত্যের মৌলিক সম্পদ ও ঐশ্বয্যের কথা তুলনামলক আলোচনার মাধ্যমে এই রচনাটিতে ব্যক্ত করিয়াছেন। কর্মজীবনের শেষাদ্ধে" তিনি ঋগবেদ এবং সংস্কৃত শাস্ত্রগ্রন্থাদির অনুবাদ ও আলোচনায় যে প্রবত্ত হইয়াছিলেন, তাহার মলেও দেখি তাঁহার স্বাভাবিক সংস্কৃত-প্রীতি। অলপকাল মধ্যেই মধ্যসদন ও বঙ্কিমচন্দ্রের অমর লেখনী পশে ইহা প্রাণবন্ত হইয়া উঠে এবং অতিদ্রত একটি সহজ রপে পরিগ্রহ করে। রমেশচন্দ্র বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাসেও একথা পরিস্কারভাবে আলোচনা করিয়াছেন। তিনি বাঙ্গালার প্রাচীন কবিদের মধ্যে মকুন্দরামকেই শ্রেষ্ঠ আসন দান করেন। কৃত্তিবাস, কাশীরামদাস এবং ভারতচন্দ্রকেও তিনি যথাযোগ্য স্থান দিয়াছেন। ইংরেজী সাহিত্য চচ্চা : রমেশচন্দ্রের সাহিত্য সাধনাকে আমরা প্রধানতঃ দুইভাগে ভাগ করিতে পারি—ইংরেজী ও বাঙ্গালা। বলা বাহুল্য তাঁহার অধিকাংশ রচনাই ইংরেজীতে