পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী বুঝিতে পরিলেন শেষে যবেক সহসা দণ্ডায়মান হইলেন, দুজয়সিংহও দাঁড়াইলেন । যবেক তাঁহার চক্ষর বস্ত্র উন্মোচন করিয়া দিলেন, দতজয়সিংহ বিস্মিত হইয়া চারিদিকে চাহিয়া দেখিতে লাগিলেন। রজনী এক প্রহরের সময় দতজয়সিংহ আপনাকে এক অন্ধকারময় পর্বতগহবরে অপরিচিত । লোক দ্বারা বেটিত দেখিলেন। গহবরে একটী মাত্র দীপ জলিতেছে, সেই দীপালোকে দতেজয়সিংহ আপনার চতুদিকে কেবল অসভ্য ভালজাতীয় লোক দেখিতে পাইলেন। তাহারা পরপরে কি কথা কহিতেছে, দড়জয়সিংহ তাহা বুঝিতে পারিলেন না। তাহারা কখন গহবরের মধ্যে প্রবেশ করিতেছে, পরক্ষণেই বাহিরে যাইতেছে, তাহার কারণও জানিতে পারলেন না। তিনি রাজপত ভাষায় কথা কহিলেন, পাশ্বাস্থ যবেক ভিন্ন কেহ সে কথা বুঝিতে পারিল না। যবেক তাঁহার প্রাণ বাঁচাইয়াছেন, যবেক তাঁহাকে বিশ্রামের জন্য এই গুহায় আনিয়াছেন, যবেক এ পয্যন্ত তাঁহাকে সমানের সহিত ব্যবহার করিয়াছেন, তথাপি দতজয়সিংহ সেই যুবকের দিকে চাহিতে সঙ্কুচিত হইতেছেন কি জন্য? দতজয়সিংহ জানেন না; কিন্তু সেই অন্ধকার গুহা, সেই ভৗলযোদ্ধা, সেই অলপভাষী যুবকের দিকে যত দেখিতে লাগিলেন, তাঁহার মনে সন্দেহ বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। একজন দাস একটী ঝরণা হইতে জল আনিয়া দিল, দুজয়সিংহ তাহাতে হস্তপদ প্রক্ষালন করিলেন। পরে সেই ভূত্য কতকগুলি ফলমল ও আহারীয় সামগ্রী দতজয়সিংহের সম্মুখে স্থাপন করিল। দত্তেজয়সিংহের সন্দেহ দঢ়ীভূত হইল; তিনি ধীরে ধীরে চারিদিকে চাহিলেন, সে যবেক নাই। ঈষৎ কুদ্ধ হইয়া বলিলেন,—আমি সেই রাজপত যুবকের অতিথি হইয়াছি, অতিথির সম্মুখে স্বয়ং আহার পাত্র স্থাপন করা রাজপতের ধৰ্ম্ম । বিবেচনা করি ভীলদিগের মধ্যে থাকিয়া যবেক রাজপতেধৰ্ম্মম বিস্মত হইয়াছেন। এ ককশ বাক্যে কিছুমাত্র বিচলিত না হইয়া ভূত্য স্থিরভাবে উত্তর করিল,—প্রভু রাজপত ধৰ্ম্মম বিস্মত হয়েন নাই, কিন্তু কোন ব্ৰতবশতঃ আপাততঃ চন্দাওয়ৎকুলের সহিত তাঁহার আহার নিষিদ্ধ, এই জন্য এইক্ষণ আসিতে পারেন নাই। দতেজয়সিংহের সন্দেহ দঢ়ীভূত হইল। অসপাট আহার ত্যাগ করিয়া ধীরে ধীরে দণ্ডায়মান হইলেন। ক্ষণেক পর সেই অপরিচিত যবেক পুনরায় দশন দিলেন ও ধীরে ধীরে বলিলেন—আতিথেয় ধৰ্ম্মেম অশক্ত হইয়াছি, তাহার কারণ ভূত্য নিবেদন করিয়াছে; যদি আপনার আহারে রচি না হয়, বিশ্রাম করন ; আপনার বিশ্রামের জন্য শয্যা রচনা করা হইয়াছে। দতজয়সিংহ চারিদিকে চাহিলেন । একে একে বহুসংখ্যক ভীলযোদ্ধা একবার গুহায় প্রবেশ করিতেছে, একবার বাহির হইতেছে। সকলের হস্তে ধনবোণ, সকলে নিস্তব্ধ, সকলে অপরিচিত রাজপত যুবকের দিকে চাহিয়া রহিয়াছে, যেন রাজপতে একটী আজ্ঞা দিলে, একটী ইঙ্গিত করিলে, তাহারা দতজয়সিংহের প্রাণনাশ করিতে প্রস্তুত ! রাজপতে সে ইঙ্গিত করিলেন না। দত্তেজয়সিংহ সাহসী, যুদ্ধ বা বিপদকালে তাঁহার অপেক্ষা সাহসী কেহ ছিল না, কিন্তু এই অপব্ব স্থানে অসংখ্য অসভ্য যোদ্ধাদিগের মধ্যে আপনাকে অসহায় দেখিয়া তাঁহার হৃদয় একবার স্তম্ভিত হইল। তিনি এই পর্বতগহোর মধ্যে একাকী ও নিরস্ত্র, তাঁহার চারিদিকে শত যোদ্ধা বেস্টন করিয়া আছে, সকলে তীক্ষনয়নে অপরিচিত রাজপতের দিকে চাহিতেছে, সকলে নিস্তব্ধ! দতজয়সিংহ সেই অপরিচিত রাজপতের দিকে পুনরায় চাহিলেন, তাঁহার গম্ভীর মুখমণ্ডল ও স্থির নয়ন দেখিয়া তাঁহার উদ্দেশ্য কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। যবেক পুনরায় বলিলেন,—শয্যা রচনা হইয়াছে। যবেক দত্তেজয়সিংহের মিত্র না শত্র, ? যদি শত্র হয়েন, তবে অদ্য বিপদের সময় দতেজয়সিংহের প্রাণ বাঁচাইলেন কেন, শ্রান্তির সময় আপন আবাসস্থলে আহবান করিলেন কেন, ফলমল ও আহারীয় দান করিলেন কেন, এই বহুসংখ্যক ধনদ্ধের ভাল হইতে এখনও তাঁহাকে রক্ষা করিতেছেন কেন ? দজয়সিংহ কিজন্য মিথ্যা সন্দেহ করিতেছেন ? অবশ্যই যবেক কোন বিপদগ্ৰস্ত উন্নতবংশীয় রাজপত হইবেন। সবস্থানচ্যুত হইয়া ভৗলদিগের আশ্রয় লইয়াছেন, আদ্য রাজপত ধৰ্ম্ম অনুসারে দত্তেজয়সিংহের যথেষ্ট উপকার করিয়াছেন, দাঙ্গায়সিংহ কেন তাঁহার প্রতি সন্দেহ করিতেছেন ? 之(3 や