পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী “উত্তরে কমলমীর হইতে ক্ষণে রক্সেনাথ পৰ্য্যন্ত পৰ্বত-প্রদেশমাত্র মহারাণার অধীন; অবশিষ্ট সমস্ত প্রশস্ত ভূমি মোগলের করকবলিত । কিন্তু এই প্রশস্ত ভূমি হইতে মোগলের কোন লাভ নাই; মহারাণার আদেশে এ মোগলের-কবলিত প্রদেশ জনশন্যে অরণ্য। এস্থানে এক্ষণে কৃষক চাষ করে না, গোরক্ষক গোরক্ষা করে না, মনুষ্য বাস করে না। মহারাণার আদেশে এ প্রদেশের সমস্ত অধিবাসী পৰ্বতপ্রদেশের মধ্যে আসিয়া বাস করিতেছে; বনোস ও রবীনদীর তীরে উব্বারা ক্ষেত্ৰচয় এক্ষণে জঙ্গলময় ও হিংস্ৰক পশুর আবাসস্থল হইয়াছে; আরাবলি পৰ্বতের পবেদিকস্থ সমস্ত মেওয়ার-প্রদেশ প্রদীপশন্য। “মহারাণার আদেশ কে লঙ্ঘন করিতে পারে ? মহারাণা স্বয়ং সতত এই প্রদেশ দশন করিতে যান, সালমোৱা সতত মহারাজের সঙ্গে গিয়াছে। সমস্ত প্রদেশে অরণ্যের নিজনতা দশন করিয়াছি, অরণ্যের নিস্তব্ধতা শ্রবণ করিয়াছি, শস্যের স্থানে উচ্চ তৃণক্ষেত্র দশন করিয়াছি, গমনাগমনের পথে কণ্টকময় বাবল ব্যক্ষ ও নিবিড় জঙ্গল দেখিয়াছি, মানবগহে হিংস্ৰক পশুকে বাস করিতে দেখিয়াছি। একজন ছাগরক্ষক বনাস-নদী-তীরে নিভৃতে ছাগরক্ষা করিতেছিল, তু জাহ এখনও বক্ষে লম্ববমান রহিয়াছে ! অন্য কেহ মহারাজের আজ্ঞা লঙ্ঘন করে নাহ I “মোগলগণ বুঝিবে, মেওয়ারের উদ্যানখন্ড এক্ষণে অরণ্য ও অফলপ্রদ। তাহারা জানিবে, মহারাণার সহিত যুদ্ধ করিতে হইলে এক্ষণে অরণ্য পার হইতে হইবে, তথায় মনুষ্য নাই, সৈন্যের খাদ্য নাই, আবাসস্থল নাই । তাহারা আরও জানিবে, সরাট প্রভৃতি পশ্চিমসাগরের বন্দরের সহিত দিল্লীর যে বাণিজ্য ছিল তাহা এক্ষণে নিষিদ্ধ। এক্ষণে অরণ্যের ভিতর দিয়া তথায় যাইতে হইবে, গমনের সময় আমরা সষেপ্তে থাকিব না। “বীরগণ! এইরুপে আমরা মেওয়ারের বহিদ্বার রক্ষা করিয়াছি। পৰ্বত-প্রদেশের ভিতরে প্রতি দগে", প্রতি উপত্যকায় সৈন্য আছে। চন্দাওয়ৎকুল শীঘ্রই মহারাণার নিকট উপস্থিত হইবে, অন্যান্য যোদ্ধাকুল চারিদিক হইতে আসিতেছে, সম্মখে রণের জন্য মহারাণার সৈন্যের অপ্রতুলতা হইবে না, ভূমিয়গণ যুদ্ধ জানে না, তাহারা নিজ নিজ উপত্যকা ও নিজ নিজ আবাসপৰ্বত রক্ষা করিবে। বন্যজাতিগণও ধনবোণ হস্তে যুদ্ধ দান করিবে। দক্ষিণে ভৗলগণ, পবে মীরগণ, পশ্চিমে মীনাগণ, তুকী-দিগকে সমর-উৎসবে আহবান করিবে। শনিয়াছি, মহারাজ মানসিংহ দিল্লীশ্বরের পত্রের সহিত বড় ধামধামে আসিতেছেন, আমরাও তাঁহাকে আহবান করিতে প্রস্তুত আছি। “বীরগণ ! এক্ষণে হোলীর সময় নাগরিকগণ হইতে আপনাদিগেরও পরিত্রাণ নাই, আমারও পরিত্রাণ নাই। আপনাদিগের মস্তকে, বক্ষে, বাহতে, পরিচ্ছদে আবীর দেখিতেছি, দুষ্ট নাগরিকগণ আমারও শক্লেকেশ ও শ্বেতশমশ্র রক্তবর্ণ করিয়া দিয়াছে। প্রাসাদ, কুটীর, পথ, ঘাট, সমস্ত রক্তবর্ণ করিয়া দিয়াছে। আর এক হোলীর দিন আসিতেছে, সে যোদ্ধার প্রকৃত আনন্দের দিন। যোদ্ধার মস্তক ও বক্ষ অন্য প্রকারে রঞ্জিত হইবে, এই পৰ্বত-সঙ্কুল প্রদেশের প্রত্যেক গিরি ও উপত্যকা মনুষ্য-শোণিতে রঞ্জিত হইবে। ঐ নাগরিকদিগের গীত ও বাদ্য শুনিতেছ, সেদিন মেওয়ারের অন্যরাপ বাদ্য হইবে, অন্যরপে গীত গগনে উত্থিত হইবে। সেই আনন্দের দিনের জন্য আমার যোদ্ধাগণ প্রস্তুত হও।” সালমব্রোধিপতির এই উৎসাহ-বাক্যে যোদ্ধাগণ বীরমদে হনকার করিয়া উঠিল, ঝন ঝনাশব্দে কোষ হইতে অসি বহিগতি হইল। সে শব্দ, সে হুঙ্কার, সভামন্দিরে প্রতিধৰনিত হইল, সালমত্রার পর্বতশিখর অতিক্রম করিয়া গগনে উত্থিত হইল। এই উল্লাসরব থামিতে থামিতেই সেই প্রশস্ত সভাগহে উন্নত গীতধননি শ্রত হইল, সালমাত্রার বদ্ধ চারণদেব পবোকালের গীত আরম্ভ করিয়াছেন । গীত। “যোদ্ধাগণ ! আপনারা যবেক, আপনাদিগের দটি ভবিষ্যতের দিকে, আপনাদিগের আশা, উৎসাহ, প্রতিজ্ঞা ভবিষ্যতের দিকে ধাবমান হয়। বদ্ধের দটি অতীতে। সেই অতীতকাল কৃষ্ণবণ মেঘমালার ন্যায় আমার মানসচক্ষ আচ্ছাদন করিতেছে, আমি বহিজগৎ দেখিতেছি না। সেই মেঘমালার মধ্যে অন্য একটী জগৎ দেখিতেছি, অন্য বীর আকৃতি দেখিতেছি, শ্রবণ করন।

  • や家