পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্তু দিল্লীর অসংখ্য সৈন্যের বিরুদ্ধে এ বীরত্ব কি করিবে ? দিল্লীর ভীষণ কামানশ্রেণী হইতে ঘন ঘন মৃত্যুর আদেশ বহির্গত হইতে লাগিল, দলে দলে রাজপতগণ আসিয়া জীবন দান | এই বিঘোর উৎসবে প্রতাপসিংহ পশ্চাতে ছিলেন না। যুদ্ধের প্রারম্ভ হইতে অস্বরাধিপতির দিকে তিনি ধাবমান হইলেন, কিন্তু দিল্লীর অসংখ্য সেনা ভেদ করিয়া তথায় উপস্থিত হইতে পারিলেন না। o তৎপরে প্রতাপসিংহ, সলীম যথায় হস্তি-আরোহণ করিয়া যুদ্ধ করিতেছিলেন, সেইদিকে নিজ অশ্ব ধাবমান করিলেন। এবার ভীষণনাদে রাজপতগণ মোগলসৈন্য বিদীণ করিয়া অগ্রসর হইল। স্তরে স্তরে মোগলসৈন্য সজিত ছিল, কিন্তু বর্ষাকালের পব্বততরঙ্গের ন্যায় সমস্ত প্রতিবন্ধক ভেদ করিয়া প্রতাপসিংহ ও তাঁহার সৈন্যগণ অগ্রসর হইলেন ; বশ ও অসির আঘাতে মোগলদিগের সৈন্যরেখা লন্ডভন্ড করিয়া অগ্রসর হইলেন। সলীম ও প্রতাপসিংহ সম্মুখীন হইলেন। দনইপক্ষের প্রসিদ্ধ যোদ্ধাগণ নিজ নিজ প্রভুর রক্ষাথে অগ্রসর হইলেন। অচিরে যে তুমুল হত্যাকাণ্ড, যে গগনভেদী জয়নাদ ও আত্তনাদ আরম্ভ হইল, তাহা বর্ণনা করা যায় না। রাজপত ও মোগলদিগের বিভিন্নতা রহিল না, শত্র ও মিত্রের বিভিন্নতা রহিল না। দুই পক্ষের পতাকার চারিদিকে শব রাশীকৃত হইল । প্রতাপের অব্যথা খঙ্গাঘাতে সলীমের রক্ষকগণ ভূতলশায়ী হইল। তখন প্রতাপ সলীমকে লক্ষ্য করিয়া দীঘ বশ নিক্ষেপ করিলেন, হাওদার লোঁহে সেই বশ প্রতিরান্ধ হওয়ায় সলীম সেদিন জীবন রক্ষা পাইলেন। রোষে গজন করিয়া প্রতাপ অশ্ব ধাবমান করাইলেন, অশ্ববর চৈতকও প্রতাপের যোগ্য, লম্বফ দিয়া হস্তীর শরীরের উপর সম্মুখের পদ স্থাপন করিল। প্রতাপের অব্যথৰ্ক আঘাতে হস্তীর মাহত হত হইল। হস্তী তখন প্রভুর বিপদ জানিয়াই যেন সলীমকে লইয়া পলায়ন করিল। তুমুল শব্দে দন্দমনীয় প্রতাপসিংহ ও তাঁহার সঙ্গিগণ পশ্চাদ্ধাবন করিলেন, মোগলসৈন্যের শ্রেণী বিদীণ করিয়া ভিতরে প্রবেশ করিলেন। প্রতাপসিংহের সে অসাধারণ বীরত্ব দেখিয়া হিন্দগণ আঙ্গজনির কথা স্মরণ করিল, মুসলমানগণ মহেনত্তের জন্য মনে মনে প্রমাদ গণিল । তখন মুসলমানগণ নিজের বিপদ দেখিয়া ক্ষিপ্তপ্রায় হইল। মুসলমান যোদ্ধগণ ভীর নহে, পঞ্চশত বৎসর ভারতবর্ষ শাসন করিয়াছে, আদ্য হিন্দরে নিকট অবমাননা স্বীকার করিবে না। একবার “আল্লাহ আকবর’ শব্দে আকাশ ও মেদিনী কম্পিত করিয়া প্রতাপকে চারিদিকে বেস্টন করিল। রাজপতগণ পলায়ন জানে না, প্রভুর চারিদিকে হত হইতে লাগিল। শরীরের সপ্তস্থানে আহত হইয়াও প্রতাপ বিপদ জানেন না, তখনও অগ্রসর হইতেছেন। পশ্চাৎ হইতে কয়েকজন রাজপত যোদ্ধা মহারাণার বিপদ দেখিলেন এবং হস্কোরশব্দ করিয়া শিশোদশীয়র পতাকা লইয়া অগ্রসর হইলেন। পতাকা দেখিয়া সৈন্যগণ অগ্রসর হইল, প্রতাপ যে স্থানে যুদ্ধ করিতেছিলেন তথায় রাইয়া উপস্থিত হইল, সবলে প্রভুকে সেই নিশ্চয় মৃত্যু হইতে সরাইয়া আনিল। সে উদ্যমে শত রাজপত প্রাণদান করিল। পুনরায় প্রতাপসিংহ যাদ্ধমদে সংজ্ঞা হারাইয়া মোগলরেখার ভিতর প্রবেশ করিলেন। নরায় তাঁহার রাজচ্ছত্র শত্রবেষ্টিত দেখিয়া রাজপতগণ পশ্চাৎ হইতে অগ্রসর হইয়া সমরোমত্ত বীরকে নিশ্চয় মৃত্যুর কবল হইতে সবলে উদ্ধার করিয়া আনিল। কিন্তু প্রতাপসিংহ অদ্য ক্ষিপ্ত—উন্মত্ত | জ্ঞানশন্য হইয়া তৃতীয়বার মোগলসৈন্যরেখার ভিতর প্রবেশ করিলেন। এবার মোগলগণ ক্ষিপ্তপ্রায় হইল, রোষে হাঙ্কার করিয়া শত শত সেনা প্রতাপকে বেস্টন করিল, প্রতাপের বহির্গমনের পথ রাখিল না। এবার মোগলগণ এই কাফের বীরকে হত করিয়া দিল্লীশ্বরের হৃদয়ের কণ্টকোদ্ধার করিবে, মানসিংহের অবমাননার পরিশোধ দিবে ! পশ্চাতে রাজপতগণ মহারাণার বিপদ দেখিয়া বার বার তাঁহার উদ্ধারের চেষ্টা করিল। কিন্তু মোগলসৈন্য অসংখ্য, রাজপতদিগের প্রধান প্রধান বীর হত হইয়াছে, রাজপতগণ হীনবল হইয়াছে, এবার প্রভুর উদ্ধার অসম্ভব। م বারবার দলে দলে রাজপতগণ প্রভুর উদ্ধার চেষ্টা করিল, দলে দলে কেবল অসংখ্য শত্র 을 O