পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ পরিচ্ছেদ ঃ ভীলপ্রদেশ অহো মোহপ্রায়মেষাং জীবিতং, সাধ জন বিগহিতঞ্চ চরিতং, তথাহি পরষপিশিতোপহারে ধামৰান্ধিঃ, আহারঃ সাধজেন বিগহিতো মধ্যমাংসাদিঃ, শ্রমো ভূগয়া, শাস্ত্রং শিবারতং, উপদেষ্টারঃ কৌষিকা । —কাদশবরী। হলদীঘাটার যুদ্ধ হইয়া গিয়াছে, একদিন অপরাহুে তেজসিংহ একাকী ভীলপ্রদেশের মধ্য দিয়া পথ অতিবাহন করিতেছিলেন। তেজসিংহ যদি নিজ চিন্তায় অভিভূত না থাকিতেন, তবে সেই নিজজন ভৗলপ্রদেশের শোভা সন্দশন করিয়া চমৎকৃত হইতেন। পথের উভয় পাশ্বে নিবিড় কৃষ্ণবণ সহস্র হস্ত উচ্চ প্রাচীরের ন্যায় পৰবৰ্তরাশি উত্থিত হইয়া যেন সেই নিজজন পথকে গোপনে রক্ষা করিতেছে। পর্বতচড়ায় ও পাশ্বদেশে অসংখ্য পব্বত-ব্যক্ষ ও লতা-পাপ বায়হিল্লোলে ক্রীড়া করিতেছে ও অপরাহ্লের স্তিমিত সৰ্য্যোলোকে হাস্য করিতেছে। সে সৰ্য্যোলোক বহরদর-নীচস্থ পৰ্বততলের পথ পর্যন্ত পাহছিতেছে না। তেজসিংহ ৰে পথ দিয়া যাইতেছিলেন, সে পথ অপরাহুেই প্রায় অন্ধকারময়। কোন কোন স্থলে উন্নত পৰ্বতশিখর হইতে সষোলোক প্রতিফলিত হইয়া সেই পথের উপর ঈষৎ আলোক বিতরণ করিতেছিল; অন্য স্থলে সেই বাক্ষাচ্ছাদিত পথ একেবারে অন্ধকারময়। সেই নিজন পথের পাশ্ব দিয়া একটী ক্ষুদ্র পবিতনদী কল কল শব্দে শিলাশষ্যার উপর দিয়া দ্রুতবেগে গমন করিতেছে, যেন পাশ্বাস্থ প্রহরি-স্বরপে উন্নত ও কঠোর পর্বতরাশিকে উপহাস করিয়া কোন ক্রীড়াপট বালিকা হাসিয়া হাসিয়া দৌড়িয়া যাইতেছে। স্থানে স্থানে স্তিমিত দিবালোকে সেই নদীর জল চকমক করিতেছে, অন্য স্থানে সে নদীর গতি কেবল শব্দমাত্রে অনুমেয়। সেই উন্নত পৰ্বতের কঠোর বক্ষ হইতে কোন অলপস্থলেই দেখিতে পাওয়া যায়; একজন আধুনিক ফরাশীস ভ্রমণকারী মুক্তকণ্ঠে স্বীকার ু জাপ মন্ত নাহর স্থল অপেক্ষাও রাজস্থানের ভীলপ্রদেশ সন্দের ও | তেজসিংহ এইরুপ নিজজন পথ একাকী অতিবাহন করিতেছিলেন। পর্বতচড়ার উপর স্থানে স্থানে ভীলদিগের “পাল” অর্থাৎ নিবাসস্থান দক্রট হইতেছে, নীচের পথ হইতে দেখিলে বোধ হয় যেন মনষ্যের আবাস নহে, যেন ঈগল পক্ষী নিজ কঠোর শাবকগুলিকে লালনপালন করিবার জন্য পর্বতচড়ায় কুলায় নিন্মাণ করিয়াছে! প্রত্যেক পালের চতুদিকে বা নীচে অলপমাত্র ভূমি কষিত, সেই ভূমির উৎপন্ন ভৗলদিগের আহারের অবলম্বন, দ্বিতীয় অবলম্বন বংশানগত দস্যতা ! স্থানে স্থানে সেই পৰ্বতচড়ার উপর, সায়ংকালীন গগনে বিন্যস্ত ভয়ানক প্রতিকৃতির ন্যায়, এক এক জন কৃষ্ণবর্ণ শীর্ণকায় কোঁপীনধারী ভীল ধনবোণ-হস্তে দণ্ডায়মান রহিয়াছে, তাহারা এই নিজন পথ ও ভীলপ্রদেশের প্রহরী। তেজসিংহের বীরাকৃতি যদি প্রত্যেক ভৗলের পরিচিত না হইত, তাহা হইলে সেই প্রত্যেক ধনকে শর সংযোজিত হইত। সেই উপত্যকা অতিক্রম করিয়া কতকদরে আসিতে আসিতে তেজসিংহ একটী রমণীয় ও অতি বিস্তীণ হ্রদের কলে উপনীত হইলেন। পবেবৰ্ণিত পাবত-নদী সেই স্বচ্ছ সন্দর পৰ্বত-হুদে আসিয়া মিশিয়াছে। হ্রদের চতুদিকে, যতদরে মনুষ্যনয়নে দন্ট হয়, কেবল পৰ্বতরাশির পর পাবতিরাশি পর্বতবক্ষে আচ্ছাদিত হইয়া সায়ংকালীন গগনে বিস্ময়কর চিত্রের ন্যায় বিন্যস্ত রহিয়াছে। হ্রদের কালে যাইয়া তেজসিংহ একবার সম্মুখে অবলোকন করিলেন, এবং সেই মনোহর প্রকৃতির শোভা দেখিয়া নিজের চিস্তা একবার ভুলিলেন । ν' সায়ংকালের লোহিত আলোকে সেই হ্রদের জলের উপর পতিত হইয়া কি অপৰেৰ শোভা ধারণ করিয়াছে । জলের নিস্তব্ধ বক্ষের উপর চারিদিকের উন্নত পৰ্বতের ছায়া কি সন্দের পতিত । 이