পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাঁহারা অগ্নিশিখা উত্থিত হইতে দেখিলেন; মাতা, বনিতা, ভগিনী ও দহিতাকে চিতায় প্রাণ বিসঙ্গজন করিতে দেখিলেন। তাঁহাদিগের জীবনে আর মায়া রহিল না, জগতে আর আশা রহিল না। তাঁহারা প্রাতঃকালে পবিত্র জলে স্নান করিলেন, দেবদেবীর আরাধনা শেষ করিলেন, পরে নিঃশব্দে শরীরে বম্ম ধারণ করিলেন, তদুপরি রক্তবস্ট পরিধান করিলেন। শিরে উজৰঙ্গ মুকুটের উপর তুলসীপত্র স্থাপন করিলেন, গলদেশে শালগ্রাম ধারণ করিলেন, শেষবার নিঃশব্দে পরস্পরকে আলিঙ্গন করিলেন। জীবন ত্যাগ করিবার পাবে বন্ধ বন্ধকে, ভ্রাতা ভ্রাতাকে, সন্তান পিতাকে, নিঃশব্দে আলিঙ্গন করিলেন। দই তিন দণ্ড বেলা হইয়াছে, এরপে সময় ঝনঝনা শব্দে দগ"দ্বার খলিল। বিস্মিত মুসলমানেরা দেখিল, সেই দ্বার দিয়া সমদ্রতরঙ্গবেগে অল্পসংখ্যক রাজপত বীর আসিয়া সহস্ৰ মুসলমানকে আক্রমণ করিল। সে রাজপত সংখ্যা শীঘ্র নিঃশেষিত হইল, দাগ মোগলের হস্তগত হইল। কিন্তু সেই যুদ্ধে যে মসলমানগণ পরিত্রাণ পাইল, তাহারা সেই দুইশত যোদ্ধার যুদ্ধকথা বিস্মত হইল না। পঞ্চাশৎ বর্ষ পরও দিল্লীর কোন কোন বদ্ধ মোগল নিজ পত্র বা পৌত্রকে ভীমগড় দাগবিজয়ের কথা গল্প করিত, রাঠোরদিগের যুদ্ধকথা গলপ করিত। পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ ঃ বীরত্বে কাতরতা পুরঃসরা ধামবতাং যশোধনাং সদ্যঃসহম্প্রাপ্য নিকারমীদৃশম । ভবান্ধশাশেচদধিকুব্বতে রতিং নিরাশ্রয়া হস্ত হতা মনস্বিতা ৷ —কিরাতাজনীয়ম । যেদিন ভীলদিগের গহবরে মহারাজ্ঞীর সহিত পাপের সাক্ষাৎ হইয়াছিল, সেদিন প্রতাপসিংহ সহসা মোগলসৈন্য আক্রমণ করিয়া বিনাশ করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিন্তু মোগলসৈন্য অসংখ্য, সমস্ত দিনও অদ্ধেক রজনী ব্যথা চেষ্টা করিয়া প্রতাপসিংহ সসৈন্যে পনরায় চাওন্দ দাগে যাইয়া আশ্রয় লইলেন। মোগলসৈন্য ক্রমে ভীমচাঁদ ভৗলের আবাসের দিকে অগ্রসর হইতে লাগিল, মহারাজ্ঞী আর তথায় থাকা উচিত বিবেচনা না করিয়া, সন্তান ও পম্পেকে সঙ্গে লইয়া ভূগৰ্ভস্থ জাউরার খনিতে যাইয়া আশ্রয় লইলেন। ভীমচাঁদের আবাসে প্রতাপসিংহের পরিবারকে না পাইয়া মোগলসৈন্য তথা হইতে চলিয়া গেল, মহারাজ্ঞী তখন জাউরার খনি হইতে বাহির হইয়া চাওন্দদগে স্বামীর নিকট আসিলেন। চাওন্দদাগ রক্ষা করাও দরহে হইয়া উঠিল। সৈন্যের খাদ্য হ্রাস হইয়া আসিতেছে, যাইতেছে। একদিন সন্ধ্যার সময় প্রতাপসিংহ পরামর্শ করিবার জন্য দাগের সমস্ত প্রধান যোদ্ধাদিগকে ডাকাইলেন । প্রতাপসিংহের চারিদিকে কুলপতিগণ বসিয়াছেন, কিন্তু যুদ্ধপাবে যে সমস্ত প্রাচীন যোদ্ধা কমলমীরে প্রতাপকে বেস্টন করিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে কয়জন আছেন ? দৈলওয়ারার ঝালাকুলেশ্বর হত হইয়াছেন, বিজলীর প্রমরকুলপতি হত হইয়াছেন, অন্যান্য প্রাচীন কুলপতি হত হইয়াছেন। প্রতাপ আপনার চারিদিকে নিরীক্ষণ করিলেন, তাঁহার পরাতন সঙ্গী অনেকেই আর নাই। নব নব বালকগণ এক্ষণে কুলপতি হইয়াছেন, পিতার মৃত্যুর পর পত্রগণ যাদ্ধ করিতেছেন, তাঁহারাও মহারাণার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত। প্রতাপ আপনার পাশ্বে চাহিয়া দেখিলেন, পত্রে অমরসিংহ পিতার পাশ্বে বসিয়া আছেন, বাল্যাবস্থা হইতেই পাবতে ও উপত্যকায় বাস করিয়া যাদ্ধব্যবসায় শিখিতেছেন। অমরসিংহ যুদ্ধে পিতার সহযোদ্ধা, বিপদ সত্তকটে ভাগগ্রাহী। অনেকক্ষণ পর পরামশ শেষ হইল, ভূত্যগণ খাদ্য আনিল। বক্ষপত্র বিনিমিত পাত্রে ○○& & Ο