পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সামান্য আহার লইয়া সকলে আহার করিতে বসিলেন, কিন্তু মেওয়ারের গৌরবের দিনে রাজসভায় যে সমস্ত রীতি প্রচলিত ছিল, তাহার কিছুমার লাঘব হয় নাই। - সভার মধ্যে সাহসী ও সম্মানিত যোদ্ধা মহারাণার পাত্র হইতে ফল বা আহারীয় দ্রব্য প্রাপ্ত হইতেন, তাহাকে “দনা” কহিত। প্রতাপসিংহ অদ্য কাহাকে “দনা” দিবেন, স্থির করিবার জন্য চারিদিকে দটি নিক্ষেপ করিলেন। তাহার পাশ্বে পত্র অমরসিংহ বসিয়াছেন, অল্পবয়সেই শত যুদ্ধে বীরত্ব প্রকাশ করিয়াছেন। প্রতাপ তাঁহাকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন,—অমরসিংহ! এই ঘোর বিপদকালে তুমি বীরের শিক্ষা শিখিতেছ, বীরের কাষ্য সাধন করিতেছ! কিন্তু অদ্য অন্য এক যোদ্ধা আমার খাদ্যের ভাগগ্রাহী। কিছ দরে দতেজয়সিংহ ও তেজসিংহকে দেখিয়া বলিলেন,–চন্দাওয়ৎ ও রাঠোর! ধন্য তোমাদের বীরত্ব, ধন্য তোমাদের স্বামিধম্ম । তোমরা উভয়েই আমার জন্য জীবন পণ করিয়াছ, দড়িাইয়া বহল শহরকে তুচ্ছ জ্ঞান করিয়াছ। তোমরা উভয়েই অতুল্য বীর, কিন্তু অদ্য অন্য এক যোদ্ধা আমার খাদ্যের ভাগগ্রাহী। সম্মুখে প্রাচীন যোদ্ধা দেবীসিংহ বসিয়াছিলেন, তাঁহাকে সম্বোধন করিয়া মহারাণা কহিলেন-দেবীসিংহ ! এ কালসমরে তুমি আমার জন্য সব্বস্ব হারাইয়াছ, তোমার বীরত্ব, তোমার স্বামিধমের পুরস্কার কি দিব ? এ কালযুদ্ধে তুমি দাগ হারাইয়াছ, বীর পত্র হারাইয়াছ, পরিবার কুটম্বব সমস্ত হারাইয়াছ, তথাপি খড়াহন্তে পৰ্বতে পব্বতে আমার সঙ্গী হইয়া ফিরিতেছ! প্রতাপসিংহ অনেক ক্লেশ সহ্য করিতে শিখিয়াছে, কিন্তু তোমার ন্যায় স্বামিধমারত যোদ্ধার এ অবস্থা দেখিলে প্রতাপসিংহের পাষাণ হৃদয়ও বিদীণ হয়। বীরকুলচড়ামণি ! তোমার বীরত্বের পুরস্কার দেওয়া মনুষ্যসাধ্য নহে। অদ্য আমার আহারের ভাগগ্রাহী হইয়া আমাকে অনুগ্রহীত কর। মহারাণার এই কথা শুনিয়া বদ্ধ যোদ্ধা সহসা কোন উত্তর করিতে পারিলেন না, বন্ধের নয়ন হইতে একবিন্দ আশ্রম পতিত হইল। অশ্র মোচন করিয়া ঈষৎ কম্পিত স্বরে কহিলেন, —মহারাণা ! কাতরতা চিহ্ন ক্ষমা করুন, ব্যুদ্ধের একবিন্দ আশ্রম ক্ষমা করন। আশা ছিল, এই বদ্ধ বয়সে বৎস চন্দনকে দগভার অপণ করিব, বৎস চন্দনকে আমার পৈতৃক খড়া দিয়া শান্তি লাভ করিব, কিন্তু ভগবান অন্য রপে ঘটাইলেন! ভগবানকে নমস্কার করি, পত্র বীরনাম কলঙ্কিত করে নাই, এ বদ্ধও মহারাণার কাব্যে বীরনাম কলস্তিকত করিবে না। আর কোনও কথাবাত্ত হইল না, যোদ্ধাদিগের নয়ন সিক্ত হইল, বাক্যস্ফীত্তি হইল না। নীরবে ভোজন শেষ হইল, মহারাণা মহিষী ও পরদিগের নিকট যাইলেন। অন্ধকার নিশীথে একটী পৰ্ব"তুগহবরের নিকট অগ্নি জনলিতেছে, রাজশিশুগণ সেই অগ্নির চতুদিকে দৌড়াদৌড়ি করিতেছে, অথবা বিশ্রান্ত হইয়া সেই প্রস্তরের উপর সখে নিদ্রা ষাইতেছে। রাজমহিষী ও পপ রটেী প্রস্তুত করিতেছিলেন, পত্র-কন্যাগণ উঠিয়া খাইবে। প্রতাপসিংহ দরে দণ্ডায়মান হইয়া ক্ষণেক নীরবে এই দশ্যটী দেখিতে লাগিলেন, তাঁহার হৃদয় আজি চিন্তাপণে । দগে সকল একে একে শত্রহেস্তগত হইয়াছে, সৈন্যসংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাইতেছে। প্রতাপসিংহের আর অর্থ নাই, সবল নাই, রাজ্য নাই, রাজধানী নাই, সেই প্রস্তর ভিন্ন মস্তক রাখিবার স্থান নাই, হৃদয়ের কললপত্রদিগকে রাখিবার স্থান নাই। কিন্তু এ সমস্ত ক্লেশ প্রতাপসিংহ তুচ্ছ করিয়াছেন, ইহাতে তাঁহার বীর হৃদয় কাতর হয় নাই। কখন কখন রাজমহিষী কোন পৰ্বতগহবরে খাদ্য প্রস্তুত করিয়াছেন, সহসা শত্রর আগমনে সেই প্রস্তুত খাদ্য ত্যাগ করিয়া দরে পলাইয়াছেন । পুনরায় তথায় খাদ্য প্রস্তুত o পুনরায় তাহা ত্যাগ করিয়া ক্ষুধাত্ত রোরুদ্যমান সস্তান লইয়া পলাইয়াছেন! অবশেষে সেই মেওয়ারে থাকিবার স্থান পান নাই, ভৗলদিগের আশ্রয় গ্রহণ করিয়া ভূগর্ভে ও খনিতে লুকাইয়া ছিলেন, তথায় ভীলগণ তাঁহাকে রক্ষা করিত, ভীলগণ তাঁহাঞ্চে আহার যোগাইত। কিন্তু এ সমস্ত বিপদ প্রতাপ তুচ্ছ করিয়াছেন, ইহাতে তাঁহার বীর হৃদয় কাতর হয় নাই। কখন কখন রজনীতে বামিপাশ্বে রাজমহিষী শয়ন করিয়া আছেন, সহসা রান্নিযোগে ○Oも