পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

هرة লক্ষ্য বিচারের প্রয়াস পাইয়াছি। রমেশচন্দ্রের প্রথম চারিখানি উপন্যাসই ইতিহাসকে ভিত্তি করিয়া। নতন নতেন ব্যক্তির আবিভাব বা চরিত্রের সজেন সত্ত্বেও তিনি মলে ইতিহাসকে কোথাও ক্ষম হইতে দেন নাই। নিজ প্রতিভা ও কল্পনাবলে থাটেনাটি তথ্যগুলি বিকৃত না করিয়াও, এই সকলের সাহায্যে তিনি তাঁহাকে প্রাণবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী করিয়া তুলিয়াছেন। ভারতবষের একটি শতাব্দীর মানবজীবনের বিভিন্ন দিক, সমস্যা, ঘটনা ও ব্যক্তি লইয়া তিনি এই চারিখানি উপন্যাস রচনা করিয়া গিয়াছেন। এই উপন্যাস কখানি সম্বন্ধে ডক্টর শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় একটি মনোজ্ঞ আলোচনা তাঁহার “বঙ্গ সাহিত্যে উপন্যাসের ধারা” শীর্ষক গ্রন্থে প্রকাশ করিয়াছেন। ইহা হইতে কিয়দংশ মাত্র আমরা এখানে উদ্ধত করিলাম: “রমেশচন্দ্রের চারিখানি ঐতিহাসিক উপন্যাসকে স্থলতঃ দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করা যাইতে পারে। প্রথম উপন্যাসদ্বয় বঙ্গবিজেতা ও মাধবী-কঙ্কণ এক শ্রেণীর অন্তগত; শেষের দইখানি উপন্যাস—‘জীবন-প্রভাত’ ও জীবন-সন্ধ্যা'-কে অপর শ্রেণীতে ফেলা যাইতে পারে। এই দুই শ্রেণীর মধ্যে প্রভেদ এই যে, প্রথম শ্রেণীতে কলপনার আধিপত্য; দ্বিতীয় শ্রেণীতে সত্যনিষ্ঠার অধিক প্রাদ্ভাব-কল্পনা ঐতিহাসিক সত্যের অনুগামী হইয়াছে। প্রথম দুইখানি উপন্যাসের বর্ণনীয় বস্তু ও মুখ্য চরিত্রগুলি প্রধানতঃ কালপনিক; কেবল ঐতিহাসিক আবে- টনের মধ্যে সন্নিবিট হইয়াছে বলিয়াই তাহারা ঐতিহাসিক উপন্যাসের পর্য্যায়ভুক্ত হইয়াছে। পরবত্তী উপন্যাসদ্বয় প্রধানতঃ ইতিহাসের সংশয়হীন ভিত্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত ; তাহাদের মধ্যে যে সমস্ত কাল্পনিক বিষয়ের সমাবেশ হইয়াছে, তাহারা কেবল ব্যহত্তর ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির মধ্যে যোগসত্র রচনা করিতেছে; তাহাদের রন্ধুে রন্ধুে যে শান্য স্থানটুকু আছে, তাহাদিগকে রসে ও বণে ভরিয়া তুলিতেছে। অবিসংবাদিত ঐ সত্যের চারিদিকেও কল্পনা-শক্তির ক্রীড়ার যথেষ্ট অবসর আছে। ইতিহাসের শতক অস্থির মধ্যে প্রাণসঞ্চার করিতে হইলে, ঐতিহাসিক বাহ্য ঘটনাকে মানুষের প্রকৃত জীবনের ও হৃদয়াবেগের সহিত সম্মবন্ধযুক্ত করিতে হইলে, এক কথায় ইতিহাসকে মানব-মনের নিগঢ়ে রসলীলার সহিত সম্পকৰ্ণন্বিত করিতে হইলে কল্পনার সাহায্য অপরিহায্য। রমেশচন্দ্রের শেষের দুইখানি উপন্যাসে যে কল্পনার পরিচয় পাই, তাহা মুখ্যতঃ এই জাতীয়। তাহা ঐতিহাসিক সত্যের বিরোধী নহে, অনুগামী; তাহা ইতিহাসকে বিকৃত করে না, কেবল বিসমত-মলিন সত্যের রেখাগুলির উপর উজৰল আলোকপাত করিতে চেস্টা করে মাত্র । সুতরাং ঐতিহাসিক উপন্যাসের ক্ষেত্রে রমেশচন্দ্রের গতি কালপনিকতা হইতে সত্যনিষ্ঠার দিকে; প্রথম উপন্যাসদ্বয়ে যে ইতিহাস অপ্রধান ছিল, শেষের উপন্যাস দইখানিতে তাহা প্রধান হইয়াছে। ইহার কারণ বোধ হয় রমেশচন্দ্রের ঐতিহাসিক জ্ঞানের প্রসার এবং রাজপত ও মহারাষ্ট্র ইতিহাসের বীরত্ব কাহিনীতে একটা প্রবল, প্রচুর রসধারার আবিস্কার......।” (পঃ ৩৬–৩৭)। “...আধুনিক উপন্যাসে ঘটনার ভিড় যতদরে সম্ভব কমাইয়া মানুষকে প্রধান আসন দেওয়া হইয়াছে, এবং তাহার মানসিক বিক্ষোভের চিত্রটি অতি সক্ষম ও ব্যাপক ভাবে আলোচিত হইয়াছে। ঐতিহাসিক উপন্যাসে বাহ্য ঘটনা অনেকটা দন্দোন্ত দস্যর মত আসিয়া পড়িয়া মানুষের কন্ঠনালী চাপিয়া ধরিতেছে, এবং তাহাকে অধিক চিন্তার অবসর না দিয়া তাহার মুখ হইতে তৎক্ষণাৎ একটা জবাব আদায় করিয়া লইতেছে। সেই মহেক্তে হইতে তাহার মানসিক পরিবত্তন বাহ্য পরিবত্তনের সঙ্গে সমাস্তরাল রেখায় চলিতে বাধ্য হইতেছে। আধুনিক উপন্যাসে বহিজগতের এই দোন্দণ্ডি আততায়ীর প্রতাপ অনেকটা ক্ষম হইয়াছে। যে সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাধারণ ঘটনা মানুষের উপর জাল বিস্তার করে, এবং ধীরে ধীরে তাহাকে শতবন্ধনের নাগপাশে জড়াইয়া ফেলে, তাহারা তাহার চিত্তকে অভিভূত না করিয়া আত্মবিশ্লেষণের যথেষ্ট অবসর দেয়; প্রত্যেক পাকটি কেমন করিয়া জড়াইয়া আসিতেছে, এবং মানুষের মন্ম"স্থানে সঙ্গে সঙ্গে কাটিয়া বসিতেছে। ঔপন্যাসিক আমাদিগকে তাহা দেখাইবার সুযোগ পান। এই জন্যই আধনিক উপন্যাসে বিশ্লেষণের প্রাধান্য এরপে সপ্রতিষ্ঠিত। যাঁহারা এই গণের অভাবের জন্য ঐতিহাসিক উপন্যাসের সহিত বিবাদ করিতে চাহেন, তাঁহারা উহার উদ্দেশ্য ও সুবিধাঅসুবিধার কথা বিশেষ রাপে বিবেচনা করেন না। “কিন্তু ঐতিহাসিক উপন্যাস বিশ্লেষণের অভাব অন্য দিক দিয়া পরণ করে। ঘটনাবৈচিত্র্যে, একটা সমগ্র যাগের ব্যাপক বৰ্ণনায়, উচ্চ ভাব ও আদশের বিকাশে ও বীরত্ব কাহিনীর প্রাচুয্যে ইহা মানবকে এমন একটি তৃপ্তি দেয়, এমন একটি বণী-বহল সৌন্দয্যের দ্বার উল্বাটিত