পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংসার প্রথম পরিচ্ছেদ : গরীবের ঘরের দটি মেয়ে বদ্ধমান হইতে কাটোয়া পয্যন্ত যে সন্দর পথ গিয়াছে, সেই পথের অনতিদরে একটি বড় পাকরিণী আছে। অনুমান শত বৎসর পবে কোন ধনবান জমাদার প্রজাদিগের হিতাথ এবং আপনার কাঁত্তি স্থাপনের জন্য সেই সন্দর পাকরিণী খনন করিয়াছিলেন; সেকালে অনেক ধনবান লোকই এরপ হিতকর কায্য করিতেন, তাহার নিদর্শন অদ্যাবধি বঙ্গদেশের অনেক স্থানে দেখিতে পাওয়া যায়। পাকরিণীর চারিদিকে উচ্চ পাড় ঘন তাল গাছে বেষ্টিত, এত ঘন যে দিবাভাগেও পাকরিণীতে ছায়া পড়ে, সন্ধ্যার সময় পাকরিণী প্রায় অন্ধকারপণ হয়। নিকটে কোনও বড় নগর নাই, কেবল একটী সামান্য পল্লী আছে, তাহাতে কয়েক ঘর কায়স্থ, দই চারিঘর ব্রাহ্মণ ও দই চারিঘর কুমার, এক ঘর কামার, ও কতকগুলি সগোপ ও কৈবৰ্ত্ত বাস করে। একখানি মদির দোকান আছে, তাহাতে গ্রামের লোকের সামান্য খাদ্যদ্রব্যাদি যোগায়, এবং তথা হইতে এক ক্রোশ দরে সপ্তাহে দুইবার করিয়া একটী হাট বসে, বস্ত্রাদি আবশ্যক হইলে গ্রামের লোক সেই হাটে যায় ! পকারণীর নাম "তালপক্টর" এবং সেই নাম হইতে মিলকৈও লোকে তালপুকুর গ্রাম বলে । বৈশাখ মাসে একদিন সন্ধ্যার সময় গ্রামের একজন নারী কলস লইয়া সেই পুকুরে গিয়াছিলেন, এবং তাহার সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার দইটী কন্যাও গিয়াছিল। রমণীর বয়স ৩৫ বৎসর হইবে, বড় কন্যাটির বয়স ৯ বৎসর, ছোটটীর বয়স ৪ বৎসর হইবে। সন্ধ্যার সময় সে পদকুর বড় অন্ধকার হইয়াছে এবং সেই অন্ধকারে সেই ভীম বক্ষশ্রেণী আকাশে কৃষ্ণ মেঘের ন্যায় অস্পষ্ট দন্ট হইতেছে। অলপ অলপ বাতাস বহিতেছে ও সেই অন্ধকারময় তালব্যক্ষগুলি সাঁই সাঁই করিয়া শব্দ করিতেছে, নিজনে সে শব্দ শুনিলে সহসা মন স্তম্ভিত হয়।. পাকুরে আর কেহ নাই, রমণী ঘাটে নামিয়া কলসী নামাইলেন, মেয়ে দটীও মার নিকটে দাঁড়াইল। কলস নামাইয়া নারী একবার আকাশের দিকে দটি করিলেন, দিনের পরিশ্রমের পর একবার বিশ্রামসচক দীঘশ্বাস নিক্ষেপ করিলেন। আকাশের অলপ আলোক সেই শ্রান্ত নয়নদ্বয়ে পতিত হইল, সন্ধ্যার বায় সেই পরিশ্রমে ক্লান্ত ঈষৎ বেদযুক্ত ললাট শীতল করিল এবং সেই চিন্তান্বিত মুখ হইতে দই একটী চুলের গচ্ছ উড়াইয়া দিল। নারী দিনের পরিশ্রমের পর একবার আকাশের দিকে চাহিয়া, সেই শীতল বায়পেস্ট হইয়া একটী দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিলেন। পরে “মা বিন্দ, একবার সধাকে ধর ত, আমি একটা ডুব দিয়ে নি।” বিন্দবাসিনী। “মা আমি ডুব দেব।” মাতা। “না মা, এত সন্ধ্যার সময় কি ডুব দেয়, অসংখ করবে যে ” বিন্দ। “না মা, অসংখ করবে না, আমি ডুব দেব।” মাতা। “ছি মা, তুমি সেয়ানা হয়েছ, অমন করে কি বায়না করে ? তুমি জলে নামলে আবার সন্ধা ডুব দিতে চাইবে, ওর আবার অসংখ করবে। সধাকে একবার ধর, আমি এই এলম বলে!” মাতার কথা অনুসারে নবম বৎসরের বালিকা ছোট বোনটীকে কোলে করিয়া ঘাটে বসিল। সন্ধ্যাকালের অন্ধকার সেই ভগিনী দটীকে বেস্টন করিল, সন্ধ্যার সমীরণ সেই অনাথা দরিদ্র বালিকা দটীকে সযত্নে সেবা করিতে লাগিল। জগতে তাহাদের যত্ন করিবার বড় কেহ ছিল না, মাখ তুলিয়া তাহদের পানে চাহে, একট মিন্ট কথা বলিয়া একটা সাত্বনা করে, এরপে লোক বড় কেহ ছিল না। 劇 বিন্দবাসিনীর মাতা কায়েতের মেয়ে, হরিদাস মল্লিক নামক একটী সামান্য অবস্থার লোকের সহিত তাহার বিবাহ হইয়াছিল। তাঁহার ২০। ২৫ বিঘা জমি ছিলু, কিন্তু কায়স্থ বলিয়া আপনি চাষ করিতে পারিতেন না, লোক দিয়া চাষ করাইতেন, লোকের মাহিনা দিয়া জমীদারের খাজনা দিয়া বড় কিছ: থাকিত না; যাহা থাকিত, তাহাতে ঘরের খরচের ভাতটা হইত মাত্র। অনেক 9 ఫిQ