পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংসার উদরপত্তি হয় না, মেয়ে দটীকে মানুষ করা হয় না, ঘরের বেড়া দেওয়া হয় না, বৎসর বৎসর চাল ছাওয়া হয় না। বিন্দর মাতা তখন সেই জীণ কুটীর বিক্রয় করিয়া ভাসরের ঘরে আশ্রয় লইলেন। সে বাড়ীর রন্ধনাদি সমস্ত কায্য তাঁহাকেই করিতে হইত, তিনি বিন্দ ও সন্ধাকে ফেলিয়া বাড়ীর ছেলেদের কোলে করিয়া থাকিতেন, তাহাদের জল আনিতেন, বাসন মাজিতেন, ঘর ঝাট দিতেন। তাহা ভিন্ন আশ্রিত লোকের অনেক লাঞ্ছনা সহ্য করিতে হয়, কিন্তু বিন্দর মাতা কটন কথার উত্তর দিতেন না, তিরস্কারে ক্ষম হইতেন না, কখন কখন তাঁহার মত স্বামীর নিন্দা করিলে বা পিতাকে নাম ধরিয়া গালি দিলে তিনি নীরবে পাকঘরে আসিয়া চক্ষর জল মুছিতেন। ভাবিতেন, “আহা! আমার বিন্দ ও সন্ধা মানুষ হউক, হে বিধাতা, তুমি ওদের কপালে সুখ লিখিও, আমার শরীরে সব সয়, আমি নিজের দুঃখ নিজের অপমান গ্রাহ্য করি না। আহা! যেন বিন্দ ও সন্ধাকে বিবাহ দিয়া উহাদের সখী দেখিয়া মরি, তাহা হইলেই আমার সুখ।” রমণী ডুব দিয়া উঠিয়া, এক কলস জল কাঁকে লইয়া বলিলেন, “আয় মা বিন্দন, ঘরে আয়, সন্ধাকে কোলে নে, আহা বাছার ননীর শরীর এইটুকু এসে ক্লান্ত হইয়াছে। আহা, বাছা যে ছেলেমানষে, হাঁটতে পারবে কেন ? ও কি ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি ?” বিন্দর। “হ্যাঁ মা, ঘুমিয়ে পড়েছে, এই আসি, কোলে করে নিয়ে যাই।” মাতা। “না না, ঘুমিয়ে ভারি হয়েছে, আমার কোলে দে, তুই মা আমার অাঁচল ধরে পথ দেখে দেখে আয়, বড় অন্ধকার হয়েছে, একটা একটা মেঘ হয়েছে, রাল্লিতে বোধ হয় জল হইবে।” বিন্দ। "না মা, আমিই কোলে নি, সে দিন ঘোষেদের বাড়ী থেকে রাত্রিতে সন্ধাকে কোলে করে এনেছিলাম, আর আজ এই ঘাট থেকে ঘরে নে যেতে পারবো না ? ঐ ত রান্না ঘরের আলো দেখা যায় ।” মাতা। "তবে নে বাছা, কিন্তু দেখিস মা, সাবধানে আনিস, বড় অন্ধকার, যেন পড়ে যাসনি। ঐ সেদিন তোর জ্যেঠাইমার মেয়ে উমাতারা রাত্রিবেলা মেলা থেকে আসছিল, পথে পড়ে গিয়েছিল, আহা বাছার কপালটা এতখানি কেটে গিয়েছে।” বিন্দ। "মা, উমাতারা কোন মেলায় গিয়েছিল ? কেমন সন্দের সন্দের পতুল এনেছিল, একটী কাঠের ঘোড়া এনেছিল, আর একটা মাটীর সিংহ এনেছিল, আর একটা কেমন কল এনেছিল, সেটা ঘোরে। সে সব কোথা থেকে এনেছিল মা ?” মাতা । “তা জানিসনি ? ঐ ওরা যে অগ্রদ্বীপের মেলায় গিয়েছিল, সেখানে বছর বছর ভারি মেলা হয়, কত হাজার হাজার লোক যায়, কত বৈষ্ণব খাওয়ান হয়, কত গানবাজনা হয়, কত দেশের লোক সেখানে যায়।” বিন্দর। “মা, তুমি কখনও সেখানে গিয়াছিলে ?” মাতা। "গিয়েছিলাম বাছা, যখন আমি ছোট ছিলাম, একবার আমার বাপমা গিয়েছিলেন, আমরা বাড়ীসদ্ধে গিয়েছিলাম, সেখানে তিন চারিদিন ছিলাম, একটা গাছতলায় বাসা করে ছিলাম।” বিন্দর। “কেন ঘর ছিল না ? গাছতলায় বাসা করেছিলে কেন মা ?” মাতা। “সেখানে কত হাজার হাজার লোক যায়, ঘর কোথায় ? সকলেই গাছতলায় বাসা করে। একটা ভারি অবি বাগান আছে, তাহার নীচে মেলা হয়, কত রাজ্যের দোকানপসারি আসে, কত দেশের জিনিস বিক্ৰী হয়।” বিন্দ। "মা, আমি একবার যাব, আমার বড় দেখতে ইচ্ছা হয়।” মাতা । “আমার কি তেমন কপাল আছে মা যে, তোকে নিয়ে যাব ? কত টাকা খরচ হয়।” বিন্দর। “না মা, আমি আর বৎসর যাব। উমাতারারা দেখেছে, আমি কেন যাব না ?” মাতা। “ছি মা, তুমি সেয়ানা মেয়ে, অমন করে কি বায়না করে ? তোর জ্যেঠাইমারা বড় মানুষ, তাঁহার মেয়ে যেখানে ইচ্ছা বেড়াইতে যায়। তোরা মা গরীবের ঘরের মেয়ে, তোদের কি বাছা বায়না করলে সাজে ? আহা, ভগবান যদি তোদের কপালে সুখ লিখিত, তাহা হইলে কি আর অন্নবসের জন্য তোদের এমন লালায়িত হইতে হয় ? তাহা হইলে কি আমার সোণার পর্তুলেরা যেন পথের কাঙ্গালীর মত দ্বারে স্বারে ফেরে ? হা ভগবান! তোমারই ইচ্ছা!” চারি দিকে নিবিড় অন্ধকার হইয়াছে, পশ্চিম দিকে কাল মেঘ উঠিয়াছে, আকাশ হইতে এক లి Rసి,