পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংসার করিবার ইচ্ছা থাকে, দরিদ্রের সহিত যদি সহানুভূতি একটা কম থাকে, তাহা মাজনীয়। দই একটী দোষ অনুসন্ধান করিয়া আমরা যেন নিন্দাপরায়ণ না হই; আমাদের মধ্যে কাহার সেরাপ দুই একটী দোষ নাই ? ķu বিন্দর সরলস্বভাব জ্যেঠাইমা বিন্দর বিবাহের জন্য বিশেষ যত্ন করেন নাই, কাহারও জন্য বিশেষ যত্ন করা তাঁহার অভ্যাস ছিল না, কিন্তু বিন্দর একটী সম্প্রবন্ধ হওয়াতে তিনি প্রকৃতই আহমাদিত হইলেন। তিনি শুভ দিন দেখিয়া হেমচন্দুের সহিত বিন্দর বিবাহ দিলেন, এবং পাড়াপড়শী মেয়েরা যখন বাটীতে আসিল, তখন সেই তাবিজ-বিভূষিত বাহ সঞ্চালন করিয়া বলিলেন, “আহা, আমার উমাতারাও যে, বিন্দও সে, আমি বিন্দর বিবাহ না দিলে কে দেয় বল, বিন্দরে মার ত ঐ দশা, বাপও সিকি পয়সা রেখে যায়নি, আমি না করলে কে করে বল!” ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। পড়শীগণও, “তুমি বলে করলে, নৈলে কি অন্যে অতটা করে?” এইরুপ অনেক যশোগান ও নিঃস্বাথতার প্রশংসা করিয়া ঘরে গেল। তখন সাধার বয়স পাঁচ বৎসর মাত্র, কিন্তু সাধার মার বড় ইচ্ছা সাধারও বিবাহ দিয়া যান। হেমচন্দ্র অনেক আপত্তি করিলেন, অনেক মিনতি করিলেন, সন্ধাকে আপন ঘরে রাখিয়া একট বাঙ্গালা শিখাইয়া পরে ১o । ১২ বৎসরের সময় নিজ ব্যয়ে বিবাহ দিবার অঙ্গীকার করিলেন, কিন্তু সন্ধার মা কিছতেই শুনিলেন না। তিনি বলিলেন, "বাছা, সন্ধার বিয়ে না দিয়ে যদি মরি, তবে আমার জীবনের সাধ মিটবে না।” হেমচন্দ্র কি করেন, অগত্যা সম্মত হইয়া সন্ধাকে একটী সামান্য অবস্থার শিক্ষিত যাবার সহিত বিবাহ দিলেন। বিন্দরে মাতা স্বামীর মৃত্যুর পর তখন প্রথমে আপনাকে একটা সখী মনে করিলেন। দই বিবাহিতা কন্যাকে ক্রোড়ে লইয়া আপনাকে জগতের মধ্যে ভাগ্যবতী মনে করিলেন। তিনি তখনও তারিণীবাবরে বাটীতে রহিলেন। সাধার বিবাহের কয়েক মাস পরেই তিনি জীবনলীলা সম্ববরণ করিলেন। আর একটী কথা আমাদিগের বলিবার আছে। পঞ্চম বৎসরের সন্ধা বিবাহিতা সত্ৰী হইল, সপ্তম বৎসরে বিধবা হইল! সন্ধা সত্ৰী কাহাকে বলে জানে না, বিধবা কাহাকে বলে, তাহাও জানে না। জ্যোঠা ভগিনীর বাটীতে আসিয়া সাত বৎসরের প্রফুল্লা বালিকা ঘোমটা খুলিয়া ফেলিয়া আনন্দে পর্তুল খেলা করিতে লাগিল। তৃতীয় পরিচ্ছেদ ঃ সংসারের কথা প্রায় দ্বিপ্রহর রাত্রি হইয়াছে। চন্দ্রের নিম্মল শীতল কিরণে সন্দের তালপুকুর গ্রাম সপ্ত রহিয়াছে। বড় বড় তালব্যক্ষসার আকাশপটে অন্ধকারময় ও বিস্ময়কর ছবির ন্যায় বিন্যস্ত রহিয়াছে। গ্রামের চারিদিকে প্রচুর ও সন্দের বাঁশঝাড়ের সচিক্কণ পত্রের উপর সপ্ত চন্দ্রকিরণ রহিয়াছে, পঙ্কেরিণীর ঈষৎ কম্পমান জলের উপর চন্দ্রালোকে সন্দের খেলা করিতেছে, গহস্থের প্রাঙ্গণে, প্রাচীরে ও তৃণাচ্ছাদিত ঘরের চালের উপর সেই সন্দের আলোক যেন রপোর চাদর বিছাইয়া দিয়াছে। সমস্ত সপ্ত গ্রামের উপর চাঁদের আলোক যেন যাই ফলের ন্যায় ফুটিয়া রহিয়াছে। গহন্থগণ অনেকেই খাওয়াদাওয়া করিয়া কবাট বন্ধ করিয়া শয়ন করিয়াছেন, কেবল কোথাও কোথাও কোন নিদ্রাহীন বদ্ধ বাহিরের প্রাঙ্গণে বসিয়া এখনও ধর্ম পান করিতেছেন, আর কোথাও বা অল্পবয়স্কা গহস্থবধ এখনও বাটীর পাশ্বের পুকুরে বাসন মাজিতেছেন, সংসারের কাজ এখনও শেষ হয় নাই। নৈশবায় ধীরে ধীরে বহিয়া যাইতেছে, আর দরে হইতে কোন প্রফুল্লমনা কৃষকের গান সেই বায়র সঙ্গে সঙ্গে শনা যাইতেছে। বিন্দ সংসারকাষ" শেষ করিয়া, এখনও স্বামী আসেন নাই বলিয়া উদ্বিগ্ন মনে সেই শুইবার ঘরের রকে বসিয়া রহিয়াছেন, নিৰ্ম্মল চন্দ্রকিরণ তাঁহার শত্রবসন ও শাস্ত নয়নের উপর পড়িয়াছে। সন্ধা আজ শাইতে যাইবে না, হেমচন্দ্রকে সন্ন্যাসী সাজাইবে স্থির করিয়াছে, কিন্তু বালিকা ভগিনীর পাশ্বে সেই রকে একটু শইবামাত্র ঘুমাইয়া পড়িল, তাহার কুসমরঞ্জিত পাট তাহার অচিলেই রহিল। নিদ্রাতেও সে সন্দের পরিপক্ক বিম্বফলের ন্যায় ওঠ দটী ಶ್ಗচ, বোধ হয় বালিকা এই সন্দের সশীতল রজনীতে কোনও সখের স্বপ্ন ! ලා ෆෙ