পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রান্ত্রি দেড় প্রহরের পর তারিণীৰাব হেমচন্দ্রের অনেক প্রশংসা করিয়া এবং তাঁহাকে সম্বর বন্ধমানে একটী চাকরী করিয়া দিবেন প্রতিজ্ঞা করিয়া এবং তিনি কালে একজন ধনী, জ্ঞানী, মানী, দেশের বড় লোক হইবেন আশ্বাস দিয়া হেমচন্দ্রকে বিদায় দিলেন। হেমচন্দ্রও স্বশর মহাশয়ের ভদ্রাচরণের অনেক স্তুতিবাদ করিয়া বাড়ী আসিলেন। আমাদিগের লিখিতে লজা হয়, তারিণীবাব ও হেমচলের এই প্রচুর মিস্টালাপ ও স্তুতিবাদ তাঁহাদের পরপরের হৃদয়ের প্রকৃত ভাব ব্যক্ত করে নাই। হেমচন্দ্র বাড়ী আসিবার সময় মনে মনে ভাবিতেছিলেন, “শাইলককে পণের অলপ অংশ পরিত্যাগ করান যায়, কিন্তু ধনী, মানী, বিষয়ী, বদ্ধমানের প্রসিদ্ধ কর্মচারী তারিণীবাবর পণ বিচলিত হয় না।” তারিণীবাবও তাঁহার গহিণীর পাশ্বে শয়ন করিয়া গহিণীকে বলিতেছিলেন, “আজকাল কলেজের ছেলেগলো কি হারামজাদা; আর হেমই বা কি গোঁয়ার; বলে কি না জ্যাঠাশ্বশুরের সঙ্গে মকদ্দমা করবো! বলতেও লজা বোধ হয় না। শীঘ্র অধঃপাতে যাবে।” গৃহিণী এ কথাগুলি বড় শুনিলেন না, তিনি ধনবান কুটবের কথা স্বপ্ন দেখিতেছিলেন। সপ্তম পরিচ্ছেদ ঃ বাল্যকালের বন্ধ রাত্রি প্রায় দেড় প্রহরের সময় হেমচন্দ্র বাটী আসিয়া দেখিলেন, বিন্দ তাঁহার জন্য উৎসকে হইয়া পথ চাহিয়া দাঁড়াইয়া আছেন। হেমকে দেখিবা মাত্র সে শাস্ত মুখখানি ফক্তিপণ" হইল, নয়ন দটীতে একটা হাসি দেখা দিল, হেমের মাখের দিকে সস্নেহে চাহিয়া বিন্দ “কি ভাগগি তুমি এতক্ষণে এলে; আমি মনে করলেম বুঝি বাড়ীর পথ ভুলে গেছ বা উমাতারার কথা ঠেলতে পারলে না, আজ জ্যেঠা মশাইয়ের বাড়ী থেকে বুঝি আসতে পারলে না। হেম । কেন বল দেখি, এত ঠাট্টা কেন! অধিক রাত্রি হয়েছে নাকি ? বিন্দর আবার হাসিয়া বলিলেন, “না, এই কেবল দপের রাত্রি! সন্ধ্যা থেকে তোমার একজন বন্ধ অপেক্ষা করছেন।” হেম । কে ? কে ? কে ? “এই দেখবে এস না”, এই বলিয়া বিন্দ আগে আগে গেলেন, হেম পশ্চাৎ পশ্চাৎ গেলেন। বাড়ীর ভিতর যাইবা মাত্র একজন গৌরবণ যবো পর্ষ উঠিয়া তাঁহার দিকে অগ্রসর হইলেন; হেমচন্দ্র ক্ষণেক তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন না, বিন্দর তাহা দেখিয়া মাচকে মাচকে হাসিতে লাগিলেন। ক্ষণেক পর হেম বলিলেন, “এ কি শরৎ ! তুমি কলকেতা হতে কবে এলে ? উঃ, তুমি কি বদলে গেছ; আমি তোমাকে তোমার দিদি কালীতারার বিবাহের সময় দেখেছিলেম, তখন তুমি বদ্ধমানে পড়তে, একবার বাড়ী এসেছিলে; তখন তুমি সাত আট বৎসরের বালক ছিলে মাত্র। এখন বলিষ্ঠ দীর্ঘকায় যবেক হয়েছ, তোমার দাড়ী গোপ হয়েছে; তোমাকে কি সহসা চেনা যায় ?” শরৎ । নয় বৎসরে অনেক পরিবত্তন হয়, তার সন্দেহ কি ? দিদির বিবাহের পরেই বাবার মৃত্যু হল, তার পর মাও গ্রাম হতে বদ্ধমানে গিয়ে রইলেন, সেই জন্য আর বাড়ী আসা হয়নি। আমি এস্ট্রেস পাস করলে পর বদ্ধমান হতে কলকেতায় গেলেম, মাও বদ্ধমানের বাড়ী ছেড়ে দিয়ে পনরায় গ্রামে এসে রয়েছেন, তাই আমাদের গ্রীমের ছটীতে বাড়ী এলেম। নয় বৎসর পর আপনি আমাতে পরিবত্তন দেখবেন, তাতে বিস্ময় কি ? আমিই তখন কি দেখেছি, আর এখন কি দেখছি! বিন্দদিদি আমার চেয়ে দুই বৎসরের বড়, আমরা ছেলেবেলায় সব্বদা একত্রে খেলা করতেম, আমি মল্লিকদের বাড়ী ষেতেম, অথবা বিন্দরদিদি সন্ধাকে কোলে করে আমাদের বাড়ী দেখতে আসতেন, পেয়ারা তলায় সন্ধাকে রেখে অাঁকসি দিয়ে পেয়ারা পেড়ে খেতেন; আজ কিনা বিন্দ দিদি সংসারে গহিণী, দই ছেলের মা ! বিন্দ হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “তুমি আর বলো না, তোমার দৌরাত্ম্যে তালপাকুরের অীব বাগানে অবি থাকত না। এখন কলকেতায় গিয়ে লেখাপড়া শিখে তুমি কলেজের ছেলেদের মধ্যে নাকি একজন প্রধান ছাত্র হয়েছ। তখন গেছোদের মধ্যে একজন প্রধান গেছো ছিলে! ○8>