পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী বলবে ? তার ঘর করছে কে? সংসার চালিয়ে নিচ্ছে কে ? আমি না থাকলে সে কোন চুলোয় যেত ? বলবে প্রাণে ভয় নেই ইত্যাদি। বিন্দ আর একবার হাস্য সম্বরণ করিয়া একটা তীব্র স্বরে বলিলেন— তবে তুই শধ্যে শধে সকাল বেলা চখের জল ফেলছিস কেন বল ত ? তোর হয়েছে কি ? স-প। দিদি কিছু হয়নি, তবে ঘোষেদের বাড়ী আজ সকালে শুনন, উহাহো । বিন্দর। নে, তোর নেকাম করতে হয় কর বোন, আমি আর দাঁড়াতে পারিনি, আমার বাসন সব মাজতে পড়ে রয়েছে, উন্ন ধরাতে হবে, এখনই ছেলে দটী উঠলেই দুধ চাইবে । এইরুপে কথা হইতে হইতে সন্ধা প্রাতঃকালের প্রস্ফুটিত পন্মের ন্যায় ঈষৎ রঞ্জিত বদনে, চক্ষ দটী মছিতে মুছিতে শয়নঘর হইতে আসিয়া দাঁড়াইল। বিন্দ বলিলেন— এই যে সন্ধা উঠেছে, এত সকালে যে ? সন্ধা । দিদি, আজ খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল। একটা বড় মজার স্বপ্ন দেখলেম, সে জন্য ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিন্দ। কি স্বপ্ন ? সন্ধা। বোধ হল যেন আমরা ছেলেবেলার মত আবার শরৎবাবর বাড়ী পেয়ারা খেতে গেছি। যেন তুমি পেড়ে পেড়ে খাচ্ছ, আর শরৎবাব আমাকে কোলে করে পেয়ারা পেড়ে দিচ্ছেন, এমন সময় হঠাৎ পা ফসকে পড়ে গেলেন, আমিও পড়ে গেলেম । উঃ ! এমনি লেগেছে। বিন্দন। সে কি লো : স্বপ্নে পড়ে গেলে কি লাগে ? সন্ধা। হ্যাঁ দিদি, বোধ হল যেন বড় লেগেছে, শরৎবাব যেন গাছতলায় সেই গত্তাটাতে পড়ে গেলেন । বিন্দ হাসিয়া বলিলেন,—আহা! এমন দুরবস্থা। আজ শরৎবাব এলে তাঁর পায়ে ব্যথা হয়েছে কি না জিজ্ঞেসা করব এখন ! পাটা ভেঙ্গে যায়নি ত ? সন্ধা। না দিদি, ভেঙ্গে যায়নি। বিন্দর। তুমি কেমন করে জানলে ? সন্ধা। আবার যে তখনই উঠে আমাকে নিয়ে পেয়ারা পাড়তে লাগলেন। বিন্দ উচ্চ হাস্য সম্বরণ করিতে পারিলেন না; বলিলেন, সাবাস ছেলে বাবা! আজ তাঁকে তাঁর গণের কথা বলবে এখন। হাস্য সম্বরণ করিয়া পরে বলিলেন,—সন্ধা, কৈবত্ত দিদি তোর জন্য আজ চিনিপাতা দৈ এনেছে, ভাতের সঙ্গে খাবে এখন। দৈখানা শিকেয় ঝুলিয়ে রেখে এস ত বোন । আমি উন্ন ধরাই গে, এখনই ছেলেরা উঠবে। বালিকা মাথার কেশগুলি নাচাইতে নাচাইতে দৈ লইয়া গেল, দৈ শিকের উপর তুলিয়া রাখিয়া প্রফুল্ল হৃদয়ে হাস্য বদনে ঘাটের দিকে ছটিয়া গেল। বিন্দও রান্নাঘরের দিকে যাবার উদ্যোগ করিতেছে, এমন সময় কৈবত্তপত্নী আর একবার চক্ষর জল অপনয়ন করিয়া, একবার গলা সাড়া দিয়া, গলাটা পরিকার করিয়া জিজ্ঞাসা করিল—বলি দিদিঠাকরণ কথাটা কি সাত্য ? বিন্দ। কি কথা লো ? স-প। ঐ যা শনেন । বিন্দ। কি শনলি রে ? স-প। তবে বঝি সত্যি ? আহা, এতদিন পরে এই কি কপালে ছিল ! আহা, সন্ধাদিদির কচি মুখখানি একদিন না দেখলে বকে ফেটে যায়! এবার অবারিত ক্ৰন্দনের রোল উঠিল, কৈবত্ত-সন্দেরী সেই বিশাল কৃষ্ণ শরীরখানি যাহা সনাতন সভয়ে দস্টি করিতেন ও সশঙ্কচিত্তে পজা করিতেন—সেই শরীরখানি ক্রদনের বেগে কপিত হইতে লাগিল। গহে হেমচন্দ্র নিদ্রিত ছিলেন, তিনি ঈষৎ ভূমিকম্প বোধ করিয়াছিলেন কি না, জানি না, কিন্তু কৈবত্ত-সন্দেরীর তারস্বর যখন তাঁহার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল, তখন নিদ্রা অসম্ভব। তিনি শীঘ্ৰ গাত্রোথান করিয়া উচ্চস্বরে কহিলেন, “বাড়ীতে কাঁদছে কে গা ?" এই বলিয়া হেমচন্দ্র ঘর হইতে বাহিরে আসিলেন। বিন্দকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, "সকাল বেলায় বাড়ীতে কাঁদছে কে গা ?” ළුද්:8