পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী কালে বাছা শরৎ একজন বিদ্বান ও মাননীয় লোক হইবেন, কেবল সেই আশায় তাঁহার জীবনের গ্রন্থি এখনও শিথিল হয় নাই। হেমচন্দ্র, বিন্দ ও সন্ধাকে আশীব্বাদ করিয়া বাদ্ধা বলিলেন, “যাও বাছা, ভগবান তোমাদের কল্যাণ করন, তোমরা মানুষ হও, বাছা শরৎ মানুষ হক, এইটী চক্ষে দেখে যাই, আমার এ বয়সে আর কোনও বাঞ্ছা নেই। দেখিস বাছা শরৎ, এদের খাওয়াদাওয়ার কোনও কষ্ট না হয়, বিন্দর দটী ছেলের যেন কট না হয়, বাছা সন্ধা কচি মেয়ে, ওর যেন কোন কস্ট না হয়।” o সন্ধার কথা কহিতে কহিতে বাদ্ধার নয়ন হইতে ঝর ঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল, বাদ্ধা বৈধব্যযন্ত্রণা জানিতেন, এই জ্ঞানশন্য অলপবয়স্কা বালিকাকে ভগবান কেন সে যন্ত্রণা দিলেন ? অন্যান্য কথাবাত্তার পর শরতের মাতা বিন্দ ও সন্ধাকে অনেক সদ্যপদেশ দিলেন, হেমকে কলিকাতায় যাইয়া সাবধানে থাকিতে বলিলেন, শরৎকে মনোযোগ পাবক লেখাপড়া করিতে বলিলেন। অবশেষে বাদ্ধা সকলকে পনরায় আশীব্বাদ করিলেন, সকলে বাদ্ধার পদধলি মাথায় লইয়া বিদায় লইলেন। শরৎও মাতাকে প্রণাম করিয়া বলিলেন, “মা, তোমার কথাগুলি আমি মনে রাখবে, যত্নে পালন করব, যে দিন তোমার কথার অবাধ্য হব, সেদিন যেন আমার জীবন শেষ হয় ।” সকলে চলিয়া গেলেন, বাদ্ধা সজলনয়নে অনেকক্ষণ অবধি সেই পথ চাহিয়া রহিলেন, শেষে শন্যহৃদয়ে সে পথ পানে চাহিয়া শান্য গহে প্রবেশ করিলেন। হেম বাটী আসিয়া দেখিলেন, সনাতন কৈবত্ত আসিয়াছে। বিন্দর গ্রাম হইতে যাইবার পাবে আপন জমিখানি তাহাকে ভাগে দিয়াছিলেন, কৃতজ্ঞ সনাতন সজলনয়নে বাবকে আর একবার দেখিতে আসিয়াছিল। সনাতনের সঙ্গে সনাতনের পত্নীও আসিয়াছিল, সে আর একখানি চিনিপাতা দৈ আনিয়াছিল! বিন্দ অনেক বারণ করিল, কিন্তু কৈবত্ত-পত্নী তাহা শুনিল না, বলিল, “গাড়ীতে যদি জায়গা না হয়, আমি হাতে বদ্ধমান স্টেশন পৰ্য্যস্ত দিয়ে আসব।” সতরাং সন্ধা গাড়ীতে চাপিয়া সেই দৈ কোলে করিয়া লইল । গাড়ীর ভিতর বিন্দ ও সন্ধা দই ছেলেকে নিয়া উঠিলেন, শরৎ ও হেম হাঁটিয়া যাইতেই পছন্দ করিলেন। গরুর গাড়ী বড় আস্তে আস্তে যায় প্রাতঃকালে গ্রাম ত্যাগ করিয়াও বেলা দই প্রহরের সময় বদ্ধমানে পাহছিল। স্টেশনের নিকট একটী দোকানে গিয়া সকলে উঠিলেন, এবং তথায় রাধাবাড়া করিয়া শীঘ্ন শীঘ্র খাওয়াদাওয়া করিয়া লইলেন। বদ্ধমানের স্টেশনের কাছে বড় সন্দের খাজা ও সীতাভোগ পাওয়া যায়, শরৎবাব তাহার কিছু কিছু সংগ্ৰহ করিলেন, এবং তাহা দিয়া সন্ধা শেষবার তালপুকুরের চিনিপাতা দৈ খাইয়া লইলেন । বেলা দুইটার পর গাড়ী ছাড়ে, দুইটা না বাজিতে বাজিতে স্টেশন লোকে পণ্য হইল। হেম অনেকদিন রেলওয়ে স্টেশনে আসেন নাই; অতিশয় ঔৎসুক্যের সহিত সেই লোকের সমাগম দেখিতে লাগিলেন। নানা দেশ হইতে নানা উদ্দেশ্যে নানা প্রকার লোক স্টেশনে জড় হইতেছে, দেখিয়া হেমের মনে একটী অচিন্তনীয় ভাব উদয় হইল। দরে মাড়ওয়ার ও বিকানীর প্রদেশ হইতে বড় বড় গঠিরী লইয়া বণিকগণ কলিকাতায় বাণিজ্যাথে আসিতেছে ; ইহারাই ভারতবষের প্রকৃত বণিক সম্প্রদায়, ভারতবষের সকল প্রদেশেই এই অল্পব্যয়ী, বহনকটসহ, বহরপথগামী, কঠোরজীবী জাতির সমাগম ও বাণিজ্য আছে। আরা প্রভৃতি জেলা হইতে সবলশরীর বহশ্রমী কিন্তু দরিদ্র বিহারিগণ চাকরীর জন্য কলিকাতাভিমুখে গমন করিতেছে। কাশী, প্রয়াগ প্রভৃতি তাঁথা হইতে বাঙ্গালী নারী পত্র বন্ধদুদিগের সহিত বাড়ী ফিরিয়া আসিতেছেন : বাঙ্গালী নারী সহজে দৰবালা ও গাহপ্রিয়, তীথ করাই তাঁহাদিগের দেশভ্রমণের একমাত্র উপায়, তাঁথা করিবার জন্য তাঁহারা কট তুচ্ছ করিয়া মথরো, বন্দাবন ও পকের তীর্থ পৰ্য্যন্ত ভ্রমণ করিয়া আইসেন। বালকগণ ছুটির পর পুনরায় কলিকাতায় অধ্যয়ন করিতে আসিতেছে, যবেকগণ নানা স্বপ্নসম আকাংক্ষা বা উদ্দেশ্য বা উচ্চাভিলাষে আকৃষ্ট হইয়া সেই মহানগরীর দিকে আসিতেছেন। আশা তাহাদিগের সম্মুখে নানারপে চিত্র অঙ্কিত করিতেছে, যবেকগণ সেই কুহকে ভুলিয়া উৎসাহপাণ হৃদয়ে কাৰ্য্যক্ষেত্রে প্রবেশ করিতেছেন। কলিকাতাবাসী কেহ কেহ বিদেশ হইতে চাকরী করিয়া ফিরিয়া আসিতেছেনু, অনেক দিন পর পত্রকলত্রের মুখ দশন করিয়া প্রীতিলাভ করিবেন। কেহ বা প্রণয়িনীর সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য, কেহ বা মমষ আত্মীয় বন্ধকে একবার দেখিবার জন্য, কেহ ধন, মান, পদ বা যশোলিসায়, কেহ বা ○○ミ