পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংগার জীবনের সারাহ্নে কেবল গঙ্গাতীরে বাস করিবার জন্য, সকলেই নানা উদ্দেশ্যে এই বিস্তীর্ণ কাৰ্য্যক্ষেত্রের দিকে ধাবমান হইতেছে। এই রাজধানী কামদেবীর একটী প্রধান মন্দির, হেমচন্দ্র সেই মন্দির-আগমন-পথে অসংখ্য যাত্রী দেখিতে লাগিলেন। দুইটার পর গাড়ী ছাড়িল, পাঁচটার পর গাড়ী কলিকাতায় আসিয়া পাহছিল। শরৎ একখানি গাড়ী ভাড়া করিলেন, এবং সকলেই গাড়ীতে উঠিয়া ভবানীপর শরতের বাটী অভিমখে যাইতে লাগিলেন। হুগলীর পোলের উপর হইতে বিন্দ বিশাল গঙ্গাবক্ষে গহতুল্য অসংখ্য অর্ণবপোত ও তাহার মাস্কুলের অরণ্য দেখিয়া বিস্মিত হইলেন, এবং অপর পাশ্বে কলিকাতার ঘাট ও হল্ম্যাদি দেখিয়া পলকিত হইলেন। গাড়ী বড়বাজার ও চিনাবাজারের ভিতর দিয়া চলিল, তথায় শরতের কিছ কাপড়চোপড় কিনিতে ছিল, তাহাতে কিছ বিলম্ব হইল। বিন্দ ও সন্ধা কখনও তালপুকুর হইতে বাহিরে যান নাই, ভারতবষের মধ্যে এই প্রধান জনাকীর্ণ স্থান দেখিয়া তাহারা অধিকতর বিস্মিত হইলেন। রাস্তার উভয় পাশ্বে দোকান, কোন কোন স্থানে সর সর গলীর উভয় পাশ্বে দ্বিতল বা ত্রিতল দোকানে পথ প্রায় অন্ধকার করিয়াছে। কত দেশের কত প্রকার বসত্ৰাদি রাশি রাশি হইয়া সজিত রহিয়াছে, বিলাতী থান, দেশী কাপড়, বারাণসী সাটী, ববের কাপড়, মসলীপত্তনের ছিট, ফ্রান্সের সাটীন বস্ত্রাদি, ইউরোপের নানা স্থানের গালিচা, চাদর, ছিট, পরদা ও সহস্র প্রকার ভিন্ন ভিন্ন কাপড়। মণিমুক্তার দোকানে মণিমুক্তা সজিত রহিয়াছে, খেলানার দোকানে রাশি রাশি খেলানা, সারি সারি খাবারের দোকানে এখনও মিস্টান্ন প্রস্তুত হইতেছে, পুস্তকের দোকানে পাস্তকশ্রেণী। শিল, যাহা একখানি কিনিলে গহেস্থের তিন পরষে যায়, তাহাই বিন্দ রাশি রাশি দেখিলেন, লোহার কড়া, বেড়ী, ঝাঁঝরি প্রভৃতি দ্রব্যতে দোকান পরিপণ", পিত্তল ও কাঁসার দ্রব্যে কোথাও চক্ষ ঝলসাইয়া ষাইতেছে। কাঁচের দোকানে ঝাড়, লন্ঠন, পাত্র, গেলাস, খেলানা, লেম্প প্রভৃতি সন্দেররাপে সজিত রহিয়াছে, কাঠদ্রব্যের দোকানে ছাতারগণ দ্রব্যাদি পালিস করিতেছে, ছবির দোকানে কড়িকাঠ ও দেয়াল ছবিপণ, দোকানে বিন্দ ও সন্ধা কত প্রকার দ্রব্য দেখিলেন, তাহা সংখ্যা করিতে পারিলেন না। পথ জনাকীর্ণ, গাড়ীর ভিড়ে গাড়ী চলিতে পারে না, মনতুষ্যের ভিড়ে মনুষ্য অগ্রপশ্চাৎ দেখিতে পায় না, চারিদিকে লোকের শব্দ, গাড়ীর শব্দ, খরিদদারদিগের কথা, বিক্রেতাদিগের চীৎকারধৰনি ! বিন্দ মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন, এ কি বিশাল মনষ্যেসমুদ্ৰ ! এত লোক কি করে, কোথা হইতে আইসে, এত দ্রব্য কে ক্রয় করে, কোথায় চলিয়া যায়! অদ্য তালপুকুর হইতে দরিদ্র বিন্দ এই মনুষ্যসমুদ্রে বিলীন হইতে আসিয়াছেন, এ মহানগরীর কোনও নিভৃত স্থানে কি বিন্দ স্থান পাইবেন ? তথায় যাইবার সময় তিনি প্রাসাদতুল্য ইংরাজী দোকান দেখিয়া বিস্মিত হইলেন। এই সকল কাপড়ওয়ালার দোকান বা জনতাওয়ালার দোকান শুনিয়া বিস্মিত হইলেন। জনতাওয়ালা ও কাপড়ওয়ালা এক্ষণে ভারত-সমাজের নিম্নস্তর, জুতাওয়ালা ও কাপড়ওয়ালাই ইংলন্ডের গৌরবস্বরপ, ইংলন্ডের রাজ্যবিস্তারের প্রধান হেতু! বিস্মিত নয়নে সন্ধা ও বিন্দ লাট সাহেবের বাড়ী দেখিতে দেখিতে গড়ের মাঠে বাহির হইয়া পড়িলেন। তখন সন্ধার ছায়া গাঢ় হইয়া আসিয়াছে, ইন্দ্রপরী তুল্য চৌরঙ্গিতে দীপালোক প্রজবলিত হইয়াছে, এখন মত্ত্যে যাঁহারা দেবত্ব করিতেছেন, তাঁহারা বেরশে, ফিটন বা লেন্ডলেট করিয়া ইডেন গাডেনে সমাগত হইতেছে। ঐ প্রসিদ্ধ উদ্যান হইতে অপব্ব" বাদ্যধান শ্রত হইতেছে, এবং আকাশের বিদ্যুৎ মনষ্যের বিজ্ঞানক্ষমতার অধীন হইয়া নরনারীর মন রঞ্জনাথ আলোক বিতরণ করিতেছে! ভারতবষের আধুনিক অধীশ্বরদিগের গৌরব ও ক্ষমতা, প্রভুত্ব ও বিলাস দেখিয়া তালপুকুরনিবাসিনী দরিদ্র বিন্দ বিস্মিত হইলেন। গাড়ী চলিতে লাগিল। দিনের পরিভ্রমণ বশতঃ সন্ধা হেমের বক্ষে মস্তক স্থাপন করিয়া নিদ্রিত হইয়া পড়িলেন। বুিন্দও পরিশ্রান্ত হইয়াছিলেন, ছোট সাপ্ত শিশটোঁকে ক্রোড়ে করিয়া তিনিও চক্ষ মাদিত করিয়াছিলেন। শরৎ বড় শিশকে ক্রোড়ে লইয়াছিলেন, হেমচন্দ্র সন্ধার মস্তকটী ধারণ করিয়া নিস্তন্ধে পথ ও হল্ম্যাদি দর্শন করিতে লাগিলেন। সন্ধ্যার ছায়ার সঙ্গে ○や」や