পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী শরৎ । বিন্দ দিদি, কলেজের শিক্ষাকে অনেকে অতিশয় নিন্দা করে, আমি তাহা করি না। যে শিক্ষায় আমরা মহৎ জাতিদিগের, মহৎ লোকদিগের জীবনচরিত ও কাৰ্য্যকলাপ অবগত হইতেছি, ও প্রকৃতির বিস্ময়কর নিয়মাবলী শিখিতেছি, তাহা কি মন্দ শিক্ষা ? যাঁহারা ইহা হইতে উপকার লাভ করিতে পারেন না, সে তাঁহাদের হৃদয়ের দোষ, শিক্ষার দোষ নহে। হেমবাব কলিকাতায় যে প্রকৃত দেশহিতৈষিতা, প্রকৃত উন্নতি-ইচ্ছার কথা বলিলেন, তাহা পঞ্চাশৎ বৎসর পর্বে যাহা ছিল, আদ্য তাহা হইতে অধিক লক্ষিত হয়, তাহা কেবল এই কালেজের শিক্ষাগণে। আবার এই শিক্ষাগণে এই সদগণেগুলি পঞ্চাশৎ বৎসর পর আরও অধিক লক্ষিত হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। বহু শতাব্দীতেও আমরা ইউরোপীয় জাতিদিগের ঠিক সমকক্ষ হইতে পারিব কি না সন্দেহ; কিন্তু তথাপি আমার ভরসা যে জগদীশ্বরের কৃপায় দিন দিন আমরা অগ্রসর হইতেছি। আত্মবিসর্জন ও কত্তব্যসাধনে অনন্ত উৎসাহ ও অনন্ত চেষ্টা, এই উন্নতির একমাত্র পথ, সেই আত্মবিসর্জন, সেই নিকাম কৰ্ত্তব্যসাধন আমরা এখনও কতটুকু শিখিয়াছি, চিন্তা করিলে হৃদয় ব্যথিত হয় ! কথায় কথায় রাত্রি অনেক হইয়া গেল, শরৎ যাইবার জন্য উঠিলেন। হেম তাঁহার সঙ্গে দ্বার পৰ্য্যন্ত যাইলেন, দেখিলেন পথে জ্যোৎস্না পড়িয়াছে এবং গ্রীমকালের শীতল নৈশ বায় বহিয়া যাইতেছে। সুতরাং তিনি এক পা দই পা করিয়া শরতের সঙ্গে অনেক দরে গেলো। পথেও এইরুপ কথাবাত্তা হইতে লাগিল। দেবীপ্রসন্নবাব ও আজ সন্ধ্যার সময় হাওয়া খাইতে বাহির হইয়াছিলেন, তিনি শরৎ ও হেমকে দেখিয়া শরতের বাটী পয্যন্ত তাঁহাদিগের সহিত গেলেন : হেমচন্দ্র দেবীবাবরে সহিত ফিরিয়া আসিবার সময় বলিলেন,—আমি কলেজের অনেক ছেলে দেখিয়াছি, অনেকের সহিত কথা কহিয়াছি, কিন্তু শরতের ন্যায় প্রকৃত শিক্ষালাভ করিয়াছে, ಸ್ಟ್ಗ উন্নত হৃদয়, উন্নত চিত্ত, অনিন্দনীয় উদ্যম ও উৎসাহ আছে, এরপে অলপই Es ! দেবীবাব বলিলেন,—হ্যাঁ, ছেলেটী ভাল, গণবান বটে, বেচে থাকুক, বাপের নাম রাখবে। আর লেখাপড়াও শিখবে বটে, কিন্তু ছেলেমানষে হয়ে বড়োর মত কথা কয় কেন ? ছোঁড়াটা শেষে ফাজিল না হয়ে যায়, তাই ভাবি ৷ ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ ঃ দেবীপ্রসন্নবাব ভবানীপুরের কায়স্থদিগের মধ্যে দেবীপ্রসন্নবাবরে ভারি নাম। তাঁহার বয়স পঞ্চাশ বৎসর হইবে, তাঁহার শরীরখানি এখনও বলিষ্ঠ, স্থল ও গৌরবণ। তাঁহার প্রসন্ন মুখে হাস্য সব্বদাই বিরাজমান এবং তাঁহার মিটে কথায় সকলেই আপ্যায়িত হইত। তাঁহাদের অবস্থা এককালে বড় মন্দ ছিল, দেবীপ্রসন্নবাব বাল্যকালে অনেক ক্লেশ ভোগ করিয়াছেন, এবং অলপ বয়সেই লেখাপড়া ছাড়িয়া সামান্য বেতনে একটী “হোঁসে” কম লইয়াছিলেন। তথায় অনেক বৎসর পয্যন্ত বিলাত যাইবার সময় হোঁসের পরাতন ভূত্যের পদ বৃদ্ধি করিয়া দেন। সৌভাগ্য যখন একবার উদয় হয়, তখন ক্রমেই তাহার জ্যোতি বিস্তার হয় । সেই সময় তিন চারি বৎসর হোঁসের অনেক লাভ হওয়ায় সাহেবগণ বড় তুষ্ট হইয়া শেষে দেবীবাবকে হোঁসের বড়বাব করিয়া দিলেন। বলা বাহুল্য তখন দেবীবাবর বিলক্ষণ দােপয়সা আয় হইল, এবং তিনি ভবানীপুরের পৈতৃক বাড়ীর অনেক উন্নতি করিয়া সম্মখে একটী সন্দের বৈঠকখানা প্রস্তুত করাইলেন, এবং সন্দেররাপে সাজাইলেন। দেবীবাব প্রত্যহ ৮টার সময় বৈঠকখানায় বসিতেন, প্রত্যহ অনেক লোক তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিতেন। ক্রমেই দেবীবাবর নাম বিস্তার হইতে লাগিল। দাগোৎসবের সময় তাঁহার বাটীতে বহন সমারোহে পজা হইত, এবং যাত্রা ও নাচ দেখিতে ভবানীপুরের যাবতীয় লোক আসিত। তদ্ভিন্ন বাড়ীতে একটী বিগ্রহ ছিল; প্রত্যহ তাহার সেবা হইত, এবং বাড়ীর মেয়েরা নানারপে ব্রত উপলক্ষে অনেক দানধৰ্ম্ম করিত। দই একজন করিয়য় দেবীবাবর দরিদ্রা জ্ঞাতিকুটবিনীগণ সেই বিস্তীর্ণ বাটীতে আশ্রয় পাইল, পাড়ার মেয়েরাও সব্বদা তথায় আসিত সতরাং বাহির বাটী ও ভিতর বাটী সমান লোকসমাকীর্ণ। Ο Α Ο J