পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংসার হেমচন্দ্র কলিকাতায় আসিবার পর অলপ দিনের মধ্যেই দেবীপ্রসন্নবাবরে সহিত আলাপ করিলেন, এবং দেবীবাবুও সেই নবাগত ভদ্রলোককে যথোচিত সম্মান করিয়া আপন বৈঠকখানার লইয়া যাইতেন। বৈঠকখানায় সন্দের পরিকার বিছানা পাতা আছে, দই তিনটী মোটা মোটা গিন্দে এবং একটী কুলুঙ্গিতে দুইটী সামাদান। ঘরের দেওয়াল হইতে জোড়া জোড়া দেয়ালগিরি বসে ঢাকা রহিয়াছে এবং নানারপে উৎকৃষ্ট ও অপকৃষ্ট ছবি বুলিতেছে। কোথাও হিন্দ দেবদেবীদিগের ছবি রহিয়াছে, তাহার পাশ্বে আবার জন্মনি দেশস্থ অতি অলপ মল্যের অপকৃষ্ট ছবিগলি বিরাজ করিতেছে। সে ছবিতে কোন রমণী চুল বাঁধিতেছে, কেহ স্নান করিতেছে, কেহ শইয়া রহিয়াছে; কাহারও শরীর আবত, কাহারও অদ্ধাবত, কাহারও অনাবত। আবার তাহাদের মধ্যে করেজীওর একখানা "মেগডেলীন", টিসীয়নের “ভিনস", লেণ্ডসিয়রের এক জোড়া হরিণও বিকাশ পাইতেছে, কিন্তু সে ছাপা এত নিকৃষ্ট যে ছবিগলি চেনা ভার। বহবোজারে বা নিলামে যাহা শস্তা পাওয়া গিয়াছে, এবং যাহা দেবীবাব বা দেবীবাবর সরকারের রচিসম্মত হইয়াছে, তাহাই ছাপা হউক, ওলিওগ্রাফ হউক, সংগ্রহ পবেক বৈঠকখানার দেয়াল সাজান হইয়াছে। হেমচন্দ্র সব্বদাই দেবীবাবরে সহিত আলাপ করিতে যাইতেন এবং কখন কখন সময় পাইলে আপনার কলিকাতা আসার উদ্দেশ্যটীও প্রকাশ করিয়া বলিতেন। দেবীবাব অনেক আশ্বাস দিতেন, বলিতেন, “হেমবাবর মত লোকের অবশ্যই একটী চাকরী হইবে, তিনি স্বয়ং সাহেবদের নিকট হেমবাবকে লইয়া যাইবেন, হেমবাবর ন্যায় লোকের জন্য তিনি এইটুকু করিবেন না তবে কাহার জন্য করবেন ?" ইত্যাদি। এইরুপ কথাবাত্তা শুনিয়া হেমচন্দ্র একটুকু আশ্বস্ত হইতেন; দেবীপ্রসন্নবাবরে প্রধান গণ এইটী যে তাঁহার নিকট শত শত প্রাথী আসিত, তিনি কাহাকেও আশ্বাসবাক্য দিতে কটী করিতেন না। কিন্তু কাৰ্য্য সম্বন্ধে যাহাই হউক না কেন, ভদ্রাচরণে দেবীবাব ত্রটি করিলেন না। তিনি দই তিন দিন হেম ও শরৎকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া খাওয়াইলেন, এবং তাঁহার গহিণী হেমবাবর সন্ত্রীকে একবার দেখিতে চাহিয়াছেন বলিয়া পাঠাইলেন। বিন্দ কাজকৰ্ম্ম করিয়া প্রায় অবসর পাইতেন না, কিন্তু দেবীবাবরে সত্রীর আজ্ঞা ঠেলিতে পারিলেন না, সতরাং একদিন সকাল সকাল ভাত খাইয়া সন্ধাকে ও দুইটী ছেলেকে লইয়া পাতকী করিয়া দেবীবাবরে বাড়ী গেলেন। দেবীবাব তখন আপিসে গিয়াছেন, সতরাং বহিবাটী নিস্তব্ধ; কিন্তু বিন্দ বাড়ীর ভিতর যাইয়া দেখিলেন যে অন্দর মহল লোকাকীর্ণ। উঠানে দাসীরা কেহ ঝাঁট দিতেছে, কেহ ঘর নিকাইতেছে, কেহ কাপড় শখোইতে দিতেছে, কেহ এখন মাছ কুটিতেছে, কেহ সকল কায্যের বড় কাৰ্য্য—কলহ করিতেছে। কলিকাতার দাসীগণের বড় পায়া, মাঠাকরণের কথাই গায়ে সয় না,—কোন আশ্রিতা আত্মীয়া কিছু বলিয়াছে তাহা সহিবে কেন—দশগণে শনাইয়া দিতেছে, ভদ্র-রমণী সে বাক্যলহরী রোধ করার উপায়াস্তর না দেখিয়া চক্ষর জল মুছিয়া স্থানান্তর হইতেছেন! পাতকোতলায় ঝি বৌয়ের হাট, সকলে একেবারে নাইতে গিয়াছে, সুতরাং রাপের ছটা, হাস্যের ছটার শেষ নাই। আবার তাহার সঙ্গে সঙ্গে সেই সন্দেরীগণ তথায় অবত্তীমানা প্রিয়বন্ধদিগের চরিত্রের শ্রাদ্ধ করিতেছিলেন। কেহ গল দিয়া দাঁত মাজিতে মাজিতে বলিলেন, “হালা, ও বাড়ীর ন বৌয়ের জাঁক দেখেছিস ? সে দিন যগগিতে এসেছিল, তা গয়নার জাঁকে আর ভূয়ে পা পড়ে না, হ্যাঁ গা, তা তার স্বামীর বড় চাকরী হয়েছে হই-ইচে, তা এত জাঁক কিসের লা?” কেহ চুল খলিতে খলিতে কহিলেন, “তা হোক বোন, তার জাঁক আছে জাঁকই আছে, তার শাশুড়ী কি হারামজাদী। মা গো মা, অমন বোঁ কাঁটকি শাশড়ী ত দেখিনি, বেীকে স্বামী ভালবাসেন বলে সে বড়ী যেন দু’চক্ষে দেখতে পারে না। ঢের ঢের দেখেছি, অমনটী আর দেখিনি।” অন্য সুন্দরী গায়ে জল ঢালিতে ঢালিতে বলিলেন, “ও সব সোমান গো, সব সোমান—শাশড়ী আবার কোন কালে মায়ের মত হয়, দন্বেলা বকুনি খেতে খেতে আমাদের প্রাণ যায়।” “ওলো চুপ কর লো চুপ কর, এখনি নাইতে আসবে, তোর কথা শনতে পেলে গায়ের চামড়া রাখবে না। তব বোন আমাদের বাড়ী হাজার গণে ভাল, ঐ ঘোষেদের বাড়ীর শাশড়ী-মাগীর কথা শুনেছিস, সে দিন বউকে কাঠের চেলার বাড়ি ঠেঙ্গিয়েছিল!” "তা সে শাশড়ীও যেমন, বৌও তেমন, সে নাকি শাশড়ীর উপর রাগ করে হাতের নো খালে ফেলেছিল, তাতেই ত শাশড়ী মেরেছিল।” “তা রাগ করবে না, গায়ের জালায় করে, স্বামীটাও రిay