পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী বিন্দ বলিলেন,—শরৎবাব, তুমি এখন বাড়ী যাও, সন্ধা একটা ঘুমিয়েছে, তুমি শোও গে, সমস্ত রাত্রি জেগো না, অসুখ করবে। শরৎ । বিন্দ দিদি, তোমার কি সমস্ত রাত্রি জাগা ভাল, তুমি সমস্ত দিন সংসারের কাজ করেছ, আবার কাল সমস্ত দিন কাজ করতে হবে । আমার কি, আমি না হয় কাল কলেজে নাই গেলাম। বিন্দর। না শরৎবাব, আমাদের রাত্রি জাগা অভ্যাস আছে, ছেলের ব্যারাম হয়, কিছু হয়, সব্বদাই আমরা রাত্রি জাগতে পারি, আমাদের কিছু হয় না। তোমরা পরষ মানুষ, তোমাদের সমস্ত রাত্রি জাগা সয় না, আমার কথা রাখ, বাড়ী যাও। আবার কাল সকালে না হয় এসে দেখে যেও | সধা তখন নিদ্রা যাইতেছে, নিদ্রার নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসে বালিকার হৃদয় সফীত হইতেছে। শরৎ একটা নিরদ্বেগ হইলেন ; বিন্দর নিকট বিদায় লইয়া বাটী হইতে বাহির হইলেন, নিঃশব্দ নৈশ পথ দিয়া আপন বাটীতে যাইয়া প্রাতে ৪ ঘটিকার সময় শয্যায় শয়ন করিলেন। গেলেন। তিনি মেডিকেল কলেজ হইতে সম্প্রতি পরীক্ষা দিয়া উত্তীণ হইয়াছেন । ভবানীপরেই তাঁহার বাটী, তিনি ভবানীপুর অঞ্চলে একটা পসার করিবার চেষ্টা করিতেছেন। তিনি অতিশয় পরিশ্রমী, মনোযোগী, বৃদ্ধিমান ও কৃতবিদ্য; কিন্তু ডাক্তারির পসার এক দিনে হয় না, কেবল গণেও হয় না, সুতরাং নবীনবাবরে এখনও কিছু পসার হয় নাই। তাঁহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা চন্দ্রনাথবাব ভবানীপুরের মধ্যে একজন প্রসিদ্ধ উকিল, এবং চন্দ্রবাবার সহায়তায় নবীন একটী ঔষধালয় খলিয়াছিলেন, কিন্তু তাহাতেও লাভ অলপ, লোকসানের সম্ভাবনাই অধিক। এ জগতে সকলেই আপন আপন চেস্টা করিতেছে, তাহার মধ্যে একজন যুবকের অগ্রসর হওয়া কটসাধ্য, চারি দিকেই পথ অবরুদ্ধ, সকল পথই জনাকীর্ণ। নবীনবাব পরিশ্রমী ও অধ্যবসায়ী ছিলেন, পরিশ্রম, যত্ন ও গণে দ্বারা ক্রমে উন্নতির পথ পরিকার করিবেন স্থির সঙ্কল্প করিয়া তিনি ধীরচিত্তে কাৰ্য্য করিতেছিলেন। দই একটী বাড়ীতে তাঁহার বড় যশ হইয়াছিল, যাহাদিগের বাড়ীতে তাঁহাকে দুই চারিবার ডাকা হইয়াছিল, তাহারা অন্য চিকিৎসক আনাইত না। সাতটার সময় শরৎ নবীনবাবকে লইয়া হেমবাবরে বাড়ী পাহছিলেন। নবীনবাব অনেকক্ষণ যত্ন করিয়া সন্ধাকে দেখিলেন। জর তখন কমিয়াছে, কিন্তু তাপযন্ত্রে তখনও ১০১ দাগ দেখা গেল ; নাড়ী তখন ১২০ । অনেকক্ষণ দেখিয়া বাহিরে আসিলেন, তাহার মুখ গম্ভীর। হেম জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি দেখিলেন? রাত্রি অপেক্ষা অনেক জর কমিয়াছে, আজ উপবাস করিলে জর ছাড়িয়া যাইবে বোধ হয় ? নবীন। বোধ হয় না। আমি রিমিটাণ্ট জবরের সমস্ত লক্ষণ দেখিতেছি। এখন একটা কমিয়াছে, কিন্তু এখনও বেশ জর আছে, দিনের বেলা আবার বদ্ধি হওয়াই সম্ভব। হেম একটু ভীত হইলেন। সেই সময়ে ভবানীপুরে অনেক রিমিটাণ্ট জর হইতেছিল, সেই জনরে অনেকের মৃত্যু হইতেছিল। তিনি বলিলেন, “তবে কি কয়েক দিন ভুগিবে ?" নবীন। এখনও ঠিক বলিতে পারি না, আর একবার আসিয়া দেখিলে বলিব। বোধ হইতেছে, রিমিটাণ্ট জর, তাহা হইলে ভুগিতে হইবে বৈ কি। কিন্তু আপনারা কোন আশঙ্কা করিবেন না, আশঙ্কার কোনও কারণ নাই। এই বলিয়া তিনি একটী ঔষধের ব্যবস্থা করিলেন এবং বলিলেন, "এই ঔষধটী দই ঘণ্টা অন্তর খাওয়াইবেন, বৈকাল পৰ্য্যন্ত খাওয়াইবেন, বৈকালে আমি আবার আসিব। রোগীর মাথা গরম হইয়াছে, চক্ষ রক্তবর্ণ হইয়াছে, সমস্ত দিন মাথায় বরফ দিবেন, তৃষ্ণা পাইলে বরফ খাইতে দিবেন, কিংবা দই একখানি আকের কুচি দিবেন। আর এরার্ট কিংবা নেসলের দন্ধে খাব খাওয়াইবেন, দিনে তিন চারি বার খাওয়াইবেন। এ পীড়ায় খাদ্যই ঔষধ।” শরতের সহিত বাটী হইতে বাহিরে আসিয়া নবীন বলিলেন।--শরৎ তোমাকে একটী কাজ করিতে হইবে। শরৎ। বলন - ළුඅ ඡී