পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংসার মাতৃস্নেহে জীবন ধারণ করিয়াছিল, অকালে বিধবা হইয়াও ভগিনীর স্নেহে সেই ক্ষুদ্র পপটী কয়েক দিন পল্লীগ্রামে প্রস্ফটিত হইয়াছিল, অদ্য সে পাপ বুঝি আবার মাদিত হইয়া নমশির নত করিল। দরিদ্রা বালিকার ক্ষুদ্র জীবন-ইতিহাস বুঝি সাঙ্গ হইল। বিংশ দিবস হইতে নবীনও দিবারারি হেমের বাটীতে রহিলেন। শরৎকে গোপনে বলিলেন, “শরৎ, তোমার নিকট কোন কথা গোপন করিব না, আর দুই এক দিনের মধ্যে যদি এই জর না ছাড়ে, তবে ঐ দাবল মতপ্রায় শরীরকে জীবিত রাখা মনুষ্য-সাধ্য নহে। আর দই তিন দিন আমি দেখিব, তাহার পর আমাকে বিদায় দিও। আমার যাহা সাধ্য করিলাম, জীবন দেওয়া না দেওয়া জগদীশ্বরের ইচ্ছা।” দ্বাবিংশ দিবসের সন্ধ্যার সময় জর একটা হ্রাস হইল, কিন্তু তাহাতেও কিছু ভরসা করা ষায় না। রাত্রিতে দুই জনই শয্যাপাশ্বে বসিয়া রহিলেন, সে দিন সমস্ত রাত্রি সন্ধা নিদ্রিতা। এ কি আরোগ্যের লক্ষণ, না দ্বলতায় মৃত্যুর পবে চিহ্ন ? অতি প্রত্যুষে শরৎ আবার তাপযন্ত্র বসাইলেন। তাপযন্ত্র উঠাইয়া গবাক্ষের নিকট ষাইলেন। কি দেখিলেন জানি না, ললাটে করাঘাত করিয়া নিশ্চেন্ট হইয়া তিনি ভূমিতে পড়িয়া গেলেন! নবীনচন্দ্র ধীরে ধীরে সেই যন্ত্র শরতের হস্ত হইতে লইলেন, বিপদকালে ধীরতাই চিকিৎসকের বীরত্ব। তাপযন্ত্র দেখিলেন, আস্তে আস্তে শরৎকে হাত ধরিয়া উঠাইলেন। শরৎ হতাশের ন্যায় জিজ্ঞাসা করিলেন,—তবে বালিকার পরমায় শেষ হইয়াছে ? নবীন। পরমেশ্বর বালিকাকে দীঘর্ণয়ঃ করন, এ-যাত্রা সে পরিত্রাণ পাইয়াছে। তাপযন্ত্র দেখিতে শরৎ ভুল করিয়াছিলেন, নবীন দেখাইলেন, তাপযন্ত্রে ১৮ ডিগ্রি লক্ষিত হইতেছে। সাধার শরীরে হাত দিয়া দেখাইলেন, জর নাই, জর উপশম হওয়ায় ক্ষীণ বালিকা গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত রহিয়াছে। ললাট হইতে কেশগুচ্ছ সরাইয়া প্রাতঃকালে শরৎ বাড়ী আসিলেন। তিনি প্রায় এক সপ্তাহ జ్ఞాక్జా , లేళా ఇ గా శా శాపా శా గా కా নিরদ্বেগ । পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ ঃ চন্দ্রনাথবাব পীড়া আরোগ্য হইলেও সন্ধা কয়েকদিন শয্যা হইতে উঠিতে পারিল না। শয্যা হইতে উঠিয়া কয়েক দিন ঘর হইতে বাহির হইতে পারিল না। তাহার পর অলপ অলপ করিয়া ঘরে বারাণ্ডায় বেড়াইত, অথবা শরতের সাহায্যে ছাদে গিয়া একটা বসিত। পক্ষীর ন্যায় সেই লঘু ক্ষীণ শরীরটি শরৎ অনায়াসে আপনার দই হস্তে উঠাইয়া ছাদে লইয়া যাইতেন, আবার ছাদ হইতে নামাইয়া আনিতেন। এক্ষণে শরৎ পনরায় কলেজে যাইতে আরম্ভ করিলেন, কিন্তু প্রতিদিন বৈকালে হেমের বাড়ীতে আসিতেন, সন্ধাকে অনেক কথা, অনেক গল্প বলিয়া প্রফুল্ল রাখিতেন, রাত্রি নয়টার সময় সন্ধা শয়ন করিলে বাটী আসিতেন। সন্ধাও প্রতিদিন শরৎকে প্রতীক্ষা করিত, শরতের আগমনের পদধবনি প্রথমে সন্ধার কণে উঠিত, শরৎ সিড়ি হইতে উঠিতে না উঠিতে প্রথমেই সেই ক্ষীণ শান্ত, কমনীয়, হাস্যরঞ্জিত মুখখানি দেখিয়া হৃদয় তৃপ্ত করিতেন। ছাদে গিয়া শরৎ অনেকক্ষণ অবধি সন্ধাকে অনেক গলপ শনাইতেন। তালপুকুর গ্রামের গলপ, বাল্যকালের গল্প, সন্ধার দরিদ্রা মাতার গল্প, শরতের মাতার গল্প, শরতের ভগিনীর গল্প, অনেক বিষয়ের অনেক গল্প করিতেন। সন্ধাও একাগ্রচিত্তে সেই মধর কথাগুলি শানিত, শরতের প্রসন্ন মুখের দিকে চাহিয়া থাকিত ! রোগে বা শোকে যখন আমাদিগের শরীর দ্ব্বল হয়, অন্তঃকরণ ক্ষীণ হয়, তখনই আমরা প্রকৃত বন্ধর দয়া ও স্নেহের সম্পণে মহিমা অনুভব করিতে পারি। অন্য সময়ে গৰব করিয়া যে পরামশ শুনি না, সে সময়ে সেই পরামশ হৃদয়ে স্থান পায়, অন্য সময়ে যে স্নেহ আমরা তুচ্ছ করি, সে সময়ে সেই স্নেহে আমাদিগের হৃদয় সিক্ত হয়, কেননা হৃদয় তখন দলবল, স্নেহের বারি প্রত্যাশা করে। লতা যেরপে সবল বক্ষকে আশ্রয় করিয়া ধীরে ধীরে বদ্ধি ও ক্ষত্তিলাভ করে, সন্ধা শরতের অমত বচনে সেইরপে শান্তিলাভ করিত। সন্ধা পৰ্য্যন্ত সন্ধা সেই অমতমাখা কথাগুলি শ্রবণ করিত, সেই স্নেহময় মধ্যর প্রসন্ন ○ aぬ