পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ চনাবলী তাড়াইয়া দেওয়া যায় না, মা শুনিলে রাগ করবেন। তৃতীয় একজন নিপত্তি করিল, আচ্ছা একটা বসতে বল। হেমবাব আবার ক্ষণেক বসিলেন। তিনি একটা চিন্তাশীল সমালোচনাপ্লিয় লোক ছিলেন, বড় মানুষের দ্বারবানদিগের সামাজিক আচারব্যবহার ও সভ্যতা বিশেষরপে সমালোচনা করিবার অবকাশ পাইলেন, এবং তাহা হইতে পরম প্রীতি ও উপদেশ লাভ করিলেন। দ্বারবানগণ দেখিল, এ কাঙ্গালী যায় না। তখন একজন অগত্যা বহন সখের আধার খাটিয়া অনেক কটে ত্যাগ করিয়া একবার হাই তুলিয়া, একবার অসারতুল্য বাহুদ্বয় আকাশের দিকে বিস্তার করিয়া আর একবার শমশ্র কন্ডয়ন করিয়া ধীর গম্ভীর পদবিক্ষেপে বাড়ীর ভিতর গেলেন। হেম প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। প্রায় একদণ্ড পর দ্বারবান ফিরিয়া আসিয়া সখবর দিলেন, যাও বাবন, এখন দেখা না হোবে। হেম। আমার নাম বলেছিলে ? দ্বারবান। নাম কি বলবে ? এত সকালে কি বাবর সঙ্গে দেখা হোয় ? বাব এখনও উঠেন নাই, দশটার সময় উঠেন, তাহার পর আসিও । হেম অগত্যা ফিরিয়া গেলেন। এক দিন দশটার পর গেলেন, তখন বাব বাড়ী নাই। একদিন অপরাহ্লে গেলেন, বাব বাগানে বাহির হইয়াছেন। এক দিন সন্ধ্যার সময় গেলেন, সে দিন বাব কোথা নিমন্ত্রণে গিয়াছেন । চার পাঁচ দিন ব্যথা হাঁটাহাটি করিয়া একদিন সন্ধ্যার সময় আবার গেলেন, ভাগ্যক্রমে ধনঞ্জয়বাব বাড়ী আছেন। দ্বারবান বলিল, কি নাম তোমার ; গোবদ্ধান না গৌরচন্দ্র ? হেম। নাম হেমচন্দ্র, তালপুকুর গ্রাম হতে এসেছি। দ্বারবান উপরে যাইয়া খবর দিল। আসিয়া বলিল, উপরে যান। হেমচন্দ্র উপরে গেলেন। ধনপরে ধনেশ্বর বংশের ধনবান উত্তরাধিকারী, গৌরবণ, সন্দর, যৌবনোপেত ধনঞ্জয়বাব কয়েকজন পাত্রমিত্রের মধ্যে সেই সভাগহে বিরাজ করিতেছেন। তিনি শিস্টাচার করিয়া আপন শ্যালীপতি ভ্রাতাকে মকমলমণ্ডিত সোফায় বসিতে আজ্ঞা দিলেন। হেমচন্দ্র যাহারপরনাই আপ্যায়িত হইলেন। হেমবাব সহসা কোনও কথা উত্থাপন করিতে পারলেন না, সে সভাগাহের শোভা দেখিয়া ক্ষণেক বিমোহিত হইয়া রহিলেন। তিনি চৌরঙ্গিতে প্রাসাদতুল্য বাটীসমুহের বারাণ্ডায় টানাপাখা চলিতেছে, পথ হইতে দেখিয়াছেন; লাট সাহেবের বাড়ীর সিংহদ্বার পয্যন্ত দেখিয়াছেন; উকিঝকি মারিয়া দলই একটী ইংরাজী দোকানের অভ্যন্তরে একটা একটা দেখিয়াছেন, কিন্তু এমন সশোভিত সন্দের সভাগাহের ভিতর পদবিক্ষেপ করা তাহার কপালে এ পয্যন্ত ঘটে নাই। সভার মেজে সন্দর কাপে্টমন্ডিত, তাহাতে গোলাপ ফটিয়া রহিয়াছে, লতায় লতায় ফল ফুটিয়াছে, ডালে ডালে পাখী বসিয়াছে, সে কাপেটের উপর হেমচন্দ্র ধন্লিপণে তালি দেওয়া জতা স্থাপন করিতে একটা সংকুচিত হইলেন। তাহার উপর আবলশ কাঠের সোফা, অটোমান, চৌকি, ইজি চেয়ার, সাইডবোর্ড, টেবিল; আবলুশ কাঠের উপর সবণের সক্ষম রেখাগুলি বড় শোভা পাইতেছে। সোফা ও চৌকি হরিদ্বণ মকমলে মণ্ডিত, হেমের ছেলে দুইটী সেরাপ মকমলের জামা কখন পরিধান করে নাই। মাবেলের টেবিল, মাবেলের সাইডবোড মাবেলের প্রতিমাত্তি, উপর হইতে বেলওয়ারীর ঝাড়ের ভিতর গ্যাসের আলোক দীপ্ত রহিয়াছে, সে আলোকে ঘর দিবার ন্যায় আলোকিত হইয়াছে, গবাক্ষ দিয়া সে আলোক বাহির হইয়া সে পাড়াসদ্ধে আলোকিত করিয়াছে। এক দিকে কোন স্থানে সেতার প্রভূতি বাদ্যযন্ত্র রহিয়াছে, সাইডবোডে দুইটী ডিকেন্টর ও কয়েকটী গেলাস ঝক ঝক করিতেছে। দেয়ালে অসংখ্য বড় বড় দপণে আলোক প্রতিফলিত হইতেছে, হেমের দরিদ্র চেহারাখানি চারিদিকের দপণে অঙ্কিত দেখিয়া সে দরিদ্র আরও লজিত হইলেন। কয়েকখানি সন্দের বহমল্যে অয়েল পেন্টিং ; ইন্দ্রপরী হইতে বিবসা মেনকা, রম্ভা যেন সেই অয়েল পেণ্টিং হইতে হাস্য করিতেছে। সভাগাহের বর্ণনা এক প্রকার হইল, সভ্যদিগের বর্ণনা করি কিরাপে ? আজ অধিক লোক নাই, তথাপি ধনঞ্জয়বাবরে অতি প্রিয়, অতি গণেবান কয়েকজন বন্ধ সে সভাকে নবরত্ন সভা করিয়াছেন । তাঁহাদিগের যথেস্ট বর্ণনা করা অসম্ভব, দুই একটী কথায় পরিচয় দেওয়া আবশ্যক। ধনঞ্জয়ের দক্ষিণ হস্তে সন্মতিবাব বসিয়াছিলেন, তিনি রপবান যবো পরষে, বয়স ঠিক জানি না, কিন্তু যৌবনের শোভা সে সন্দের মখে, সে কালাপেড়ে কাপড়ে ও ফিন'ফিনে একলাইয়ে や げ8 *