পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

a সংসার লক্ষিত হইতেছে। তাঁহার ব্যবসায় জানি না, কিন্তু প্রায় বড় মানষেদিগের দক্ষিণ হস্তে তাঁহার স্থান। তিনি গীতে অদ্বিতীয়, হাস্য-রহস্যে অদ্বিতীয়, ধনীদিগের মনোরঞ্জনে অদ্বিতীয়, প্রবাদ আছে যে, বিষয়বৃদ্ধিতেও অদ্বিতীয় ! তিনি মধ্যমক্ষিকার ন্যায় মধ্য আহরণ করিতে জানিতেন, অনেক মধ্যচক্র হইতে মধ্য আহরণে তাঁহার ধনাগার পণ্যে হইয়াছিল, সন্দের গাড়ী ও জড়িতে ছাপিয়া পড়িতেছিল। প্রবাদ আছে যে, বন্ড, হেণ্ডনেট প্রভৃতি গঢ় মন্ত্রে তিনি বিশেষরপে দীক্ষিত, নাবালক বা তরণ ধনীদিগের প্রতি সেই সন্দের মন্ত্র চালনায় তিনি অদ্বিতীয়। কিন্তু এ সকল জনপ্রবাদ গ্রাহ্য নহে, সন্মতিবাবরে মিন্ট হাস্য ও আলাপ-ক্ষমতা সন্দেহ-বিবজিত । সন্মতিবাবর পাশ্বে যদুনাথ বসিয়াছিলেন—গণ বল, লেখাপড়া বল, কাৰ্য্যদক্ষতা বল, হাস্যরহস্য ক্ষমতা বল—যদনাথের ন্যায় কলিকাতায় কে আছে ? ব্যবসা ওকালতি, মুখে ইংরাজী বুলি যেন খই ফোটে, ইংরাজী চালচোল, ইংরাজী খানায়, ইংরাজী ধরণে তাঁহার ন্যায় কে উপযুক্ত ? সেক্ষেপন বা সোটরণ বা সাবলিস সম্বন্ধে তাঁহার ন্যায় কে বিচারক ? আবার তাঁহার বক্তৃতা ক্ষমতাও অসাধারণ—“ন্যাশনালিটী” রক্ষা সম্বন্ধে তাঁহার তীর হৃদয়গ্রাহী বস্তৃতা শুনিয়া কলিকাতার কোন শিক্ষিত লোকের মন না দ্রবীভূত হইয়াছে ? যদনাথবাবরে সমকক্ষ হওয়া বালকদিগের উচ্চাভিলাষ, যদনাথবাবরে সহিত বন্ধতা করা বিষয়ীদিগের উদ্দেশ্য, যদুনাথবাবরে সহিত সম্ববন্ধ স্থাপন করা কন্যাকত্তাদিগের সুখস্বপ্ন! - তাঁহার পশ্চাতে হাতকাটা বেনিয়ান পরিয়া সবণের চেন ঝালাইয়া হরিশপ্তকর বাব একটা একটা হাসিতেছেন। তিনি সেকেলে লোক, ইংরাজী বড় জানেন না, কিন্তু বাহাদরি কেমন ? কোন ইংরাজীওয়ালা তাঁহার ন্যায় চাকরী পাইয়াছে ? তিনি মাথায় সাদা ফেটা বধিয়া আপিসে যান, পরাণ ধাঁচে ইংরাজী কহেন, বড় বড় সাহেবের বড় প্রিয়পাত্র। প্রাচীন হিন্দু সমাজের স্তম্ভস্বরুপ এই হরিশপ্তকরবাবকে সাহেবেরা বড় স্নেহ করেন, হিন্দু সমাজ সম্বন্ধে হরিশঙ্করবাবকে মাত্তিমান বেদ মনে করেন, হিন্দুয়ানি ও সাবেক রকম নীতি বজায় রাখিবার একটী প্রধান কারণ মনে করেন, নব্য উদ্ধত যুবকদিগের হরিশপ্তকরবাবকে উদাহরণ দেখান। হরিশঙ্করবাব লোকটী বিচক্ষণ; দেখিলেন, এই চালে চলিলেই লাভ, সুতরাং সেই চালই আরও অনবেত্তন করিলেন। তাহার সফল শীঘ্ৰ ফলিল, ধম্মপতি রাজপুরুষেরা এই প্রাচীন ধমাবলম্ববীকে অনেক শিক্ষিত কম চারীর উপরে একটী বড় চাকরী দিলেন। সাবেক রীতিনীতির স্তম্ভ মনে মনে একটা হাসিলেন, সন্ধ্যার সময় ইয়ারদিগের নিকট এই কথা গল্প করিয়া, আপনার তীক্ষা বৃদ্ধির যথোচিত প্রশংসা লাভ করিলেন। সেই রাত্রি সন্ধার উৎস বহিল। হরিশপ্তকরবাবর এক পাশ্বে পাশ্চাত্ত্য সভ্যতার অবতার মিস্টর কমকার বসিয়াছেন, তাঁহার কোট পেণ্টলন অনিন্দনীয়, চক্ষের চশমা অনিন্দনীয়, কলার নেকটাই অনিন্দনীয়, হস্তে শেরীর গেলাস অনিন্দনীয়। তাঁহার ইংরাজী বুলি বিস্ময়কর, ইংরাজী ধরণ বিস্ময়কর, ইংরাজী মেজাজ বিস্ময়কর। ইউরোপ হইতে পাশ্চাত্ত্য সভ্যতার চরম ফল আহরণ করিয়া তিনি ধনঞ্জয়বাবরে সভা শোভিত করিতেছেন। সন্মতিবাব কখন কখন তাঁহার পশ্চাতে দাঁড়াইয়া তাঁহার অনিন্দনীয় পরিচ্ছদ দেখিয়া ইয়ারদিগের নিকট বলিতেন, “এখন পাশ্চাত্ত্য সভ্যতার অর্থ বুঝিলাম, মিস্টার কমকারের মুখের কান্তি অপেক্ষা পশ্চাতের শোভাটিই কিছর অধিক।” হরিশপ্তকরবাবর অপর পাশ্বে বিশ্বম্ভরবাব বসিয়াছেন, তিনি তাঁহার পাড়ার মধ্যে বড় মানুষ, দলের মধ্যে দলপতি, বড় হাউসের বড় বেনিয়ান ! তাঁহার আথের ন্যায় কাহার অথ", গিদ্ধেশ্বরবাব তাঁহার পাশ্বে সিদ্ধেশ্বরবাব প্রভৃতি বনিয়াদী বড় মানুষগণ বসিয়া গিয়াছেন তাঁহার পাশ্বে সিদ্ধেশ্বর বাবন, গিদ্ধেশ্বর বাবর প্রভৃতি বনিয়াদী বড় মানুষগণ বসিয়া গিয়াছেন, তাঁহাদের গৌরব বর্ণনায় আমরা অক্ষম। ধনস্বরপে পদ্মবনের চারিদিকে মধ্যমক্ষিকাগণ গণে গণ করিতেছে; ধনস্বরুপ ময়র সিংহাসন রত্নরাজি ঝক ঝক করিতেছে; হেমবাব কয়েকমাস কলিকাতায় বাস করিয়াই দখিলেন, কেবল ধনঞ্জয়বাবরে বাড়ী নহে, চারি দিকেই সমাজ এ রত্নরাজিতে মণ্ডিত রহিয়াছে ? এ মহানগরী এই রত্নপ্রভায় ঝল্লসিত হইতেছে ! এ সভায় হেমচন্দ্র কি বলিবেন ? 'হংস মধ্যে বকো যথা হইয়া তিনি ক্ষণেক সেইখানে সঙ্কুচিত হইয়া উপবেশন করিয়া রহিলেন। একবার কট করিয়া ধনঞ্জয়বাবরে বাগানের কথা w) by 6: ૨&