পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী উত্থাপন করিলেন, তখনই সভাসদগণ সহস্ৰমুখে সেই বাগানের সংখ্যাতি করিতে লাগিলেন, ধনঞ্জয়বাব হেমবাবকে একদিন বাগানে লইয়া যাইবেন বলিয়া অন্যগহীত করিলেন, হেম অপ্রতিভ হইয়া রহিলেন, পরে একবার তালপুকুরের কথা উচ্চারণ করিলেন, ধনঞ্জয় বদ্ধমানের নাজীরের কথা উত্থাপনে একটা মুখ হে’ট করিলেন, সে কথায় কেহ বড় গা করিলেন না - সভাসদগণ একটা অধীর হইতে লাগিলেন, কেহ সেতার লইয়া কাণ মোচড়াইতে আরম্ভ করিলেন, কেহ সাইডবোডে ডিকেণ্টরের দিকে চাহিলেন, কেহ ঘড়ীর দিকে চাহিলেন। হেমচন্দ্র ভাবগতিক বুঝিয়া বিদায় লইয়া প্রস্থান করিলেন। বাড়ীর ভিতর একবার যাবেন কি ? ধনঞ্জয় ত তাঁহাকে একবার বাড়ীর ভিতর যাইবার কথা বলিলেন না। তথাপি হতভাগিনী উমাতারাকে না দেখিয়া যাইবেন ? প্রাঙ্গণে আসিয়া হেমচন্দ্র একটা ইতস্ততঃ করিলেন। এমন সময়ে বাহিরে ঘঘর শব্দে আর দই একখানি গাড়ী আসিয়া দাঁড়াইল ! গাড়ী হইতে হাস্যরবে বাটী ধৰনিত করিয়া কাহারা বাবরে বৈঠকখানায় গেল। সভা জমিল, সেতারের বাদ্য শ্রত হইল, আবার মধর হাস্যধৰনি ত হইল, অচিরে কলকণ্ঠজাত গীতধৰনি গগনমাগে উত্থিত হইতে লাগিল। হেম এক পা দই পা করিয়া একটী প্রাচীর পার হইয়া বাড়ীর ভিতরের প্রাঙ্গণে দাঁড়াইয়াছেন! তথায় শব্দ নাই, আলোক নাই, মনুষ্য-চিহ্ন নাই, মনুষ্য-রব নাই। অন্ধকারে ক্ষণেক প্রাঙ্গণে দাঁড়াইয়া রহিলেন, তাঁহার হৃদয় সজোরে আঘাত করিতে লাগিল। কাহাকেও ডাকিবেন কি ? . একটী উন্নত প্রকোঠের গবাক্ষের ভিতর দিয়া একটী দীপ দেখা যাইতেছে, হেম অনেকক্ষণ সেই দীপের দিকে চাহিয়া রহিলেন, সাড়া দিবার সাহস হইয়া উঠিল না। ক্ষণেক পর একটী ক্ষীণ বাহ সেই গবাক্ষে লক্ষিত হইল। ধীরে ধীরে সেই গবাক্ষ বন্ধ হইল, আলোক আর দন্ট হইল না, সমস্ত অন্ধকার। হৃদয়ে দই হস্ত স্থাপন করিয়া হেমচন্দ্র নিঃশব্দে সে গহ হইতে নিৰ্ম্মান্ত হইলেন। সপ্তদশ পরিচ্ছেদ ঃ হতভাগিনী যাতনার সময় নারীই সাস্তুনা দিতে পারে। আমি সমস্ত কথা সত্রীর নিকট কহিব, তিনি যাহা পারেন করিবেন। গহে প্রবেশ করিবামাত্র বিন্দ দেখিলেন, হেমচন্দ্রের মুখমন্ডল অতিশয় গম্ভীর, অতিশয় লান। ঔৎসক্যের সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন—আজ কি হয়েছে গা ? তোমার মুখখানি অমন হয়ে গেছে কেন ? হেম। বলছি, বসো। সন্ধা শায়েছে ? বিন্দ। সন্ধা খাওয়াদাওয়া করে শায়েছে। কোন মন্দ খবর পাও নাই ? হেম। শন, বলছি। এই বলিয়া উভয়ে উপবেশন করিলে হেমচন্দ্র আদ্যোপাস্ত যাহা যাহা দেখিয়াছিলেন ও শনিয়াছিলেন, বিন্দর নিকট বলিলেন। বিন্দ আঁচল দিয়া আশ্রমবিন্দ মোচন করিয়া বলিলেন, “এটী হবে তা আমি জানতেম, অভাগিনী উমা তা জানত। হেম । কেমন করে ? বিন্দ। তা জানি না, বোধ হয় কলকেতা হতে পাবেই কিছু কিছু সংবাদ পেয়েছিল, সে চাপা মেয়ে, কোন কথা শীঘ্র বলে না, কিন্তু তালপুকুর থেকে আসবার সময় সে অভাগিনীর কান্না কোঁদেছিল। হেম। এখন উপায় ? যেরপে শনছি, তাতে ধনেশ্বরের কুলের ধন দু'বৎসরে লোপ হবে, ধনঞ্জয় রোগগ্ৰস্ত হবে, উমা দুবৎসরে পথের কাঙ্গালিনী হবে। বিন্দ। সে ত দু'বৎসরের পরের কথা, এখন উমা কেমন আছে ? সে সবভাবতঃ অভিমানিনী, স্বামীর আচরণ কেমন করে সহ্য করছে ? তালপুকুর হতে এসে সেই বড় বাড়ীতে ছেলেমানষে একা কেমন করে আছে ? তার ছেলেপলে নেই, বন্ধবোন্ধব যে কেউ নেই, যার কাছে মনের কথা বলে। তুমি কেন একবার গিয়ে দুটো কথা কয়ে এলে না ? や brö