পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী তাহার পর উমাতারার কথা হইল; বিন্দ যাহা যাহা দেখিয়াছিলেন, অনেক আক্ষেপ করিয়া কালীকে তাহা শনাইলেন, কালীও খানিক কাঁদিলেন। বিন্দ শেষে বলিলেন,—আমি আজই জ্যেঠাইমাকে চিঠি লিখব, জ্যেঠাইমা আসন, যা করবার করন, আমি আর এ কষ্ট দেখতে পারি না। কলকেতা ছাড়তে পারলে বাঁচি, আবার তালপুকুরে যেতে পারলে বাঁচি। A. কালী। তোমাদের এই ভাদ্র মাসে যাবার কথা ছিল না ? ভাদু মাস ত প্রায় শেষ হল। বিন্দ। কথা ত ছিল, কিন্তু হয়ে উঠল কৈ ? আবার উমাতারার এই রোগ, তোমাদের বাড়ীতে রোগ, এ সব রেখে ত যেতে পারিনি ? পদুজার পর না হলে আমাদের যাওয়া হচ্ছে না, পজোরও বড় দেরী নেই, মাস খানেকও নেই। কালী। তবে তোমাদের ধানটান দেখবে কে ? বিন্দ। বাব সনাতনকে জমী ভাগে দিয়ে এসেছেন। সনাতনই আমাদের পরাতন লোক, আমাদের অংশ গোলায় বন্ধ করে রাখবে, তার কোনও ভাবনা নেই। আর কতক্ষণ কথাবাত্তার পর কালীতারা চলিয়া গেলেন। সন্ধ্যার সময় হেমচন্দ্র বাটী আসিলেন। বিন্দ কিছু জলখাবার আনিয়া দিলেন, এবং উভয়ে পরামশা করিতে লাগিলেন। হেম। এদিকে উমাতারার রোগ ও দন্দশা, ওদিকে কালীতারার স্বামীর উৎকট পীড়া, আবার তুমি বলছ শরৎও নাকি ছেলেমানষের মত শরীরের যত্ন না নিয়ে পড়াশনা করছে। , এখন কোন দিক সামলাই ? উপায় কি ? বিপদে তুমিই মন্ত্রী, এর উপায় কি ঠিক ? করেছ ? বিন্দর। ললাটের লিখন রাজার সৈন্যেও ফিরায় না, মন্ত্রীর মন্ত্রণায়ও ফিরায় না। তবে আমাদের যা সাধ্য তা করব। হেম । তব কি ঠিক করলে ? উমাকে কি বলে এলে ? বিন্দ। কি আর বলব ? আমার ঘটে যেটুকু বুদ্ধি আছে, তাই দিয়ে এলেম, এখনকার চঞ্চলমতি স্বামীকে বশ করবার যে মন্ত্ৰটী জানি, তাই শিখিয়ে এলেম । হেম। সে ভীষণ মন্ত্ৰটী কি, জানতে পারি কি ? বিন্দর। জানবে না কেন ? উমার বাড়ীতে বড় একটী কাঁঠালগাছ আছে: তারই ডাল নিয়ে প্রকাণ্ড একটী মগের প্রস্তুত করে বিপথগামী স্বামীকে তন্দ্বারা বিশেষরাপে শিক্ষা দেওয়া। এই মহামন্ত্ৰ! হেম । না, বহেস্পতির এরপে মন্ত্র নয়। বিন্দ। তবে কিরুপ ? হেম। কচি অীবের অম্বল রেধে দেওয়া, পাকা অেিবর সমিস্ট রস করে দেওয়া, বৃহস্পতির মন্ত্রের এইরুপ কয়েকটী সাধন দেখেছি, আর বেশী বড় জানি না। বিন্দ। তবে তাই শিখিয়ে এসেছি। আর জ্যেঠাইমাকে পত্র লিখব, তিনি এলে বোধ হয় উমার মনও একটা ভাল হবে, ধনঞ্জয়বাব ও লজার খাতিরে কয়েক মাস একটা সাবধানে থাকবেন। 岬 হেম। জ্যেঠাইমা জামাইয়ের বাড়ীতে আসবেন কেন ? বিন্দন। আমি সব কথা লিখলে আসবেন। হাজার হোক মার মন । হেম। আর কালীতারার কি উপায় করলে ? বিন্দন। সেটী তোমাকে দেখতে হবে। তোমার চাকরীটাকরী ত বিলক্ষণ হল, এখন প্রত্যহ একবার করে কালীঘাটে গিয়ে রোগীর যত্ন করতে হবে। সে বাড়ীতে মানুষের মত মানুষ একজনও নেই, হয়ত ঠাকুরবাড়ীর প্রসাদগুলো খাইয়ে রোগীর রোগ আরও উৎকট করবে। চিকিৎসাটী যাতে ভাল করে হয়, তুমি দেখো। হেম। তা আমার যা সাধ্য করব। কাল প্রত্যুষেই সেখানে যাব। আর শরতের কি বন্দোবস্ত করলে ? তুমি রইলে একদিকে, আমি রইলেম আর একদিকে, শরৎবাবকে একট দেখেশুনে কে? বিন্দ। তাই ত, সে পাগলা ছেলেটার কথা কৈ আমি ভাবিনি। ওলো সন্ধা, তুই একটা শরৎবাবর যত্নটত্ব করতে পারবি ? নৈলে ত সে পড়ে পড়ে সারা হল। ○ > ミ