পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रह्ञश्व ज्ञछनावली তিনি নামে মাত্র সেনাপতি; রাজা টোডরমল্পই সবে সব্বা। টোডরমল্ল দ্বিতীয়বার বঙ্গদেশে আসিয়া রাজমহলের মহাযুদ্ধে দায়দেখাঁকে পরাস্ত করেন, এবং সেই যুদ্ধে দায়দখাঁ নিহত হয়েন। দিল্লীর হোসেনকুলীখাঁকে বঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যার শাসনকত্তা নিযুক্ত করেন, এবং টোডরমল্প পনরায় দিল্লী প্রত্যাগমন করেন। ১৫৮০ খৃস্টাব্দে পনরায় বিদ্রোহানল প্রজবলিত হইল; এবার দেশে নব আগভুক মোগল সেনাপতি ও জায়গীরদারগণই বিদ্রোহী হইলেন। আকবরশাহ অতিশয় বৃদ্ধিমান সমাট ছিলেন। তিনি দেখিলেন যে, যে হিন্দসেনাপতি দুইবার সাহায্য লইয়া মোগল বিদ্রোহীদিগকে পরাস্ত করিতে পারিবেন না; সুতরাং ১৫৮০ খৃস্টাব্দে টোডরমল্ল সেনাপতি ও শাসনকর্তৃপদে নিযুক্ত হইয়া বঙ্গদেশে প্রেরিত হইলেন। কি প্রকারে এই নিঃশঙ্ক বীরপরষে তৃতীয়বার বঙ্গদেশ জয় করিয়া দুই বৎসরকাল বঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যা প্রদেশ শাসন করেন, তাহা এই আখ্যায়িকায় বিবত হইবে। এই আখ্যায়িকায় ১৫৮o খাটাব্দের কথা লিখিত হইবে, সতরাং সেই সময়ে হিন্দ ও মুসলমান, জমীদার ও প্রজা, পাঠান ও মোগলদিগের মধ্যে কি প্রকার সম্প্রবন্ধ ছিল, সংক্ষেপে বণিত হইল। একদিন প্রাতঃকালে একজন ব্রহ্মচারী নদীয়া জেলার অন্তঃপাতী ইচ্ছামতী নদীতীরস্থ রন্দ্রপরে নামক এক ক্ষুদ্র গ্রামাভিমুখে গমন করিতেছিলেন। চারিদিকে কেবল বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত্র দটিপথে পতিত হইতেছে; প্রভাতবায় রহিয়া রহিয়া শস্যক্ষেত্রের উপর খেলা করিতেছে: শস্য আনন্দে যেন তাহার সঙ্গে সঙ্গে নত্য করিতেছে। বহৃদরে প্রান্তরসীমায় দুই একটী পল্লীগ্রাম দেখা যাইতেছে ; কুটীরাবলী দেখা যায় না, কেবল নিবিড় হরিৎবণ বাক্ষাবলী নয়নগোচর হইতেছে। আকাশ অতি নীল, পক্ষী সকল গান করিতেছে, এবং কৃষকগণও পল্লীগ্রাম হইতে আসিতে আসিতে মনের উল্লাসে গান করিতেছে। ব্রহ্মচারী যাইতে যাইতে একজন লোককে জিজ্ঞাসা করিলেন,—রন্দ্রপরে আর কতদার ? সে উত্তর করিল,—অধিক দরে নাই, প্রায় আধ ক্রোশ হইবে । ব্ৰহ্মচারী যাহার সহিত কথা কহিলেন, তাহার বয়স ৪০ বৎসর হইয়াছে; সে জাতিতে কৈবত্ত, কিন্তু বেশভূষা ভদ্রোচিত । সে ব্রহ্মচারীকে প্রণাম করিয়া বলিল,—ঠাকুর, রন্দ্রপরে যাইতেছেন ? আমি তথাকার লোক; চলন, একত্রে যাই, আপনার নাম কি, নিবাস কোথায় ? ব্রাহ্মণ উত্তর করিলেন,—আমার নাম শিখন্ডিবাহন, ইচ্ছামতী নদীতীরস্থ মহেশ্বরমন্দির হইতে আসিতেছি। তোমার নাম কি ? নবীন। আমার নাম নবীন দাস ; এইস্থানে আমার কিছু জমী আছে, সেইজন্য আমি আসিয়াছিলাম । শিখড়ি। এবার শস্য কেমন হইয়াছে ? নবীন। ঠাকুর, আমার দুই কুড়ি বৎসর পার হইয়াছে, এমন সন্দের শস্য কখন দেখি নাই। এ বৎসর বিধাতার অনুগ্রহের সীমা নাই। ক্ষণেক পর নবীন দাস আবার বলিতে লাগিল,—ঠাকুর । আমাদের জমীদারপত্রের কি হইয়াছে, শনিয়াছেন ? শিখন্ডি। না : কি হইয়াছে ? নবীন। তিনি এক প্রকার উন্মত্তের মত হইয়াছেন, কারণ কেহ জানে না। তাঁহার পিতা তাহার আরোগ্যের জন্য কত যত্ন করিলেন, কোন ফল হইল না। আপনি ঠাকুর লেখাপড়া জানেন, আপনি কিছু স্থির করিতে পারেন ? শিখণ্ডি। শাস্ত্রে উন্মত্ততার অনেক কারণ নিন্দেশ করে,-—বন্ধর বিয়োগ, রমণীর প্রেম— নবীন। না, সেরাপ নহে ; আমাদের জমীদারপত্র কত প্রকার বিহবল কথা বলেন—কিছু ঠিকানা থাকে না। বোধ হয়, অনেক লেখাপড়া শিখিয়া উন্মত্তের ন্যায় হইয়াছেন। শিখন্ডি। কি বলেন, বলিতে পার ? নবীন। শনিয়াছি, আমাদের জমীদারপত্র কখন কখন বলেন, বৈরনিৰ্য্যাতনে পরম সংখ: কখন বলেন, সন্ত্রীরত্ব পরম রত্ন ; কখন বলেন, বন্ধ হত্যার মত পাপ নাই; জ্ঞাবার কখন বলেন, প্রজার কম্পট দেখা অপেক্ষা মন্ত্যু ভাল। ૨