পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংসায় ত বিয়ে দেয় না, তাই বাসায় একলা থেকে বই পড়ে পড়ে পাগলের মত হয়ে গিয়েছে, কি বলে, কি কয়, তার ঠিক নেই। ঝি। হ্যাঁ গা, তা শরৎবাব পাগলই হক আর ছাগলই হক, পরের বাড়ী এসে উৎপাত করে কেন ? বিয়ে-পাগলা হয়ে থাকে, একটা বিয়ে করকে গিয়ে, তোমাকে এসে টানাটানি করে কেন ? তোমাকে বিয়ে করতে চায় নাকি ? বিন্দ। দরে পোড়ারমুখী! তোর মখে কি কথা আটকায় না লা ? যা মুখে আসে তাই বলিস ? শরৎবাব একটী মেয়েকে দেখেছে, তার সঙ্গে বিয়ে করতে চায়। তা শরৎবাব সে কথা বাড়ীর কাউকে বলতে পারে না, লজা করে, তাই আমার কাছে বলতে এসেছিল। ঝি। সে কে গা ? কোন মেয়েটী ? বিন্দ । তা জানাবি এখন, সম্বন্ধ যদি ঠিক হয়, তোরা সবাই জানাবি। ঝি। হ্যাঁ গা, আর লকোলে চলবে কেন ? আমরা কি আর কিছ জানিনি গা ? আমরা ত আর বড়ো হাবড়া হইনি, চখের মাথাও খাইনি, কাণের মাথাও খাইনি। ঐ যে সন্ধা সন্ধা করে চে’চিয়ে শরৎবাব কাঁদছিলেন, যেন সন্ধার জন্যে বকে ফেটে যাচ্ছিল, তা কি আর শুনিনি গা ? এ কথা তোমরা বলবে কেন? এ কথা কি ভন্দরনোকে বলে, না কেউ কখনও শুনেছে। বিধবার আবার বিয়ে ? ও মা ছি! ছিঃ! ছি! ভন্দরনোককে দণ্ডবং, আমাদের ঘরে এমন কথাটী হলে তাকে একঘরে করে! ও মা ছি! ছিঃ! ছি! এমন কলঙ্কের কথা কি কেউ কোথাও শুনেছে; এ ভন্দরের ঘর ? মচি মনচুনমানের ঘরে ত এমন কথা কেউ শুনেনি। ও মা ছি! ছিঃ! ছি! ও মা অবাক কল্লে মা, ও মা কোথা যাব মা—ইত্যাদি ইত্যাদি। বিন্দু এবার যথার্থই ভনীত হইলেন। বড় মানুষের ঘরের গৰিবণী মন্দভাষিণী ঝি যতক্ষণ তাঁহার উপর ব্যঙ্গ করিতেছিল, ততক্ষণ বিন্দ সহ্য করিয়াছিলেন, কিন্তু সন্ধার নামে এ কলঙ্ক রটাইবে ভাবিয়া বিন্দ হতজ্ঞান হইলেন। শরতের পাগলামি প্রস্তাবে তিনি কখনই সম্মত হইবেন না স্থির করিয়াছিলেন, কিন্তু বিধবার নামে সামান্য মিথ্যা কলঙ্কও বড় ভয়ানক, মিথ্যা সত্য কেহ ভাবে না, কলঙ্ক চারি দিকে বিস্তত হয়, অপনীত হয় না। বৃদ্ধিমতী বিন্দ তখন একটা চিন্তা করিয়া বাক্স হইতে একটী টাকা বাহির করিলেন। টাকাটী বিয়ের হাতে দিয়া বলিলেন,—ঝি, তুই দেবীবাবর বাড়ীতে অনেক দিন আছিস, পজের সময় তোকে আর কি দিব, এই একটী টাকা নিয়ে যা, একখানা নতন কাপড় কিনিস । আর শরৎ যে পাগলের মত কথাগুলো বলেছে, সে কথা আর কাউকে বলিসনি। আজ দশমীর দিন, বোধ হয় কোথাও সিদ্ধি খেয়ে এসেছিল, তাই পাগলের মত বকেছিল। তা পাগলের কথা কি ধরতে আছে, ভদ্রঘরে এমনও কি হয়, আমাদের একটা মান-সম্প্রমও আছে, শরৎবাবরেও মা আছেন, বোন আছেন, এমন কাজও কি হয়ে থাকে? তা পাগলের কথা যা শুনেছিস শনেছিস, কাউকে বলিসনি বাছা, এ পাগলামি কথা যেন কেউ টের পায় না। চকচকে টাকাটী দেখিয়া ঝির মত একটা ফিরিল (অনেকেরই ফেরে), সে বলিল—তা বৈ কি মা, পাগলের কথা কি ধরতে আছে, না বলতে আছে ? শরৎবাব একটা সিদ্ধি খেয়েছিলেন বই ত নয়, এই আমাদের বাড়ীর ছেলেরা যে বোতল বোতল কি আনাচ্ছে আর খাচ্ছে। আর কি বা আচরণ ! রাত্রিতে বাড়ী থাকে না, বাপ মাকে একটা ভয় করে না, লজা করে না। এখনকার সব এমনি হয়েছে গো, তা এখনকার ছেলেদের কথা কি ধরতে আছে ? শরৎবাব যা বলেছে বলেছে, তা সে কথা কি আমি মখে আনতে পারি, না কাউকে বলতে পারি? কাউকে বলব না মা, তুমি কিছু ভেব না। ঝি তুষ্ট হইয়া বাড়ী হইতে বাহির হইল। বলা বাহুল্য যে মহত্তের মধ্যে তারের সংবাদ যেমন জগতের এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রান্ত পৰ্য্যন্ত ভ্ৰমণ করে, বিন্দর বাড়ীর কথা সেই রাত্রিতেই সেইরাপ ভবানীপুর, কালীঘাট, কলিকাতা অতিক্রম করিল। পরদিন প্রাতে ঢ়ি ঢ়ি পড়িয়া গেল। দেবীবাবর মহিষী পরদিন পা ছড়াইয়া তেল মাখিতে মাখিতে এই কলঙ্ককথা শুনিয়া একেবারে ভেক দশনে সপোর ন্যায় ফোঁস করিয়া উঠিলেন। হ্যাঁ গা, তা হবে না কেন গা, তা হবে না কেন? এখন ত আর ভদ্র ইতরে বাছবিচার নেই, రిసిసి