পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথমে জনান্দনবাব, গোবদ্ধ নবাব, হরিহরবাব প্রভৃতি বদ্ধ সমাজপতিগণ আসিয়া হেমবাবর সঙ্গে অনেকক্ষণ এদিক ওদিক কথাবাত্ত কহিতে লাগিলেন। হেমবাবা অতি ভদ্র কায়স্থ সন্তান, তাঁহার শিষ্টাচারে সকলেই তুষ্ট আছেন, তাঁহারা সব্বদাই হেমবাবর তত্ত্ব লইয়া থাকেন ও হিত কামনা করেন, হেমবাবর চাকরীর কি হইল, তিনি সাহেবদের সঙ্গে দেখা করিয়া ভাল করিয়া চেস্টা করেন না কেন, তাঁহারা হেমবাবকে কোন কোন সাহেবের কাছে লইয়া যাইবেন, ইত্যাদি অনেক স্নেহগভূ কথায় আপনাদিগের অকৃত্রিম স্নেহ (যাহার পরিচয় হেমবাব ইতিপথে পান নাই) প্রকাশ করিতে লাগিলেন। অনেকক্ষণ পর শরৎবাবর কথা উঠিল, হেমবাবরে ঘরের কথাটী উঠিল। জনান্দনবাব বলিলেন,—এখনকার কালেজের ছেলেরা সকলেই ঐরাপ, তাহারা রীতিনীতি বঝে না, পৈতৃক আচার অনুসারে চলে না, সতরাং দোষ ঘটে। তা তুমি বাব বৃদ্ধিমান ছেলে, তুমি কি আর নিবোধের মত কাজ করবে, তা আমরা সবপ্নেও মনে করি না। তোমাকে সৎপরামর্শ দেওয়াই বাহুল্য। গোবদ্ধ নবাব। তবে কি জান বাবা, আমরা কয়েকজন বড়া আছি, যতদিন না মরি, তোমাদেরই হিত কামনা করি, দটা কথা না বললেই নয়। শরৎটা লক্ষীছাড়া ছেলে, আমাদের কথা শুনে না, যা ইচ্ছে করে, তা ওটাকে আর বড় বাড়ীতে আসতে দিও না। তা হলেই এ কথাটা আর কেউ বড় শনতে পাবে না, কে আর কার কথা মনে করে রাখে বল ? হরিহরবাব। হাঁ, তা বৈ কি ? ঐ যে মিত্তিরজার বাড়ীতে সে দিন একটা কলঙ্ক উঠিল, তোমরা সে কথা অবশ্যই জান, (এই বলিয়া কলঙ্কটী আর একবার প্রকাশ করা হইল) তা মিত্তিরজা বৃদ্ধিমান লোক, চাপিয়া গেলেন, এখন আর সে কথা কে তোলে বল ? জনান্দনবাব । হাঁ, তা বৈ কি ? কে বা কার কথা মনে রাখে ? আজকাল সকলেই আপনার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সে কালে এক রীতি ছিল, গ্রামের বড়াদের কথাটী না নিয়ে পাড়ার কোন কাজ হত না। কেমন বল না গোবদ্ধ নবাব, ঐ সেকালে আমাদের মতামত না নিয়ে কি কেউ কোনও কাজ করতে পারত ? গোবদ্ধ নবাব। সাধ্যি কি? আর এখনই যাঁরা একটী শিণ্ট-শাস্ত, তাঁরা আমাদের না জিজ্ঞাসা করে কিছু করেন না। ঐ ঘোষজা মশাইয়ের বিধবা ভাদ্রবধকে নিয়ে সে বৎসর এইরুপ একটা কলঙ্ক হল, (সে কলঙ্কটী সম্পর্ণেরুপে ব্যাখ্যা করা হইল) তা ঘোষজা মশাই তখনই আমার কাছে এসে বললেন, “হরিহরবাবা করি কি ? যাই যে ?” তা আমি বললেম, “যখন আমার কাছে এসেছ তখন কিছ ভয় নেই, আমি এর একটা কিনারা করে দিবই।” কি বল জনান্দনবাব, আমরা অনেক দেখেছি, শুনেছি, বিপদ আপদের সময় আমাদের জানালে আমরা কোন না একটা উপায় করে দিতে পারি। জনান্দনবাব । তা বৈ কি। হরিহরবাব তা আমি ভাবিয়া চিন্তিয়া ঘোষজাকে বলিলাম, “তোমার ভাদ্রবোঁকে কাশী জনান্দনবাব, গোবদ্ধ নবাব ও হরিহরবাব একবরে বলিলেন-না, না, আমরা দোষের