পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাৰলী করলেন। তা আমরাও তাই বলছি, তোমার শ্যালীর চরিত্রে কোন দোষ থাকঙ্গেও কি সে কথা মুখে আনতে আছে ? রাম ! আমরা কি কারও কলঙ্কের কথা মুখে আনতে পারি ? তা নয়, তা নয়। তবে গোলমালটা এইরুপে চুকিয়ে ফেললেই ভাল। সকল বিষয়েই সরল পথ অবলম্বন করাই ভাল, সরলপথেই ধৰ্ম্ম । o জনান্দনবাব। তা বৈ কি, তা বৈ কি, “যতোধ্যমগুতোজয়ঃ”—শাপেই এই কথা আছে। হরিহরবাব যে কথাটা বললেন তাই সৎপথ, তার কি আর সন্দেহ আছে। তুমি বন্ধিমান ছেলে, এবারটা যেন চেপে গেলে। কিন্তু তুমি ছেলেমানবে। ঘরে অল্পবয়স্কা বিধবা কি রাখতে আছে ? কখন কি হয় তার কি ঠিক আছে ? গোবদ্ধ নবাব । তা বৈ কি, শাস্ত্রে বলে সহস্রাক্ষ ইন্দ্রও নারীর গুপ্ত আচরণ দেখতে পান না, পঞ্চমুখ ব্ৰহ্মাও নারীর গুপ্ত কথা জানতে পারেন না। তুমি ত বাবা ছেলেমানষে। হরিহরবাব। তা বৈ কি। এবার যেন চাপিয়া গেলে, কিন্তু দৈবক্রমে–দৈবের কথা বলা যায় না—যদি যথাকালে তরণেবয়স্কা বিধবা একটী সন্তান প্রসব করে, তাহা হইলে কি আর চাপিবার যো থাকিবে ? লোকে ত একেই কলঙ্কপ্রিয়, তখন কি আর রক্ষা থাকিবে ? এখনই লোকে সেই কথা বলিতেছে। তা কাশীধামে পাঠানই শ্রেয়ঃ, ইত্যাদি নানা সারগভর্ণ পরামর্শ দিয়া বদ্ধগণ বিদায় হইলেন। হেমচন্দ্র রোষে ও অভিমানে উত্তর দিতে পারিলেন না, তাঁহার জলন্ত নয়ন হইতে একবিন্দ আশ্রম বিমোচন করিলেন। তাহার পর রামলাল, শ্যামলাল, যদলাল প্রভৃতি নব্যের দল হেমচন্দ্রকে পরামশামত দান করিতে আসিলেন। তাঁহাদের মধ্যে কেহ শিক্ষিত; কেহ এন্ট্রান্স ক্লাস পৰ্য্যস্ত পাঠ করিয়া পরে বাড়ীতেই (রেনলডস প্রভৃতি) সাহিত্য আলোচনা করিয়া বিজ্ঞ হইয়াছেন। কেহ সচ্চরিত্র; কেহ বা সভ্যতা-সম্মত আমোদগুলি পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছেন ও দেখেন। কিন্তু পরামর্শদানে সমান সক্ষম, সকলেই হেমচন্দ্রের "হিতৈষী" বন্ধ । তাঁহারা অদ্য প্রাতে একটী কথা শুনিয়া হেমবাবরে নিকট আসিলেন, হেমবাবরে অযথা নিন্দার প্রতিবাদ করাই তাঁহাদের একান্ত ইচ্ছা, পাড়ার একজন বিদ্যোৎসাহী যুবক ও একজন ধৰ্ম্মপরায়ণা বিধবার অযথা অপবাদ তাঁহারা সহ্য করিতে পারেন না, সেই জন্যই হেমবাবরে নিকট প্রকৃত অবস্থা জানিতে আসিলেন। কিন্তু হেমবাবরে যদি কোন কথা বলিতে কোনও আপত্তি থাকে, তাহা হইলে তাঁহারা জানিতে ইচ্ছা করেন না। কেননা, কাহারও গুপ্ত কথা অনুসন্ধান করা সরচি-সম্মত কায্য নহে। কিন্তু যদি হেমবাবর বলিতে কোন আপত্তি না থাকে, তাহা হইলে-ইত্যাদি ইত্যাদি নব্য ভাষায় গৌরচন্দ্রিকা অনেকক্ষণ চলিল। হেমবাবর এখন আর লুকাইবার কিছুই নাই, যেরপে অপবাদ রাণী হইয়াছে, তাহাতে সত্য কথা প্রকাশ হওয়াই ভাল। এই অনাহত বন্ধদিগের আগমনে ও প্রশেন তিনি অতিশয় তিক্ত হইলেও ধৈর্য্য অবলম্ববন করিয়া যাহা ঘটনা তাহা জানাইলেন। রামলাল। তা যাহাই হউক, আদ্য যে ঘোর অপবাদ শুনিলাম তাহার অধিকাংশ মিথ্যা জানিয়া আহমাদিত হইলাম। কিন্তু দেখন, সকলে সহজে এ অপবাদটী অবিশ্বাস করিবে না, আপনি সকল সময়ে বাটী থাকেন না, শরৎ কলেজেই কিছু অবাধ্য ও গব্বী", এবং স্বীয় মতগলি লইয়া বড় পদ্ধা করে, এবং নারীর চরিত্র দবিজ্ঞেয়। অতএব অপবাদ সম্বন্ধে সমাজের মনে যদি কিছু সন্দেহ থাকে, তাহা স্বভাবসিদ্ধ, এবং মনুষ্যচরিত্র পয্যালোচনার ফল মাত্র। তা যাহা হউক, আপনি এই বিবাহে আপাততঃ মত করেন নাই, এটী সখের বিষয়। শ্যামলাল। সে কথা যথার্থ। আরও দেখন, এ কাৰ্য্য প্রকৃত সমাজসংস্কার নহে। যে কাষে আমাদের দিন দিন ঐক্য সাধন হইবে, রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি হইবে, তাহাই আমাদের কত্তব্য। পরাতন লোকদিগের ন্যায় আমাদের কোনও “প্রেজডিস” নাই, কিন্তু এ কাষ"টী আমাদিগের সমাজে বিপ্লব ও বিচ্ছেদ ঘটাইবে মাত্র, ইহা দ্বারা আমাদের ঐক্যসাধন হইবে না, অতএব এ কায্য গহির্গত। যদলাল। আরও দেখন, মেলথস বলেন, লোকসংখ্যা যত শীঘ্ৰ বদ্ধি পায়, খাদ্য তত শীঘ্র বদ্ধি পায় না। এই জন্যই সসভ্য দেশে অনেক পরষ ও নারী অবিবাহিত থাকে। আমাদিগের দেশে সেটা হয় না, অতএব নিবেদন বিধবাগুলিকে অবিবাহিতা রাখা কত্তব্য। শ্যামলাল। আর আপনার মত বৃদ্ধিমান লোক এটীও অবশ্য বিবেচনা করিবেন যে, 8O8