পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংসায়ী সবদেশের উন্নতি, ভারতের উন্নতি, আমাদিগের সকলেরই উদ্দেশ্য; তাহাও বিধবাবিবাহ স্বায়া বিশেষরপে সংঘটিত হইবে না। আমার সামান্য ক্ষমতা দ্বারা যতদরে দেশের উন্নতি হয়, আমি তাহার চেষ্টা করিতেছি। একটী লাইব্রেরী স্থাপন করিয়াছি, দেশস্থ যাবতীয় গ্রন্থকারদিগকে পাস্তকের জন্য পত্র লিখিয়াছি, এবং প্রতি শনিবার সেই লাইব্রেরীতে কয়েকজন বন্ধ সমবেত হয়েন, রাজনৈতিক তকও করিয়া থাকেন। আপনার যদি অবকাশ থাকে, তবে এই আগামী শনিবার আসিলে আমরা বড়ই তুষ্ট হইব। বদলাল। আরও দেখন, আমাদের সংসারে যে কবিত্ব, যে মধুরত্বটুকু আছে, আমাদিগের গহে গহে যে অমতটুকু লাক্কায়িত আছে, কি কাঙ্গাল কি ধনী সকল গহে যে অনিবাচনীয় মিষ্টত্বটুকু আছে, ইউরোপীয় জাতিদিগের মধ্যে সেটকু কোথায় ? বৈদেশিক আচরণ অনুকরণ করিবেন না, তাহাতে আমাদিগের গহকম লুপ্ত হইবে, ভারতবাসীর শেষ সাখটকু বিলুপ্ত হইবে, আৰ্য্য-ধর্মের নিস্তেজ দীপটী একেবারে নিব্বাণ হইবে। ইউরোপীয়দিগের সদগণগলি অনুকরণ করন, আমাদিগের গহ-সংসারের কবিত্ব, মিণ্টত্ব ও হিন্দুত্বটুকু ধংস করবেন না। রামলাল। সে কথা সত্য। যদবাবরে কথাগুলি শুনিবেন, তাঁহার ন্যায় বিজ্ঞ স্বদেশহিতৈষী লোক আজকাল দেখা যায় না। তাঁহার কথাগুলি সারগভ, তাহা আর আমার বলা বাহুল্য। আর যে অপবাদ শুনিলাম, তাহা যদি সত্য হয়—যাহা অনেকে বিশ্বাস করিবে, যদিও সে বিষয়ে আমার নিজের মত সমস্ত প্রমাণাদি না দেখিয়া ব্যক্ত করিতে চাহি না—যদি সে অপবাদ সত্য হয়, তাহা হইলে এইরুপ যবেক ও এইরুপ রমণীকে উৎসাহিত করিলে ভারতের উন্নতি হওয়া দরে থাকুক অধোগতি হইবে। হেমচন্দ্র এরাপ তকের উত্তর করিতেও ঘৃণা বোধ করিলেন; নব্য পরামর্শদাতৃগণ ক্ষণেক পর উঠিয়া গেলেন। তাহার পর সমাজ-সংরক্ষণের দুই এক জন চাই, দিগগজ ঠাকুরকে লইয়া, হেমবাবরে বাটী আসিলেন। দিগগজ ঠাকুর ভবানীপুরের মধ্যে হিন্দু ধমের একটী অকটলনী মনমেণ্ট, ধৰ্ম্মশাস্ত্রের একটী পেসিফিক সমদ্র, বিদ্যায় একটী শডেধারী দিগগজ, তকে বন্য বরাহ অবতার। বেদ, বেদান্ত, শ্রীতি, সমতি, ন্যায়, দশন, পরাণ, ইতিহাস, ব্যাকরণ, অভিধান, সকলই তাঁহার কন্ঠস্থ, সকল বিষয়েই তাঁহার সমান অধিকার। তিনি আপন পরিমাণ-রহিত বিদ্যাপয়োধি হইতে অজস্র তকম্রোত বষণ করিয়া হেমচন্দ্রকে একেবারে প্লাবিত করিলেন, হেমচন্দ্র একেবারে নিরক্তর হইয়া বসিয়া রহিলেন। যখন দিগগজ ঠাকুরের গলা ভাঙ্গিয়া গেল, বাক্যক্ষমতা শেষ হইল (তক-ক্ষমতা শেষ হইবার নহে), তখন তিনি কাশিতে কাশিতে আরক্ত নয়নে নিরস্ত হইলেন । হেম তখন ধীরে ধীরে উত্তর করিলেন,—মহাশয়, এ কায্য করিতে এখনও আমার মত নাই, সতরাং আপনার এক্ষণে এইরুপ পরিশ্রম স্বীকার করার বিশেষ আবশ্যক নাই। তবে আমার ক্ষুদ্র বৃদ্ধি ও পড়াশনায় যতদুর উপলব্ধি হয়, তাহাতে বোধ হয়, বিধবাবিবাহ সম্বন্ধে আমাদিগের শাসেও দটী মত আছে, ভিন্ন ভিন্ন কালে ভিন্ন ভিন্ন প্রকার প্রথা ছিল। বৈদিক কালে বিধবাবিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল; মন প্রভৃতি শাস্ত্র প্রণেতাদিগের কালে এ প্রথাটী একেবারে নিষিদ্ধ হয় নাই, কিন্তু ক্রমে উঠিয়া যাইতেছিল। পরে পৌরাণিক কালে এ প্রথাটী একেবারে নিষিদ্ধ হইয়া যায়। আমার শাস্ত্রে অধিকার নাই, আলোচনারও ক্ষমতা নাই, অন্য পণ্ডিতদিগের মখে যাহা শনিয়াছি, তাহাই বলিতেছি। শনিয়াছি, শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতাগ্রগণ্য বিদ্যাসাগর মহাশয়ও বলেন, শাস্ত্রের অসক্ষমত নহে। যাহারা শ্বিপ্রহর রজনীতে সহসা একটি গ্রামে আগন লাগিতে দেখিয়াছেন, আকাশের রক্তবর্ণ দেখিয়াছেন, অগ্নির প্রজবলিত অভ্রলেহী জিহৰা দেখিয়াছেন, তাঁহারাই তৎকালে দিগগজ ঠাকুরের মাখের ভঙ্গী কতক পরিমাণে অনুভব করিতে পারেন। অগ্নি-গজন-বিনিন্দিত সবরে তিনি কহিলেন,—সেই (কাশি) সেই বিধবাবিবাহ প্রচারক বিদ্যাসাগর পণ্ডিত ? সে আবার পণ্ডিত ? সে বর্ণপরিচয়ের পণ্ডিত, বর্ণপরিচয় লিখিয়া পণ্ডিত হইয়াছে, (অধিক কাশি) একটা নতন প্রথা লইয়া দেশের সব্বনাশ করিয়াছে, ধমে কুঠারাঘাত করিয়াছে, মনুষ্যহৃদয়ের স্তরে স্তরে শেল নিক্ষেপ করিয়াছে, হিন্দনচরিত্র অনপনেয় কলঞ্চকরাশিতে আবত করিয়াছে, আয়নাম, আষ"গৌরব, আয্যরীতিনীতি একেবারে সমুদ্রবক্ষে মগ্ন করিয়াছে,

  • 80&