পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wrosso গহে দীপাবলীতে উদ্দীপ্ত হয়। সে দিন অমাবস্যার অন্ধকার রাত্রি আলোকে পরিপন্ণ হয়, আকাশের নিম্মল নক্ষত্রসমুহ নিস্তন্ধে জগতের নক্ষত্র দেখিয়া হাস্য করে। ধনীর গহে উজ্জল আলোক-শ্রেণীতে পরিপণ হয়, দরিদ্র গহিণী একটী পয়সার তেল কিনিয়া কোন প্রকারে পাঁচটী প্রদীপ সাজাইয়া সন্ধ্যার সময়ে কুটীরদ্ধারে জবালাইয়া দেয়। কলিকাতায় আজ বড় ধর্ম। গহে গহে তুবড়ী উজৰল অগ্নিকণা উদ্গিরণ করিতেছে, ষেন আমাদের টাউন-হলের সম্বক্তাদিগকে অননুকরণ করিতেছে, সেইরপে গলার আওয়াজের সহিত তাহাদের কার্য্য শেষ হয়। র্যবোঁ যশোলিস্টদিগের ন্যায় হাউই বাজি আকাশের দিকে মহাতেজে উঠিতেছে, আবার তেজটুকু বাহির হইয়া গেলেই হে’টমখ হইয়া মাটিতে পড়িতেছে; যাহার মাথায় পড়ে তাহারই সব্বনাশ। বঙ্গদেশের অসংখ্য নব্য কবির ন্যায় আজি রাত্রিতে অসংখ্য পটকা শব্দ করিতেছে—একই আওয়াজে তাহাদের উদ্যম শেষ—কেননা, প্রথম প্রকাশিত পদ্যকুসম বা গীতি কাব্যটী বিক্রয় হইল না। বিষয়ীর ন্যায় চরকি বাজি বাথা ঘুরিয়া ঘুরিয়া মরিতেছে, ঘুরিতে ঘুরিতেও সকলকে জনালাইতেছে, মেজাজ বড় গরম, কেহ কাছে যাইতে পারে না। আর ছ:চা বাজির ক্ষুদ্র ঘৃণিত জীবন ছ’চামি করিয়াই শেষ হইল; কুটীলতা ভিন্ন সরল গতি তাহারা জানে না, পরকে বিরক্ত করা, পরনিন্দা, পরহিংসা, পরগ্রানি তাহাদের জীবিকার উপায়। রারি দশটার পর শরচ্চন্দ্র হেমের বাটীতে উপস্থিত হইলেন। বিন্দর সহিত দেখা করিবেন মনে করিয়াছিলেন, দেখিলেন, স্বয়ং হেমচন্দ্র দ্বারদেশে তাঁহাকে প্রতীক্ষা করিতেছেন। হেমচন্দ্র নিস্তন্ধে শরতের হাত ধরিয়া বাহিরের ঘরে লইয়া গেলেন, শরৎ লডজায় ও উদ্বেগে কাঁপিতে সুতুল মাহত লং রনি বসিলেন, মুখ নত করিয়া রহিলেন, বাক্যস্ফীত্তি’ না । হেম প্রদীপের সলতে উসকাইয়া দিলেন, পরে ধীরে ধীরে বলিলেন,—শরৎ, আমার স্ত্রীকে তুমি যে কথা বলিয়াছিলে, তাহা শনিয়াছি। শরং অনেক কস্ট করিয়া অসফট স্বরে বলিলেন,—যদি আমি দোষ করিয়া থাকি, আপনার বাল্য-সহদের এই একটী দোষ ক্ষমা করন। হেম। শরৎ, তুমি দোষ কর নাই, তোমার উন্নত চরিত্রের উপযুক্ত কায্য করিয়াছ। সমস্ত জগৎ যদি তোমাকে নিন্দা করে, জানিও তোমার প্রতি আমার মত তিলাদ্ধও বিচলিত হয় নাই। শরৎ উত্তর করিতে পারিলেন না, তাঁহার চক্ষর জল হৃদয়ের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিল। হেমচন্দ্র তাহা বুঝিলেন । হেম। আমার স্ত্রী বাল্যকাল অবধি তোমাকে বড় ভালবাসেন, ভ্রাতার মত স্নেহ করেন, তিনি তোমার কথায় দোষ গ্রহণ করেন নাই। তোমার প্রতি আমাদিগের ভক্তি, আমাদিগের স্নেহ চিরকাল একরপ থাকিবে । শরৎ। আপনাদের এই দয়া আমি এ জীবনে ভুলিব না। ক্ষণেক উভয়ে চুপ করিয়া রহিলেন, পরে অনেক কন্টের সহিত শরৎ হৃদয়ের উদ্বেগ দমন করিয়া ধীরে ধীরে বলিলেন— “আমার প্রস্তাব সম্বন্ধে একটা বিবেচনা করিয়াছেন ?" শ্বাসরদ্ধে করিয়া শরৎ উত্তর প্রতীক্ষা করিতে লাগিল, তাহার জীবনের সখ বা দুঃখ এই উত্তরে নিভর করে। হেম। সেই কথাই বলিতেছি। তুমি সকল দিক দেখিয়া, সকল বিষয় আলোচনা করিয়া শরৎ। আমার ক্ষুদ্র বৃদ্ধিতে যতদর বঝিতে পারি, ইহাতে কোনও পক্ষে কোনও ক্ষতি দেখিতে পাই না। যতদর আমার সাধ, আমি বিশেষ চিন্তা করিয়াই এ প্রস্তাবটী করিয়াছি। হেম । শরৎ, তুমি শিক্ষিত, কিন্তু তোমার বয়স অলপ, এই জনাই আমি দই একটী কথা সমরণ করাইয়া দিতেছি। এ বিবাহে অতিশয় লোকনিন্দা। শরৎ। অনেক নিন্দা সহস্ৰ করিয়াছি, জীবনে অনেক নিন্দা সহ্য করিতে প্রস্তুত আছি। কাজটী যদি অন্যায় না হয়, তবে নিন্দাভয়ে আমি জীবনের সখ বিসর্জন করিব ? হেম। তোমাদের একঘরে করিবে । 80ఫి