পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাৰলী শরৎ হতাশ হইয়া উঠিলেন, বিন্দও হাসিতে হাসিতে উঠিলেন। তখন শরৎ বিন্দর দটী হাত ধরিয়া বলিলেন-বিন্দদিদি, তুমি ছেলেবেলা থেকে আঁর্মকে বড় স্নেহ কর, একটী কথা শন। তুমি এ কায্যে সম্মত হইয়াছ, হেমবাব তাহা আমাকে বলিয়াছেন, একবার সেই কথাটী মনখে বলিয়া আমাকে তৃপ্ত কর, একবার আমাদের আশীব্বাদ কর। বিন্দ তখন ধীরে ধীরে , শরৎবাব, ভগবান আমার অভাগিনী ভগিনীর জীবনের সখের উপায় করিয়া দিয়াছেন, তাহাতে কি আমাদের অমত ? ভগবান তোমাকে সুখে রাখনে, তোমার চেস্টাগুলি সফল করন, তোমাকে মান ও যশ দান করন। অভাগিনী সন্ধাকে ভগবান সুখে রাখন, যেন চির-পতিব্ৰতা হইয়া সংসারে সংখলাভ করে। সাশ্রনয়নে শরৎ উত্তর করিলেন--বিন্দ দিদি, জগদীশ্বর তোমার এ দয়ার পরস্কার দিবেন। তোমাদের দয়া, তোমাদের সৎকায্যে সাহস, তোমাদের অনিন্দনীয় স্নেহ জগতে দলেভ। লোকনিন্দা ভয় করিও না; বঙ্গদেশের প্রধান পণ্ডিতগণ বলেন, বিধবাবিবাহ আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রবিরদ্ধে নহে । বিন্দর। শরৎবাব, আমি মেয়েমানুষ, আমি শাস্ত্র বঝি না। কিন্তু আমার ক্ষমাদ্র বৃদ্ধিতে বোধ হয় যে, কচি মেয়েকে আমরা চিরকাল যাতনা দিব এরপে আমাদের শাস্ত্রের মত নয়, দয়াবান পরমেশ্বরেরও ইচ্ছা নয়। জগতের মধ্যে সখী শরচ্চন্দ্র বিন্দর নিকট অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিয়া বিদায় লইলেন। নীচে উঠানে আসিলেন। দেখিলেন, সন্ধা ভাঁড়ার ঘরের দরজায় চাবি দিয়া একটী প্রদীপ হাতে করিয়া বাহির হইয়া আসিতেছে। শরৎ সন্ধাকে প্রায় দই মাস অবধি দেখেন নাই, তাঁহার হৃদয় স্তম্ভিত হইল, শরীর কণ্টকিত হইল। ঐ লাবণ্যময়ী পবিত্ৰহৃদয়া সবগীয়া কন্যা কি শরতের হইবে ? ঐ স্নেহপ্লাবিত নিৰ্ম্মমল নয়ন দটী কি শরৎ চুম্বন করিবেন ? ঐ লতা-বিনিন্দিত কমনীয় পেলব বাহ দটী কি শরৎ নিজ বাহতে ধারণ করবেন ? ঐ কুসুম-বিনিন্দিত লাবণ্য-বিভূষিত দেহলতা কি শরৎ নিজ বক্ষে ধারণ করবেন ? শরতের দরিদ্র কুটীরে কি ঐ সন্দের কুসমটী দিবারাত্রি প্রস্ফটিত থাকিবে ? প্রাতঃকালে উষার আলোকের ন্যায় ঐ প্রণয়-আলোক কি শরতের জীবন আলোকিত কারবে ? সায়ংকালে ঐ স্নেহ-প্রদীপ কি শরতের ক্ষুদ্র কুটীর উত্তজবল করিবে ? অসংখ্য উদ্যমে, অসংখ্য চেস্টায়, ক্লেশে ও পরিশ্রমে, ঐ স্নেহময়ী ভাৰ্য্যা কি শরতের জীবনে শান্তিদান করিবে, জীবন সুখময় করিবে ? এইরুপ চিন্তা-লহরীতে শরতের পণে হৃদয় উথলিতে লাগিল, শরৎ একটী কথা কহিতে পারিলেন না। সন্ধা কবাটের শিকলি দিয়া চাবি বন্ধ করিয়া দেখিল, শরৎবাব দাঁড়াইয়া আছেন। সহসা তাহার গৌরবণ মুখমণ্ডল লজ্জায় রক্তবর্ণ হইল, সন্ধা হেটমখী হইল, মাথার কাপড়টী টানিয়া দিল । আবার শরৎবাবরে কাছে মাথায় কাপড় দিল মনে করিয়া অধিক লজিত হইল, চক্ষ দটী মনুদিত করিল, চক্ষর উপরের চাম পৰ্য্যন্ত লজ্জায় রঞ্জিত হইয়াছে। সন্ধা আর দড়িাইতে পারিল না, দৌড়াইয়া পলাইয়া গেল। সন্ধার সেই রঞ্জিত অবনত মুখখানি অনেক দিন শরতের হৃদয়ে অঙ্কিত রহিল। ক্লেশে, নৈরাশ্যে, পীড়ায়, সে মাত্তি অনেক দিন তাঁহার স্মরণপথে আরোহণ করিয়াছিল। আনন্দ ও উদ্বেগপণ হৃদয়ে শরৎ বাটী আসিলেন। শরতের ভাগ্যে কি এই সবগীয় সুখ যথার্থই আছে ? না অদ্য রজনীর দীপাবলীর ন্যায় এই সখের আশা সহসা নিবিয়া যাইবে, ঘোর অমাবস্যার অন্ধকার শরতের হৃদয় পণ করিবে ? অপরিমিত সুখ মনুষ্যভাগ্যে প্রায় ঘটে না, অপরিমিত সখের সময় মনুষ্যহৃদয়ে এইরুপ ভয়ের উদয় হয়। বাটী আসিবামাত্র শরতের হস্তে একখানি পত্র দিল। শরতের হৃদয় সহসা স্তম্ভিত হইল, কেন হইল শরৎ তাহা জানেন না। উপরে গিয়া বাতির আলোকে শরৎ দেখিলেন, তাঁহার মাতার চিঠি। মাতা গরকে দিয়া পত্র লিখাইয়াছেন। পত্র এইরুপ— “বাছা শরৎ ! তুমি সস্থে শরীরে কুশলে থাক, তোমার চেষ্টা সফল হয়, তোমার জীবন সখময় হয়, তাহাই ভগবানের নিকট দিবারাত্রি প্রার্থনা করিতেছি। “বাছা, আজ একটী নিন্দার কথা শুনিয়া মনে বড় ব্যথা পাইলাম। বাছা শরৎ, তুমি ভাল 8> ミ