পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रद्धप्रश्न ब्रफ़नाबव्नौ দেখা যাইতেছে না। স্নানানস্তর বনপাপ চয়ন করিতে লাগিলেন, পরে নিকটবত্তী এক পরাতন বটবৃক্ষতলে এক শিবমন্দিরে প্রবেশ করিয়া কবাট রুদ্ধ করিলেন। 轉 মন্দিরের ভিতর একটী অপোয়ত শ্বেতপ্রস্তরনিমিত শিব-প্রতিমা ও একটী প্রদীপ ভিন্ন আর কিছই ছিল না; সেই প্রদীপের জ্যোতিঃ রমণীর অবয়বে ও শত্র বসনে পতিত হইতে লাগিল। রমণী অনেককাল যৌবনাবস্থা অতিক্রম করিয়াছেন; বয়ঃক্রম চত্বারিংশং বষের অধিক হইবে, শীর্ণ কলেবর ও দই একটী শত্র কেশ দেখিলে হঠাৎ পঞ্চাশৎ বর্ষেরও অধিক বোধ হয়। শরীর শীর্ণ, দীঘর্ণয়ত, অথচ কোমলতাশন্যে নহে। ললাট উচ্চ ও প্রশস্ত, কিন্তু চিত্তারেখায় গভীরাঙ্কিত। গুচ্ছ গুচ্ছ শ্বেত-কৃষ্ণ কেশরাশি কপোলে, হৃদয়ে ও গণ্ডে লবিত রহিয়াছে। নয়নে যে সমাজৰলতা, তাহা প্রায় নবীনার নয়নেও দেখা যায় না, কিন্তু সে যৌবনের সমাজবলতা নহে, হৃদয়ের চিন্তাগ্নি যেন নয়ন দিয়া বিসফলিঙ্গরাপে বাঁহগত হইতেছে। ওঠে অতি সচিক্কণ অথচ দৃঢ়প্রতিজ্ঞা-প্রকাশক। সমস্ত শরীর গম্ভীর, উন্নত ও বিধবার শ্বেতবস্ত্রে আবত হইয়া অধিকতর গাম্ভীৰ্য্য ধারণ করিয়াছে। রমণী পাপ সকল প্রতিমার সম্মুখে রাখিয়া দ্বপড়বৎ হইয়া প্রণাম করিলেন। অনেকক্ষণ উপাসনা করিতে লাগিলেন। বায় ক্রমশঃই প্রবল হইতে লাগিল। মধ্যে মধ্যে কবাট ঝন ঝন করিয়া উঠিতে লাগিল, প্রদীপ নিৰ্বাপিতপ্রায়, কিন্তু রমণীর মুখমণ্ডলের স্থিরভাবের কিছুমাত্র বৈলক্ষণ্য হইল না। স্থিরভাবে, মাদিতনয়নে, নিপন্দশরীরে, প্রায় এক প্রহর কাল আরাধনা করিতে লাগিলেন। তাঁহার মনে কি কামনা, কি বিষয়ে আরাধনা করিলেন, অনুভব করিতে সাহস করি না। উপাসনা সাঙ্গ হইলে রমণী প্রদীপ লইয়া বাঁহগত হইবার জন্য কবাট খলিলেন । খলিবামাত্র বাতাসে প্রদীপ নিৰ্বাপিত হইল। সেই অন্ধকার নিশীথসময়ে ক্ষীণাঙ্গী প্রবল বায়বেগে কিঞ্চিমাত্র কাতর না হইয়া ধীরে ধীরে রন্দ্রপরের গ্রাম্য পথ দিয়া কুটারাভিমুখে গমন করিতে লাগিলেন। পথ অতি সঙ্কীর্ণ ; উভয় পাশ্বে কেবল জঙ্গল; তাহার পাশ্বে বহৎ বাক্ষসমুহের পত্ররাশি দ্বারা অন্ধকার দ্বিগণ নিবিড় বোধ হইতেছে। সেই বক্ষতলে স্থানে স্থানে একটা কুটনীর দেখা যাইতেছে; কুটীরবাসিগণ সকলেই সপ্ত; জীবজন্তুর শব্দমাত্র নাই। এই প্রকারে মহাশ্বেতা কতক পথ অতিবাহিত করিয়া অবশেষে এক কুটীরে উপস্থিত হইয়া কবাটে আঘাত করিলেন। স্বার ভিতর হইতে উদঘাটিত হইল; মহাশ্বেতা প্রবেশ করিলে ভিতরে প্রদীপহন্তে এক অলপবয়স্কা সত্ৰীলোক পনরায় দ্বার রুদ্ধ করিল। মহাশ্বেতা কি চিন্তা করিতে করিতে আসিতেছিলেন; অল্পবয়স্কার মুখ দেখিবামাত্র সহসা সকল চিন্তা দরে হইল ও পবিত্র স্নেহভাব বদনমণ্ডলে বিকাশ পাইতে লাগিল। বলিলেন,— সরলা, এত রাত্রি হইয়াছে, তুমি এখনও জাগিয়া আছ; যাও মা, শোও গে যাও । এই বলিয়া সস্নেহে সরলাকে আলিঙ্গন করিলেন। সরলা উত্তর করিল,—রাত্রি অধিক হইয়াছে, তা মা আমি জানিতাম না; ব্রহ্মচারী ঠাকুর মহাভারতের কথা বলিতেছিলেন, তাহাই শুনিতেছিলাম। আমার বোধ হয়, মহাভারতের কথা শুনিলে আমি সমস্ত রাত্রি জাগিতে পারি। সরলা প্রদীপ লইয়া যখন শয়নগহে যাইতেছিল, তাহার মাতা অনিমেষলোচনে অনেকক্ষণ তাহার দিকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন ও অদ্ধান্সফটবচনে বলিলেন,-তুমি আমার সব্বস্ব, বিধাতা কি বনশোভার নিমিত্ত এই অমল্য রত্ন, এই অতুল্য পাপ সজেন করিয়াছিলেন ? বলিতে বলিতে যে ঘরে ব্রহ্মচারী ছিলেন, তথায় গমন করিলেন। সরলা শয়নগহে যাইয়া প্রদীপ রাখিল। মাতা শয়ন করিতে আসিবেন বলিয়া দ্বার রুদ্ধ করিল না, প্রদীপও নিবাইল না। তাহার বয়ঃক্রম রয়োদশ বর্ষ হইবে, এখনও যৌবন সম্যকরাপে আবিভূত হয় নাই, মুখ দেখিলে এখনও বালিকা বলিয়া বোধ হয়। অবয়ব বা মুখে বিশেষ রাপের ছটা বা লাবণ্য ছিল না; কবিগণ যেরপে তলবঙ্গী রপেসীদিগের বণনা করিতে ভালবাসেন, আমাদের সরলার সে অপরপে সৌন্দয্যের কিছই ছিল না। তবে শরীর কোমলতাপণ ও মুখমণ্ডলে এক বগীয় মধরিমা ও সরলতা বিরাজমান রহিয়াছে, দেখিলেই বোধ হয়, যেন বালিকাহদয়ে কেবল সশীলতা, সরলতা ও মানব-সাধারণের প্রতি পবিত্র প্রেম এবং প্লেহরাশি বিরাজ করিতেছে। বিশেষ সৌন্দয্যের মধ্যে তাহার মাতার মত নয়নন্দটী সমস্তেজবল – সমাজল, কিন্তু শাস্ত, সরল ও কোমলতাপণ। ওঠস্বয় বিশেষ সচিকণ নহে, কিন্তু দেখিলে 8