পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারিতেন, এটী জিজ্ঞাসা করিবার জন্য আমার নিকট আসিয়াছ কি জন্য ? শরতের মাতা। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদিগের সবসম্মত মত জানিতে চাহি না, সে জন্য আপনার কাছে আসি নাই। আপনার মত, আপনার পরামর্শ, জানিতে ইচ্ছা করি, এই জন্য আসিয়াছি। শ্রবণ করন, আমি নিবেদন করিতেছি। তখন শরতের মাতা আপন দঃখের ইতিহাস আদ্যোপান্ত গরে দেবের নিকট বিস্তারিত করিয়া বলিলেন। বিন্দর মাতার কথা, বিন্দ ও হেমের কথা, হতভাগিনী সাধার কথা, তাহাদিগের কলিকাতায় আসিবার কথা, শরৎ ও সাধার পবিত্র প্রণয়ের কথা, লোকের লজাবহ অপযশের কথা, নিরাশ্রয় নিন্দোষ সাধার অখ্যাতি, অবমাননা, অসহ্য যাতনা ও শরীরের দরবস্থার কথা, চিরদঃখিনী কালীতারার কথা, হতভাগিনী উমার কথা সমস্ত সবিস্তারে বর্ণন করিলেন। সে কথা শুনিতে শুনিতে গরদেবের চক্ষ দিয়া অজস্র জল পড়িতে লাগিল, কাশীর ব্রহ্মচারীর নয়ন অগ্নিবৎ জবলিতে লাগিল, শরীর কাঁপিতে লাগিল। শেষে শরতের মাতা বলিলেন,-গরদেব, আমাদিগের চারিদিকেই দন্দেশা উপস্থিত, এ ঘোর বিপদে পিতার নিকট পরামর্শ গ্রহণ করিতে আসিলাম। লোকের কথায় মত্ত হইয়া উমার মা উমাকে বড়মানুষের ঘরে বিবাহ দিলেন, বাল্যকালেই সেই উমা যাতনায় প্রাণত্যাগ করিল। গ্রামের ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের কথা শুনিয়া, আপনার সৎপরামর্শ তখন তুচ্ছ করিয়া, আমি বড় কুলে কালীর বিবাহ দিলাম, ভগবান সে পাপের শাস্তি আমাকে দিয়াছেন। বাছা কালীর মুখের দিকে চাহিলে আমার বকে ফেটে যায়। সংসারে আমার আর কেহ নাই, জগতে আমার আর সুখ নাই; বাছা শরৎ ভিন্ন আমার অবলম্ববন নাই; আর বাছা বিন্দ ও সন্ধা আছে। তারাও আমার পেটের ছেলের মত, তাদের অভাগিনী মা মরিবার সময় তাদের আমার হাতে সপিয়া দিয়াছিল। গরদেব । আপনিই এখন ইহাদের বন্ধ, আপনিই ইহাদের অভিভাবক, আপনি এগুলির ভার লউন, যাহা ভাল বিবেচনা করেন করন ; এ অনাথা বিধবা আর এ ভার বহনে অক্ষম । এই কথাগুলি বলিয়া শরতের মাতা ঝর ঝর করিয়া অশ্রদ্বষণ করিতে লাগিলেন, পিতৃতুল্য গরের নিকট দুঃখের কথা বলায় যেন সে ব্যথিত হৃদয় একটা শান্ত হইল। শরতের মাতার কথা শুনিতে শুনিতে বন্ধের চক্ষ অনেকবার আশ্রতে পাণ হইয়াছিল, এখন নিরাশ্রয় বিধবাকে রোদন করিতে দেখিয়া তাঁহারও নয়ন হইতে দুই শীর্ণ গণ্ডস্থল বহিয়া টস টস করিয়া জল পড়িতে লাগিল। বদ্ধ ক্ষণেক আত্মসম্বরণ করিতে পারলেন না। ক্ষণেক পর বলিলেন,— মা, তোমার কথাগুলি শুনিয়া আমার মন বড় বিচলিত হইয়াছে। এখন কি জিজ্ঞাস্য আছে বল । শরতের মাতা। পিতা, বিধবাবিবাহ মহাপাপ কি না আমার এইমাত্র জিজ্ঞাস্য। গরদেব। বাছা, জগদীশ্বরই পাপ পণ্য ঠিক নিরাপণ করিতে পারেন; আমরা শাস্ত্রের কথা কিছু কিছু বলিতে পারি। শরতের মাতা। তাহাই বলন। আমাদের সনাতন হিন্দুশাস্ত্রে কি এ কাজ রহিত ? লোকনিন্দার কথা আমাকে বলিবেন না ; আমার অধিক দিন বাঁচিবার নাই, লোকনিন্দায় আমার বিশেষ ক্ষতিবৃদ্ধি নাই। গরদেব। মা, শাস্ত্র একখানি নয়, সকলগুলি এক সময়ের নয়, সকলগুলিতে এক কথা লিখা নাই। যে সময়ে এই হিন্দজাতির যেরপে আচার ব্যবহার ছিল, তাহারই সার ভাগ, উৎকৃষ্ট ভাগটকুই আমাদের শাস্ত্র। শরতের মাতা। পিতা, আমি সন্ত্রীলোক, আমি ও সমস্ত কথা ঠিক বুঝিতে পারি না। কিন্তু আমাদের সনাতন শাস্ত্রে বিধবাবিবাহ নিষিদ্ধ কি না, এই কথাটকু বলন। গরদেব। এখন ও প্রথ্রা নিষিদ্ধ হইয়াছে, অতএব এখনকার শাস্ত্রে ও কাৰ্য্যটী নিষিদ্ধ বৈ কি। শরতের মাতা। পিতা, এখনকার শাস্ত্র আর পরাতন শাস্ত্র আমি জানি না, আমি মাখ 8ミや