পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী নিকট আসিল, একখানা চিঠি বিন্দর হস্তে দিল। চিঠিখানি বিন্দর জ্যেঠাইমা লিখিয়াছেন, তাহাতে এই লিখা আছে,— “মা বিন্দ, তোমার জ্যেঠামহাশয়ের সন্তানাদি না থাকায় আবার বিবাহ করিবেন স্থির করিয়াছেন, এ বিবাহে আমারও মত আছে। মিত্র গোষ্ঠীর গোপবালা নামে একটী মেয়ে আছে, তাহাকেই তোমার জ্যেঠামহাশয় পছন্দ করিয়াছেন, মেয়েটী শুনিয়াছি বড় নম্ন। মেয়ের মা তোমারই আশ্রিত লোক, এবং তোমার কথা শানেন। তাঁহার সম্মতি যাহাতে হয়, সে বিষয়ে যত্ন করিয়া তোমার জ্যেঠাইমার কথা রক্ষা কর । পুত্র বা আ ক ক ম আমার আল হল তোমার আর মাকে স্থান দিও।” বুদ্ধিমতী বিন্দ পত্রের প্রথম ভাগ পড়িয়া হাসিয়া গড়াইয়া পড়িলেন, শেষ ছত্ৰটী পড়িয়া একবিন্দ আশ্রবষণ করিলেন। তাঁহার জ্যেঠাইমার এ বিবাহে কিরাপ মত আছে শেষ ছত্রে বুঝিতে পারিলেন। পত্রের উত্তর লিখিলেন,— “জ্যেঠাইমা—জ্যেঠামহাশয় জ্ঞান হারাইয়াছেন, তুমিও কি জ্ঞান হারাইলে ? কালীতারার অবস্থা চক্ষে দেখিয়াও গ্রামের আর একটী মেয়েকে জলে ভাসাইবে ? জ্যেঠাইমা, আমি ছেলেমানুষ, তোমাকে কি পরামর্শ দিব ? তুমি বুঝিয়া দেখ, জ্যেঠমহাশয় কি এ বিবাহে সখী হবেন ? তুমি যেরপে শরীর মাটি করিয়া জ্যেঠামহাশয়ের শুশ্রুষা করিতেছ, অলপবয়স্কা সত্ৰী কি জ্যেঠামহাশয়ের সেইরপ পরিচযৰ্যা করিবে ? যদি সে সত্ৰী ক্লেশদায়িনী হয়, জ্যেঠামহাশয়ের এই শেষাবস্থার ক্লেশ তোমাকে চক্ষে দেখিতে হইবে । জ্যেঠাইমা এ কাজটি হইতে দিও না, এ কাজে আমি সাহায্য করিতে পারিব না।” বিন্দ চিঠিখানি একবার দুইবার চে’চিয়ে পড়িলেন। চিঠিখানি মনোমত হইয়াছে। ঘটকীর হাতে দিয়া পাঠাইয়া দিলেন । ঘটকী বাড়ী হইতে চলিয়া গেল। তাহার অপেক্ষণ পরে আর একজন বেড়ার পাশ হইতে আস্তে আস্তে সরিয়া গেল। গোপবালা দাঁড়াইয়া দুইখানি চিঠি আদ্যোপান্ত শুনিয়াছে, মনে মনে বলিল, “আমি বড়ঘরের বেী হব, তাহাতে সুশীলার মা বাধা দিতেছে। বাধা খাটিবে না।” সন্ধ্যার সময় সন্ধা বিন্দর সঙ্গে দেখা করিতে আসিলেন। সন্ধাকে দেখিয়াই বিন্দ হাসিয়া বলিলেন,—বলি ওলো সন্ধা, আমাদের নতেন জ্যেঠাইমাকে দেখেছিস ? সন্ধা। না দিদি, নতন জ্যেঠাইমা আবার কে ? বিন্দর। ওলো তা জানিসনি, তবে জানিস কি ? ঐ দেখ বাগানে সশীলার সঙ্গে খেলা করিতেছে। সন্ধা। সে কি দিদি ? ও যে গোপী। ওর সঙ্গে জ্যেঠাইমা সম্পক পাতালে নাকি ? বিন্দর। ওলো আমি পাতাব কেন ? সম্পক পাতাবে, পাতাবে—যার পাতাবার সে পাতাবে! সন্ধা। এ তোমার কি ঠাট্টা দিদি, আমি ত কিছুই বুঝিতে পারি না । তুমি যে হেসে গড়িয়ে গেলে দিদি। সত্য সত্য বল না দিদি, হয়েছে কি ? বিন্দর। না, কিছু হয়নি বোন, বোধ হয়, মাসখানেকের মধ্যেই হবে। সধা। কি হবে, কি হবে ? বিন্দর। ঐ যে বলিলাম, ঐ গোপী আমাদের নতন জ্যেঠাইমা হবে, জ্যেঠামশাই যে ওকে বিয়ে করবার জন্য ঘটকী পাঠিয়েছেন! ও গোপী, গোপী, বলি জ্যেঠামশাইকে বিয়ে করবি লো ? গোপী। বড়মা, ডাকছ ? বিন্দ। হাঁ ডাকছি, একবার কোলে আয়। বিন্দ বালিকাকে ক্রোড়ে করিয়া, সেই নম্নমুখী সৌন্দৰ্য্যপণে ফটফটে মেয়েটির ঠোঁটে চুমো খেয়ে, তাহার উত্তজবল কৃষ্ণ চক্ষ দটীতে চুমো খেয়ে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বলি জ্যেঠামশাইকে গোপী। হাঁ বড়মা, দেখেছি বৈ কি। বিন্দর। কবে দেখলি লো ? গোপী। ঐ যে কাল বিকালে আমি পক্ষুেরধারে খেলা করিতে গিয়াছিলাম; তারিণীবাবুও গিয়াছিলেন। 8○。